কলকাতা, 30 জুলাই : পিএসি-র (Public Accounts Committee) চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায়ের (Mukul Roy) নিয়োগ নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক চলছে ৷ উপরন্তু, শুক্রবার পিএসি-র প্রথম বৈঠকেই অনুপস্থিত থাকলেন তিনি ৷ যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) ৷ যদিও মুকুলের নেতৃত্বে বৈঠক করবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন বিজেপি বিধায়করা ৷ সেই কারণে এদিন তাঁরাও এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না ৷ অর্থাৎ, খাতায় কলমে মুকুল রায় পিএসি-র চেয়ারম্যান হলেও বিরোধীদের সমর্থন যে তিনি পাবেন না, তা প্রথম দিনেই স্পষ্ট হয়ে গেল ৷
আরও পড়ুন : মুকুল রায় ইস্যুতে এবার দেশজুড়ে সরব হবে বিজেপি, ঘোষণা শুভেন্দুর
প্রসঙ্গত, শুক্রবার পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির প্রথম বৈঠক থাকলেও দিল্লিতে থাকার কারণে তিনি যে এদিনের এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারবেন না, তা আগেই অধ্যক্ষকে জানিয়েছিলেন মুকুল ৷ তবুও এ নিয়ে প্রশ্ন থামানো যায়নি ৷ প্রশ্ন উঠছে, তবে কি নিজের বর্তমান রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে জটিলতার জেরেই পিএসি-র বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন বিধায়ক মুকুল ? লক্ষ্যণীয় হল, পিএসসি-র বৈঠকে হাজির না থাকলেও এদিন দিল্লিতে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) সঙ্গে দেখা যায় মুকুলকে ৷ অথচ তিনি বিধায়ক হয়েছেন বিজেপির টিকিটে !
বিষয়টি কলকাতাতেও প্রশ্ন তোলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ৷ কিন্তু তৃণমূল তাতে আমল দিতে নারাজ ৷ বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘অহেতুক এই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে ৷ তিনি (মুকুল রায়) যে বৈঠকে থাকবেন না, তা তো আগেই জানানো হয়েছিল, কাজেই এই বিতর্ক অর্থহীন ৷’’ উল্লেখ্য, মুকুল রায়ের অনুপস্থিতিতে এদিন পিএসি-র বৈঠকের পৌরহিত্য করেন তাপসই ৷
সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে বিশেষ কিছু আলোচনা হয়নি ৷ তবে ঠিক হয়েছে, আগামী 13 ও 27 অগাস্ট পিএসি-র পরবর্তী বৈঠক হবে ৷ সেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হতে পারে ৷ শুক্রবারের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন নির্মল ঘোষ, তাপস রায়, অশোক দেব, দেবব্রত মজুমদার, স্বর্ণকমল সাহা, অসীমা পাত্র, দেবাশিস কুমার ও শ্যামল মণ্ডল ৷
আরও পড়ুন : PAC : পিএসির চেয়ারম্যান মুকুল রায়, প্রতিবাদে ওয়াকআউট বিজেপির
রাজনৈতিক সমালোচকদের মতে, গোটা বিষয়টিই অত্যন্ত ‘ব্যতিক্রমী’ ৷ মুকুল রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিল্লি গিয়েছিলেন ৷ তিনি যে পিএসি বৈঠকে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না, তা আগেই বিধানসভা কর্তৃপক্ষকে ই-মেল মারফত জানিয়ে দিয়েছিলেন। চেয়ারম্যান না থাকলে যে বৈঠক করা যাবে না, তেমন কোনও নিয়মও নেই ৷ কিন্তু বিরোধী পক্ষের অনুপস্থিতিতে বৈঠক কখনও হয়নি ৷ তাই এই ঘটনা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী ৷
গোটা ঘটনায় মুখ খুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী ৷ তাঁর অভিযোগ, মুকুল রায়কে বিজেপির বিধায়ক বলে চালানোর চেষ্টা করছে রাজ্যের সরকার ৷ অথচ তিনি রয়েছেন তৃণমূলের সঙ্গে ৷ প্রসঙ্গত, রাজ্য় সরকারের খরচ-খরচার উপর নজর রাখাই পিএসি-র কাজ ৷ সেই কারণেই, পিএসি-র চেয়ারম্যান পদে বিরোধী দলের বিধায়ককে দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ কিন্তু, মুকুল রায় বিজেপির টিকিটে জিতলেও এখন আর গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক নেই ৷ শুভেন্দুর দাবি, এমনটা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া আর কোথাও নেই ৷ যে দল রাজ্য চালাচ্ছে, সেই দলের লোকই যদি খরচেও নজরদারি চালান, তাতে লাভ কী ? প্রশ্ন তুলেছেন শুভেন্দু ৷ এদিকে, শুক্রবারই কলকাতা হাইকোর্টে রুজু হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা ৷ সেই মামলায় পিএসি-র চেয়ারম্যান পদ থেকে মুকুল রায়ের অপসারণের দাবি তোলা হয়েছে ৷