কলকাতা, 22 অক্টোবর : উৎসবের মরশুমে কোরোনা যাতে বিপর্যয় ডেকে আনতে না পারে, তার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন এবার সাধারণ মানুষকে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য অনুরোধ করল । শুধুমাত্র তাই নয়, কোরোনায় সংক্রমণের হার যাতে বেড়ে যেতে না পারে, তার জন্য ভার্চুয়াল মোডে এবছর মা দুর্গাকে দেখার জন্যও সাধারণ মানুষের কাছে অনুরোধ রাখল কমিশন । সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনের কাছে ইতিমধ্যেই বার বার চিঠি পাঠিয়ে দুর্গাপুজোয় মণ্ডপগুলিতে জনসমাগম রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে । এই উদ্দেশ্যে চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠন অনুরোধ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে ।
এই পরিস্থিতির মধ্যে একটি জনস্বার্থ মামলার রায়ে রাজ্যের পুজোমণ্ডপগুলিতে 'নো এন্ট্রি' ঘোষণার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট । এই নির্দেশ পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়েছিল বিভিন্ন দুর্গাপুজো কমিটিকে নিয়ে গঠিত ফোরাম ফর দুর্গোৎসব । তবে, পুজোমণ্ডপগুলিতে 'নো এন্ট্রি' ঘোষণার নির্দেশ বহাল রেখেছে কলকাতা হাইকোর্ট । চিকিৎসকদের বিভিন্ন সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, মহালয়া এবং বিশ্বকর্মা পুজোর পর থেকে এ রাজ্যে সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে, প্রতিদিন যার প্রমাণ মিলছে কোরোনা সংক্রান্ত রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিনে । এই বুলেটিন অনুযায়ী 24 ঘণ্টার নিরিখে প্রতিদিন এখন রেকর্ড সংখ্যক আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে রাজ্যে ।
24 ঘণ্টার নিরিখে এখন প্রতিদিন 4 হাজারের বেশি আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে । স্বাস্থ্য দপ্তরের বুলেটিন অনুযায়ী, 24 ঘণ্টার নিরিখে 19 অক্টোবর 3 হাজার 992 জন আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে । মৃত্যু হয়েছে 63 জনের । 20 অক্টোবর আক্রান্ত 4 হাজার 29 জন, মৃতের সংখ্যা 61 ৷ বুধবার 4 হাজার 69 জন আক্রান্ত, মৃতের সংখ্যা 64 ৷ 21 অক্টোবর পর্যন্ত রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 3 লাখ 33 হাজার 126 জন ৷ মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে 6 হাজার 244 ৷
অন্যদিকে প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব ৷ দুর্গাপুজোর এই মরশুমে যাতে কোনও রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফেরানো না হয়, তা নিশ্চিত করতে ইতিমধ্যেই বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য কমিশন । কোরোনা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য রাজ্যজুড়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে বেড সংখ্যা বৃদ্ধির কথাও এই কমিশন বলেছে । ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) জানিয়েছে, উৎসবের মরশুমে রাজ্যজুড়ে 500 বেড বাড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে । উৎসবের এই সময়ে কোনও হাসপাতাল থেকে কোনও রোগীকে ফেরানো যাবে না । কোনও হাসপাতালে বেড না থাকলে, রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে অন্য কোনও হাসপাতালে বেডের জন্য ব্যবস্থা করে দিতে হবে ।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ মানুষদের উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "উৎসবের এই সময়ে একজন রোগীকেও যাতে হাসপাতাল থেকে ফেরানো না হয়, তার জন্য বলা হয়েছে ৷ কঠোরভাবে কোরোনা বিধি (স্বাস্থ্য বিধি) মেনে পুজোয় অংশগ্রহণ করুন । একটা বছর মাকে না হয় ভার্চুয়াল মোডে দেখলাম আমরা ।" তবে, যেভাবে সংক্রমণের হার বেড়ে চলেছে, তার জেরে এই স্বাস্থ্য কমিশনও আশঙ্কায় রয়েছে । এই কমিশনেরও আশঙ্কা, উৎসবের সময় বেড়ে যেতে পারে আক্রান্তের সংখ্যা । সম্ভাব্য এই বিপর্যয়ের জেরে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের প্রস্তুত থাকতে অনুরোধ করেছে কমিশন । পাশাপাশি, ইতিমধ্যেই আক্রান্ত যে সব মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছেন, তাঁদেরকে স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্যেও কমিশন অনুরোধ জানিয়েছে । এরই মধ্যে পুজোর আগেই বহু মানুষকে বাইরে বের হতে দেখা গিয়েছে ।