কলকাতা, 4 ফেব্রুয়ারি: পড়ুয়ারা বসেছিল অবস্থান-বিক্ষোভেই । সেই সময়, ভোরে তাদের নজর এড়িয়ে অন্য গেট দিয়ে বেরিয়ে যান প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য । তবে বেলা 11টায় ফিরেও আসেন ।
হিন্দু হস্টেল নিয়ে মোট চারদফা দাবি জানিয়ে 21 জানুয়ারি থেকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অফ স্টুডেন্টস কর্নারের ভিতরে অবস্থান-বিক্ষোভে বসেছিল হস্টেলের আবাসিকরা ৷ তাদের প্রথম দাবি অনুযায়ী হিন্দু হস্টেলের তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তারা ডিন অফ স্টুডেন্টস কর্ণারকেই হিন্দু হস্টেলের তিন, চার ও পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করবে। যদিও তাদের আন্দোলনের জেরে ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণ কুমার মাইতি তাঁর অফিসই পরিবর্তন করে নেন । তারপরও চলতে থাকে আবাসিকদের অবস্থান-বিক্ষোভ । তাদের দ্বিতীয় দাবি ছিল, হিন্দু হস্টেলের মেস স্টাফদের সংখ্যা বাড়াতে হবে । কারণ, বর্তমান যারা মেস স্টাফ রয়েছে তারা চাইলেও পর্যাপ্ত পরিষেবা দিতে পারছে না ৷ এর মূল কারণ হল পড়ুয়াদের অনুপাতে কর্মীদের সংখ্যা অনেক কম । অথচ মেস স্টাফদের সংখ্যা বাড়ানোর পরিবর্তে 6 মেস স্টাফ ও 2 রাঁধুনিকে বরখাস্ত করে দেওয়া হয় বলে জানায় আন্দোলনকারী আবাসিকরা । তাদের অভিযোগ, গত চারদিন ধরে হস্টেলে রান্না হচ্ছে না । পুরানো স্টাফ, যারা 25-30 বছর ধরে হিন্দু হস্টেলে কাজ করছে তাদের আবার পুনর্বহালের দাবিও তুলেছে পড়ুয়ারা । কিন্তু, তাদের দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষ নাকি কোনও পদক্ষেপ করেনি । তাই গতকাল দুপুর দু'টো নাগাদ উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াকে ঘেরাও করে পড়ুয়ারা ৷ তাঁর অফিসে ঢোকার দুটি গেটের বাইরেই অবস্থানে বসে তারা ৷ কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে সমাধানের কোনও আশ্বাস না দিলে এই বিক্ষোভ চলবে বলেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ৷
উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার ঘরে রাত কাটান রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার, ডিন অফ স্টুডেন্টস অরুণ কুমার মাইতি সহ অন্য আধিকারিক ও অধ্যাপকরা । কিন্তু, আজ ভোর সাড়ে 5টা- 6টা নাগাদ উপাচার্য ও তাঁর অফিসে থাকা অন্যরা অন্য একটি গেট দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে চলে যান । প্রায় 16 ঘণ্টা ধরে উপাচার্যের ঘরের বাইরে বসে থাকলেও উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে একবারও কথা বলতে আসেননি বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের ।
হিন্দু হস্টেলের আবাসিক আত্মজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা যে দাবিগুলি নিয়ে ঘেরাওতে বসেছিলাম, সারাদিন অবস্থান-বিক্ষোভ চালানোর পরও উপাচার্য একবারও বেরিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি । রাতে আমরা সবাই এখানেই করিডোরে শুয়েছিলাম । ভোর পাঁচটা, তখনও অন্ধকার কাটেনি, এরকম সময় উপাচার্য এবং তাঁর সঙ্গে যাঁরা ছিলেন তাঁরা বেরিয়ে যান । আমাদের ঘেরাও চলছিল, চলবে। আমরা আমাদের আন্দোলন থেকে নড়ব না ৷’’
এভাবে উপাচার্যের বেরিয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘এই সংস্কৃতিটা প্রেসিডেন্সি কর্তৃপক্ষের দীর্ঘদিনের । বস্তুত মেরুদণ্ড বলে ন্যূনতম জিনিসটা থাকার কথা কর্তৃপক্ষের আসনে থাকতে গেলে, সেটা ABCD রাজনৈতিক দলের কাছে তাঁরা বিকিয়ে দিয়েছেন ৷ এর আগেও বিভিন্ন সময়ে আমরা ঘেরাও করেছি, বিভিন্ন বিষয়ের উত্তর চেয়েছি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে । কিন্তু আমাদের দাবি অগ্রাহ্য করে পিছনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যান তাঁরা । আজও সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হল । এদের থেকে আর বেশি কিছু আমরা আশা করি না ৷’’
পরে 11টা 20 নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়া । সেই সময় স্লোগান তুলে উপাচার্যের ঘরের একটি গেটের বাইরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল আন্দোলনকারীরা । উপাচার্য লিফ্টে করে উপরে উঠে অন্য দরজা দিয়ে ঢুকে যান নিজের অফিসে । উপাচার্যের অফিসের বাইরে এখনও ঘেরাও চলছে ৷
এদিকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে ঘেরাওয়ের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় । বলেন, কথায় কথায় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলন, তাঁদের ঘেরাও করার রাজনীতি ঠিক নয়।