কলকাতা, 24 ফেব্রুয়ারি: আসন্ন ব্রিগেড সমাবেশ উপলক্ষে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস যৌথ আবেদন জানালেন রাজ্যবাসীর প্রতি । যদিও সেই আবেদনে নেই আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট । তাহলে কি আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের সমঝোতা হচ্ছে না? প্রশ্ন ঘুরছে দুই দলের অন্দরেই ।
কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিরোধী এই যৌথ আবেদনে সবকটি বাম শরিক দল এবং প্রদেশ কংগ্রেসের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে রাজ্যবাসীর প্রতি । বলা হয়েছে, লড়াই চলছে সমগ্র দেশজুড়ে । কৃষক, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, যেমন লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন, আবার ছাত্র, যুব, মহিলা সব অংশের শিক্ষক সবাই লড়াইয়ের ময়দানে । কেন্দ্রে মোদির নেতৃত্বে আরএসএস বিজেপি সরকারের কৃষি আইন, শ্রম কোড সংস্কার সবই কর্পোরেটের স্বার্থে। করোনা মহামারীর সময়কালে দেশের 15 কোটি মানুষের কাজ চলে গিয়েছে । দারিদ্র, অভাব, বৈষম্য বুভুক্ষা সমস্ত কিছু বৃদ্ধি পেয়েছে । অথচ শুধুমাত্র বিগত 11 মাসে দেশের বৃহৎ কর্পোরেট গোষ্ঠীর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে 13 লক্ষ কোটি টাকা । পেট্রল ডিজেল-সহ সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। 26 নভেম্বর 2020 কেন্দ্রীয় সরকারের কর্পোরেটের স্বার্থবাহী জনবিরোধী নীতি গুলির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় সাধারণ ধর্মঘট তীব্র অসন্তোষের অভিব্যাক্তি বলে যৌথ আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে ।
যৌথ আবেদনে আরও বলা হয়েছে, দিল্লিতে ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন প্রমাণ করেছে ভয়ঙ্কর কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকদের সংগ্রামের প্রতি রয়েছে দেশবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন । কৃষকদের শান্তিপূর্ণ সংগ্রামকে কালিমালিপ্ত করার লক্ষ্যে মোদি সরকার এবং আরএসএস বিজেপির ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র এই সরকারের প্রকৃত চরিত্র পরিষ্কার করে দিয়েছে বলে যৌথ আবেদনে জানানো হয়েছে ।
রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে কটাক্ষ করে যৌথ আবেদনে বাম-কংগ্রেস বলেছে, গত 10 বছর ধরে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকার চলছে । শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নারী নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র রক্ষা, জীবন-জীবিকা, শ্রমিক কৃষক-সহ সাধারণ মানুষের অধিকার রক্ষা আইন-শৃঙ্খলার সমস্ত ক্ষেত্রে এই সরকার চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে । কৃষি সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যের শিল্পায়ন স্তব্ধ। নতুন শিল্প গড়ে ওঠেনি। রাজ্য সরকারের নিয়োগ বন্ধ। দুর্নীতি, তোলাবাজি, জোরজবরদস্তি রাজ্য সরকার ও তৃণমূল দলটার বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে । ক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিবাদ দমিয়ে দিতে পুলিশকে দিয়ে বর্বর আক্রমণ চালানো হয়েছে। 31 বছরের যুবক মইদুল ইসলাম মিদ্দার অপরাধ কী, যার জন্য পুলিশের আক্রমণে অমূল্য প্রাণ দিতে হল ? রাজ্যবাসীর কাছে প্রশ্ন বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের । বলা হয়, রাজ্য সরকারের কাছে সুষ্ঠু শিক্ষাব্যবস্থা ও কাজের দাবি করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী উপহার দিলেন জলকামান ,কাঁদানে গ্যাস, লাঠি । এই ধরনের বর্বরতা নৃশংসতা বিগত 10 বছর ধরে এই রাজ্যে নিয়মিত ঘটছে ।
আরও পড়ুন: বামফ্রন্টের ‘টুম্পা’ কি পারবে বিমুখ ভোটারদের মন জয় করতে ?
একযোগে বিজেপি ও তৃণমূলকে কটাক্ষ করে বাম-কংগ্রেসের যৌথ আবেদনে লেখা হয়েছে, দেশের সংবিধানের মর্মবস্তু আজ আক্রান্ত । ভারতের বহুত্ববাদ, ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর আক্রমণ নামিয়ে এনেছে বিজেপি সরকার। সংখ্যালঘুদের অধিকার গুলি ক্রমান্বয়ে খর্ব হয়েছে । সাম্প্রদায়িকতার বিষ সমাজের সর্বক্ষেত্রে প্রসারিত । শিক্ষা, শিল্প , সাহিত্য ,ইতিহাস সব ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি উৎসাহিত হচ্ছে। ভারতের ভাষ্য সম্পূর্ণ পালটে দেওয়ার কৌশলী চেষ্টা চলছে। রাজ্যের তৃণমূল সরকার কৌশলে সাম্প্রদায়িক কার্ড ব্যবহার করছে । বিজেপি ও তৃণমূলের বোঝাপড়ার রাজনীতি এই রাজ্যে দ্বিদলীয় রাজনীতির কাহিনীকে শক্তিশালী করতে চাইছে। সমগ্র দেশের সঙ্গে বাংলার বুকে সমগ্র অংশের জনগণের সংগ্রাম গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন । নির্বাচনে রাজ্য ও জনগণের স্বার্থ বিরোধী বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করার ঐতিহাসিক কর্তব্য পালনের জন্য রাজ্যবাসীর কাছে আবেদন জানানো হয়েছে । সমস্ত সংগ্রাম গুলিকে আরও তীব্র করে এবং আগামী বিধানসভা নির্বাচনে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির বিকল্প গড়ে তোলার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হতে আগামী 28 ফেব্রুয়ারির ব্রিগেড ময়দানের ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে চলেছে । এই সমাবেশে এক নতুন নজির সৃষ্টি হবে । তাই সকলকে ব্রিগেড সমাবেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, সিপিআই রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, আরএসপির রাজ্য সম্পাদক বিশ্বনাথ চৌধুরী এবং আই এস এফের সভাপতি শিমুল সোরেন।