কলকাতা, 15 জুন : 2019 সালের 26 জুন বিধানসভায় বিজেপির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ডাক দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) । সেই সময় বৃহত্তর জনস্বার্থে সিপিআই(এম) (CPI(M))-এর সঙ্গে যেতেও তাঁর আপত্তি ছিল না । কিন্তু সে সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছিল রাজ্য সিপিআই(এম) । বরং রাজ্যের শাসকদলের বিরুদ্ধে সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বিমান বসুদের অভিযোগ ছিল এই রাজ্যে তৃণমূল বিজেপির (BJP) দোসর ।
এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। জাতীয় ক্ষেত্রে বহু ইস্যুতে বিরোধিতার প্রশ্নে ঐক্যমত্য হলেও এ রাজ্যে পরস্পর বিরোধিতা জারি ছিল । সবচেয়ে বড় কথা ২০২১ সালের নির্বাচনেও যখন বাম ঘাসফুল শিবিরের উদ্দেশ্যে বিজেমূল বলে কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছিল ৷ নির্বাচনের পর তৃণমূলের চোখ ধাঁধানো বঙ্গজয়ের পর পরিস্থিতি বদলেছে ৷ একদিকে জাতীয় স্তরে আওয়াজ তুলছে তৃণমূল অন্য দিকে অস্তিত্য খুঁজছে সিপিআই(এম) । এই পরিসিস্থিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা সেলের ( SAIL) কার্যালয় কলকাতা থেকে সরানো নিয়ে বিরোধিতা শোনা গেল সিপিআই(এম) এবং তৃণমূল কংগ্রেসের গলায় । রাজ্যের স্বার্থবিরোধী কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত দুই দলকেই এক বিন্দুতে মিলিয়ে দিল ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পূর্বাঞ্চলে কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে তিন দশক আগে কলকাতায় যে বিভাগ (র’ মেটিরিয়ালস ডিভিশন বা আরএমডি ) তৈরি করেছিল সেইল, আচমকাই তা গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । এই প্রেক্ষিতে সরব হয়েছে তৃণমূল ও সিপিআই(এম) । তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ে সরব হয়েছেন । একইভাবে এই বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন সিটুর (CITU) রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহুও ।
তাঁদের অভিযোগ, অলাভজনক এই অছিলায় দুই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেঁচে দেওয়ার অভিসন্ধি করছে কেন্দ্র । তাঁদের মতে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে সব থেকে ক্ষতি হবে রাজ্যের দুই ইস্পাত সংস্থা বার্নপুরের ইস্কো (ISCO) এবং দুর্গাপুরের ডিএসপির (DSP)। আর এর ফলে বেসরকারিকরণের পথে এগোনোর জন্য পথ প্রশস্ত হবে ।
আরও পড়ুন : WTC Final : ওপেনিংয়ে রোহিত-গিল, দীর্ঘদিন পর ফিরছেন সামি
সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহু অভিযোগ করেন," সাম্প্রতিক কালে এ রাজ্যে বেঙ্গল কেমিক্যাল-সহ একাধিক সংস্থায় একই চেষ্টা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সমস্ত কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দিচ্ছি আমরা ।" একইভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির (INTTUC) রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "এই সিদ্ধান্ত আদতে কেন্দ্রের বাংলা এবং বাঙালি বিরোধী সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি। আসলে এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বাংলা রাষ্ট্রায়াত্ত ইস্পাত কারখানার বিরুদ্ধে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা কোনভাবেই এই সিদ্ধান্ত মেনে নেব নেব না। এর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক আন্দোলনে নামছি আমরা । "
প্রশ্ন হল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিরোধিতায় যেভাবে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এবং বিরোধীদল সিপিএমকে এক সুরে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে, ভবিষ্যতে কি এরা কাছাকাছি আসতে পারে? যদিও তেমন কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমল মুখোপাধ্যায় । তিনি জানিয়েছেন, বৃহত্তর স্বার্থে অতীতেও কোনও একটি বিশেষ ইস্যুতে দুটি পরস্পর বিরোধী দলকে একমত হতে দেখা গিয়েছে । তবে এর অর্থ এই নয় আগামীদিনে তাদের এক মঞ্চে দেখা যেতে পারে । আসলে রাজনীতি তো বাংলার মানুষের জন্যই । যেখানে বাংলার সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ হবে, সেখানে এই ধরনের পদক্ষেপ হওয়াটাই স্বাভাবিক । কিন্তু তাই বলে আগামীতে এরা একমঞ্চে আসবে এটা ভাবনা বোধহয় অতিশয় উক্তি করা হবে ।