কলকাতা, 3 ফেব্রুয়ারি: রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলি চালানোর জন্য পর্যাপ্ত টাকা নেই। তাই, রাজ্যের সীমান্ত এলাকার সমস্ত ট্রাক টার্মিনাসগুলি পরিচালনার দায়িত্ব নেবে রাজ্য সরকার (Truck Terminus Responsibility Take Govt)। রাজ্যের পরিবহন দফতর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করবে। যাতে রাজস্ব আদায় বাড়ে তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রশাসনিক বৈঠকে এই ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
করোনা পরিস্থিতিতে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপার এবং বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রী ও অফিসারদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে সীমান্তবর্তী এলাকার ট্রাক টার্মিনাস নিয়ে কড়া সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেন তিনি। করোনা আবহে রাজ্যের কোষাগারের হাল ভাল নয়। এই অবস্থায় আয় বাড়াতে সীমান্ত অঞ্চলে থাকা ট্রাক টার্মিনাসগুলিকে নিজের হাতে নিচ্ছে রাজ্য সরকার। মমতার অভিযোগ, সীমান্তবর্তী এলাকার ট্রাক টার্মিনাসে দালাল চক্র চলছে। ফলে, এর থেকে কোনও রাজস্ব সরকারি কোষাগারে আসছে না। আর সেই কারণেই বিভিন্ন পৌরসভার হাতে থাকা ট্রাক টার্মিনাসের এনওসি দ্রুত চাইল রাজ্য সরকার। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী 7 ফেব্রুয়ারি এই ট্রাক টার্মিনাসগুলির দায়িত্ব পরিবহন দফতরের হাতে তুলে দেবে রাজ্য।
আরও পড়ুন: দেউচা-পাঁচামিতে দেশের সেরা পুনর্বাসন প্যাকেজ : মুখ্যসচিব
মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ট্রাক টার্মিনাসে কেউ কেউ টাকা তুলছেন, এতে ব্যক্তির পকেট ভরলেও সরকারের কোষাগারে কোনও সুবিধা হচ্ছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষায়, "এসব আর চলবে না।" এদিনের পর্যালোচনা বৈঠকে তিনি বলেন, "পেট্রাপোল, হিলি, চ্যাংড়াবান্ধা, আলিপুরদুয়ার-ভুটান সীমান্ত, জয়গাঁ, মালদা, ঘোজাডাঙা এগুলি পরিবহণ দফতরকে আমরা দিচ্ছি। জেলাশাসক, পুলিশ সুপাররা জেনে রাখুন কেউ কেউ স্থানীয় এলাকায় পয়সা তুলে নিচ্ছে। তার মধ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দল এবং কিছু অফিসারও রয়েছে। এটা হবে না। টাকাগুলি সরকারি কোষাগারে আসবে। তাই, সীমান্তবর্তী জায়গাগুলিতে পুরোটাই পরিবহণ দফতরকে দেওয়া হচ্ছে। প্রাইভেট-টাইভেট হবে না। প্রাইভেটের নাম করে করে খাওয়া হচ্ছে। টাকা গর্ভমেন্টের রেভিনিউ হচ্ছে না।" এরপর এপ্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী জানান, সম্প্রতি 7টি জেলা নিয়ে একটি বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। সেখানে পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকরাও ছিলেন। মন্ত্রীদের সঙ্গেও বৈঠক করা হয়েছে। সীমান্তের এই সমস্যা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বনগাঁ পৌরসভার দুটি ট্রাক টার্মিনাস রয়েছে। এছাড়াও তিন-চারটি বেসরকারি ট্রাক টার্মিনাস রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে রেভিনিউ সরকার কিছুই পাচ্ছে না। কিছুটা পৌরসভার খাতে যাচ্ছে। আর বেশিরভাগই ওখানে টাকা বেহাত হয়ে যাচ্ছে। তাই এবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজ্যপাল ফোন করেন ? প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন মমতার
মমতার স্পষ্ট বার্তা, বিভিন্ন ট্রাক টার্মিনাসে দালালচক্রের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। দ্রুত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষ যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, সেখানে কড়া নজর দিতে হবে। যা আয় হবে তা ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে। সেই টাকা রাজ্য সরকার নানা প্রকল্পের কাজে লাগাবে। এদিনের বৈঠকে শুধু সীমান্ত নয়, বিভিন্ন ব্যবসায়িক-বন্দর এলাকার দুর্নীতি নিয়েও মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তাজপুর বন্দর এলাকায় তোলাবাজি-দুর্নীতি নিয়েও সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, সেখানে একটি আলাদা পুলিশ স্টেশন তৈরি করা হবে। বন্দর এলাকায় তোলাবাজির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সেই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, তাজপুরে তোলাবাজি রুখতে প্রয়োজনে আলাদা থানা তৈরি করা হবে। যাতে স্বচ্ছ এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন থাকে। এদিনের বৈঠক থেকে সেই বার্তাই আরও একবার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।