কলকাতা, 6 মার্চ : ‘‘আই অ্যাম দ্য ম্যান অফ দ্য চিফ মিনিস্টার ৷’’ যিনি এই কথা হুমকির স্বরে বলেছিলেন, সেই সোনালি গুহই তৃণমূল কংগ্রেসে ব্রাত্য হয়ে গেলেন ৷ সেই 2001 সাল থেকে যিনি বিধানসভায় তৃণমূলের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাঁকে এবার আর টিকিট দেননি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ যিনি দলনেত্রীর দুঃসময়ের সঙ্গী ছিলেন, দলনেত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা যাঁকে দোর্দণ্ডপ্রতাপ করে তুলেছিল, সেই সোনালি গুহই টিকিট না পেয়ে প্রকাশ্যে কান্নাকাটিও করেছেন ৷
2001 সালে তিনি বিধায়ক হয়েছিলেন দক্ষিণ 24 পরগনার সাতগাছিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে ৷ যে আসন তৈরি হওয়ার পর থেকে ছিল জ্যোতি বসুর গড় ৷ 1977 থেকে 1996, ওই আসন থেকেই জিতে বিধায়ক হন জ্যোতিবাবু ৷ 2000 সালে তিনি রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর ওই কেন্দ্রে তাঁর পোলিং এজেন্ট গোকুল বৈরাগী সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন ৷ কিন্তু সোনালির বিরুদ্ধে জিততে পারেননি ৷
ফলে তৃণমূল যখন রাজ্যের বিরোধী দল ৷ সিপিএমের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে রাজনীতি করছে, তখন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী হিসেবেই দেখা যেত সোনালি গুহকে ৷ যদিও দু’জনের সম্পর্ক আরও আগের ৷ আর সময় যত এগিয়েছে, ততই মমতার আরও কাছের হয়েছেন সোনালি ৷ বিশেষ করে 2006 সালে যখন তৃণমূল বাম-ঝড়ে উড়ে গিয়েছিল, সেবারও সোনালি জিতেছিলেন ৷
তার পর 2011 সালে সাতগাছিয়া থেকে জয়ের হ্যাটট্রিক করেন সোনালি ৷ তার পুরস্কারও দেয় দল ৷ বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার করা হয় তাঁকে ৷ 2016 সালে তাঁকে স্বপদে বহাল রাখা হয় ৷ কিন্তু এবার আর তাঁকে প্রার্থী করা হল না ৷ স্বাভাবিক ভাবেই তাই তাঁর চোখে জল এসেছে ৷ স্পষ্ট করে বলেছেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে এটা করতে পারেন, তা তাঁর বিশ্বাস হচ্ছে না ৷
আর এই আঘাত থেকে তিনি এবার তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মুহূর্তে প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির পথে পা বাড়িয়েছেন ৷ আজ, শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর মুকুল রায়ের সঙ্গে দেখা করার কথা ৷ সূত্রের খবর, তিনি বিজেপির কাছে প্রার্থীপদ চাননি ৷ শুধু জায়গা চেয়েছেন ৷ যাতে তিনি সম্মানের সঙ্গে রাজনীতি করতে পারেন ৷
আরও পড়ুন : পদ্মে সোনালি ?
তিনি বিজেপিতে যাবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয় ৷ কিন্তু তাঁকে যদি নেওয়া হয়, তাহলে কি বিজেপির খুব একটা লাভ হবে ? আপাতত এই প্রশ্নই তুলছে রাজনৈতিক মহল ৷ কারণ, বরাবর বিতর্কিত চরিত্র হিসেবে পরিচিত সোনালি গুহ ৷ 2006 সালে বিধানসভার ভিতরে ভাঙচুর হয় ৷ সেই ভাঙচুরেও তিনি ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে ৷ তাছাড়া বিরোধী দলের বিধায়ক থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে থানায় ঢুকে তাণ্ডব করার অভিযোগ ওঠে ৷ এমনকী, ডেপুটি স্পিকার হয়ে যাওয়ার পরও হাওড়ার হোটেল ঢুকে ভাঙচুর করার অভিযোগ ওঠে ৷ সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘আই অ্যাম দ্য ম্যান অফ দ্য চিফ মিনিস্টার ৷ আই এম দ্য গর্ভনমেন্ট ৷’’ ফলে বিজেপিতে যাওয়ার পরও যে তিনি বিতর্কে জড়াবেন না, সেই প্রশ্নই থেকে যাচ্ছে ৷