কলকাতা, 20 মে : বিচারপতির আসনে বসলে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় (Justice Abhijit Ganguly) যতটা কড়া, আইনজীবী হিসেবে ঠিক ততটাই লড়াকু কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (TMC MP Kalyan Banerjee) ৷ কিন্তু তার পরও যে বিচারপতি ও আইনজীবীর মধ্যে ‘সুসম্পর্ক’ বজায় থাকে, আজ তার সাক্ষী থাকল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হালকা রসিকতা ও তার পালটা কল্যাণের জবাব শুক্রবার শুনানির শুরুতেই এজলাসের ‘গুমোট’ পরিস্থিতিটা কিছুটা হলেও কাটিয়ে দেয় ৷
কিন্তু সেই কথোপকথন আবার বঙ্গ রাজনীতিতে জন্ম দিল নতুন জল্পনার ৷ আর সেই জল্পনার পুরোটাই শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক অবস্থানকে ঘিরে ৷ প্রশ্ন উঠেছে, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এত আক্ষেপ কেন ঝরে পড়ল কল্যাণের গলায় ? তাহলে কি তিনি নিজের দল তৃণমূল কংগ্রেসে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ? পুরো বিষয়টিই যেহেতু এজলাসের অন্দরে হয়েছে, তাই আলাদা করে এই নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগও ছিল না কল্যাণের কাছে ৷
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেঞ্চে এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Bengal Minister Partha Chatterjee) একটি আবেদেনর শুনানি হয় ৷ সিবিআইয়ের গ্রেফতারি এড়াতে আদালতের কাছে সুরক্ষা চেয়ে ওই আবেদন করেছিলেন রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্যমন্ত্রী ৷ পার্থর হয়ে আইনজীবী ছিলেন তৃণমূলের কল্যাণ ৷
অন্যদিকে হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি সুব্রত তালুকদার ও বিচারপতি আনন্দ মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চেও একই আবেদন জানিয়েছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ সেখানে আইনজীবী অনিন্দ্য মিত্রর সঙ্গে পার্থর হয়ে সওয়াল করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই এজলাসে সওয়াল জবাব শেষ করে কল্য়াণ আসেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে ৷
সেখানে তিনি প্রবেশ করতেই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আরে কল্যাণদা, আপনি নাকি আমার নামে খুব চেঁচিয়ে অনেক কথা বলেছেন ! আমি এখানেই বসেই সব খবর পেয়েছি ।" সঙ্গে সঙ্গে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিন ।"
কিন্তু বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় হাসতে হাসতে বলেন, "আরে কী বলেন, আমি আপনাকে শ্রদ্ধা করি, সেই জন্যই বলেছি ।আমি রাজনৈতিক নেতা ও একই সঙ্গে আপনার মতো আইনজীবী লোকজনদের শ্রদ্ধা করি । আপনাদের সুখেন্দুশেখরদা, বিকাশদা (আদালতে উপস্থিত সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্রাচার্যকে উদ্দেশ্য করে বলেন) এঁদেরকে আমি আলাদা শ্রদ্ধার চোখে দেখি। আপনাদের কাছ থেকে শিখি । বারে আপনাদের দেখে কত কিছু শিখেছি ।"
এর পর বিচারপতির সংযোজন, "আপনি খুব মা কালীর ভক্ত, তাই না!" কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "শুধু মা কালী নয়, আমি শ্রীরামেরও খুব ভক্ত । দিনে দু’বেলা হনুমান চালিসাও পড়ি ।’’ তারপরই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আবেগী হয়ে পড়েন ৷ তিনি বলেন, "আমি যাদের জন্য করেছি, আজ তাদের কাছেই খারাপ হয়ে গিয়েছি আমি । যাদের জন্য করিনি, তারাই ভালো ।" তিনি আরও বলেন, "পারলে ওকালতি, রাজনীতি সব ছেড়ে-ছুড়ে দিতাম । কী করি উপায় নেই ।"
কল্যাণের এই বক্তব্য থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছে ৷ তাহলে কি তৃণমূলে তিনি কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন ? আর যদি সেটাই হয়, তাহলে কেন ? উত্তর অবশ্য জানা যায়নি ৷ হয়তো কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই এই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট করবেন কোনওদিন !