কলকাতা, 1 জুলাই : দূরশিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিপাকে পড়ল রাজ্যের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । UGC-র সাম্প্রতিক নির্দেশিকা অনুযায়ী, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও অনুমোদিত কলেজ না থাকায় এই নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রতিষ্ঠান।
3.26 NAAC (ন্যাশানাল অ্যাসেসমেন্ট ও অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল) রেটিং না থাকলে দূরশিক্ষা ব্যবস্থা চালাতে পারবে না কোনও বিশ্ববিদ্যালয়। 2018 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে UGC (ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন)- এর নির্দেশে বিপাকে পড়েছিল দূরশিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে রাজ্যের এমন সব ক'টি বিশ্ববিদ্যালয় । বহুদিন চেষ্টার পরে দু'বছরের জন্য কেটেছিল সেই জটিলতা । 2018- 2019 ও 2019- 2020 শিক্ষাবর্ষের জন্য দূরশিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার ছাড়পত্র পায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। যদিও, 2020-2021 শিক্ষাবর্ষে দূরশিক্ষায় আবার নতুন করে জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে । তার মধ্যেই সম্প্রতি UGC-র দূরশিক্ষা নিয়ে আরেকটি নির্দেশিকাকে ঘিরে ফাঁপড়ে পড়ল রবীন্দ্রভারতী । বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি বলেন, UGC-এর নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, দূরশিক্ষায় যে কোর্সগুলি রয়েছে তার 50 শতাংশের পরীক্ষা নিয়মিত পাঠ্যক্রমের সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে, এক সঙ্গে নিতে হবে ।
এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, "সম্প্রতি একটা নির্দেশিকা জারি করেছে UGC, যেটা করা আমাদের পক্ষে একটু অসুবিধাজনক। বলা হয়েছে, আমরা ডিস্ট্যান্স এডুকেশনে UGC অনুমোদিত যে কোর্সগুলি চালাই, সেই কোর্সগুলির মধ্যে অন্তত অর্ধেক অর্থাৎ পঞ্চাশ ভাগের পরীক্ষা নিতে হবে নিয়মিত পাঠ্যক্রমের সঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে, একসঙ্গে । এটা আমাদের পক্ষে খুব কঠিন ।''
উপাচার্যের কথায়, যাদের অনুমোদিত কলেজ আছে তাদের ক্ষেত্রে হয়তো সমস্যা এতটা জটিল নয় । কিন্তু, রবীন্দ্রভরতীর তো কোনও অনুমোদিত কলেজ নেই । তাই দূরশিক্ষার পরীক্ষা ছুটির দিনে নিতে হয় । পুজো, ক্রিসমাস বা অন্য কোনও ছুটির দিনে অথবা রবিবারে যখন কলেজে বন্ধ থাকে তখন নেওয়া হয় দূরশিক্ষার পরীক্ষা ।
রাজ্যজুড়ে প্রায় 44 টি দূরশিক্ষার স্টাডি সেন্টার রয়েছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের । প্রতি বছর প্রায় 20 হাজার পড়ুয়া ভরতি হয় দূরশিক্ষা ব্যবস্থায় । যদিও, গত বছর অনুমোদনের জটিলতার কারণে অন্য বছরের তুলনায় তিন ভাগের এক ভাগ পড়ুয়া ভরতি হয়েছিল । সব্যসাচী বাবু বলেন, ''রবীন্দ্রভারতী অনুমোদিত কলেজ যেগুলি নয়, তাঁরা আমাদের কথা শুনতে বাধ্য নয় । কাজেই এখানে কী করে একসঙ্গে পরীক্ষা নেওয়া হবে । এই বছর 2019-2020 তে যাঁরা ভরতি হচ্ছেন তাদের জন্যই এটা চালুর কথা বলা হয়েছে । সেটা আমাদের পক্ষে কঠিন ।"
পরিকাঠামোগত এই সমস্যা জানিয়ে এক বছর সময় চেয়ে UGC-কে আবেদন করার কথা বলেন সব্যসাচী বাবু। তিনি বলেন, "পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সেন্টারে যাঁরা ভরতি হচ্ছেন তাদের পরীক্ষা কলকাতায় নেব সেটা তো ভরতির পর বলতে পারি না । এটা ভরতি হওয়ার আগে UGC আমাদের জানালে পারত । ফলে এটা আমাদের জন্য খুবই জটিল । অন্তত একটা বছর সময় না দিলে কী করে হবে ?"
অন্যদিকে, গত 10 জুন দূরশিক্ষা নিয়ে বেঙ্গালুরুতে একটি বৈঠক হয়। সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরি জানান, বৈঠকে মূলত তিনটি ভাবে আলোচনা হয়েছিল । প্রথমত, যেগুলো ওপেন ইউনির্ভাসিটি যেমন নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, তাঁদের NAAC-এর অনুমোদনের জন্য কী কী শর্ত পূরণ করতে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, NAAC-এর ভিজ়িট নিয়ে আলোচনা হয়েছে । নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সেল্ফ স্টাডি রিপোর্ট তৈরি করে আপলোড করে, তারপরে NAAC-এর প্রতিনিধি দল এসে পরিদর্শন করে।
এ ছাড়াও ডুয়াল মোড বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রয়েছে, অর্থাৎ যাদের নিয়মিত ও দূরশিক্ষা দুই ব্যবস্থা আছে তাদের ক্ষেত্রে NAAC রেটিং কীভাবে হবে সেটা নিয়ে আলোচনা হয় । যদিও, ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলেই জানাচ্ছেন উপাচার্য ।
তিনি বলেন, "একটা খসড়া তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে । কারণ, রেগুলার মোডের অ্যাক্রেডিটেশন কী আলাদাভাবে হবে ? ডিস্ট্যান্সটা কী আলাদা হবে? না একসঙ্গে হবে ? সেটা এখনও স্পষ্ট নয় ।" এখন নিজেদের পরিকাঠামোগত ও গুণগত দিক থেকে উন্নত করছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় । ইউজিসির তরফে রবীন্দ্রভারতীকে দু'বছরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। 2018- 2019 ও 2019 - 2020। এবছর আমরা তো সেই অনুযায়ী ভরতি নিতে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠান সে সব নিয়ম মেনেই । স্বাভাবিকভাবেই সামনের বছর আবার নতুন অনুমোদনের প্রশ্ন আসবে । সেই কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুতি নিচ্ছি যাতে পরিকাঠামোগত ও গুণগত মান বজায় রাখা যায় ।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাড়া রাজ্যের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেগুলারের পাশাপাশি দূরশিক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে ।