কলকাতা, 6 জুলাই : বিধান পরিষদ প্রস্তাব পাসের দিনে বিধানসভায় সরব হয়েছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি । বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সাংবাদিক সম্মেলন করে শাসকদলের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছেন । যদিও নিজেদের সিদ্ধান্তের জোরালো সমর্থনে পাল্টা সাংবাদিক সম্মেলন করেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিধানসভার এই চাপান-উতোরের ঝাঁজ বাইরের বিরোধী শিবিরেও পড়েছে । সিপিআই(এম)-এর রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন জাতীয় স্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষ বা রাজ্যসভার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । তবে পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যস্তরে আইনসভার উচ্চকক্ষের কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই । মঙ্গলবার বিধানসভায় উচ্চকক্ষ অর্থাৎ বিধানপরিষদ গঠনের পক্ষে প্রস্তাব পাস হয়েছে । রাজ্যবাসীর স্বার্থ এবং রাজ্যের আর্থ সামাজিক প্রয়োজনীয়তাকে দূরে ঠেলে সরকার পক্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে এই প্রস্তাব পাস করিয়েছে । বর্তমানে সারাদেশে ছয়টি রাজ্যে বিধান পরিষদ বা উচ্চকক্ষ রয়েছে । বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করিয়ে দেশের অধিকাংশ রাজ্য বিধানপরিষদ তুলে দেওয়া হচ্ছে ।
সূর্যকান্ত মিশ্র বলছেন," পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতার পরে বিধান পরিষদ ছিল । কিন্তু আইনসভার কার্যপ্রণালীতে তার কার্যকরী ভূমিকা ছিল না । 1952 সাল থেকে পরবর্তী 17 বছরে পশ্চিমবঙ্গে 436টি বিল পাশ করা হয়েছে । তারমধ্যে মাত্র দুটো বিল সংশোধিত হয়েছিল বিধানপরিষদে । 1969 সালে যুক্তফ্রন্ট সরকার পশ্চিমবঙ্গের বিধান পরিষদ তুলে দেয় । 2011সালে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার গঠন করার পরে বিধানপরিষদ ফিরিয়ে নিয়ে আসতে চেয়েছিল । কিন্তু বিরোধী বামফ্রন্টের বিরোধিতায় পিছু হটে । এখন অযৌক্তিকভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে বিধানপরিষদ প্রস্তাব পাস করিয়েছে ।"
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক আরও বলেছেন , " প্যান্ডেমিকের জেরে মানুষের স্বাস্থ্য পরিষেবা যখন বিপন্ন , শিক্ষা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত , মানুষের রুটি রুজি প্রশ্নের মুখে । এই অবস্থায় জীবনধারনের সাধারণ চাহিদাকে অগ্রাধিকার দেওয়া জরুরি । উল্টে কয়েকজনকে পুনর্বাসন দিতে পিছনের দরজা দিয়ে বিধানপরিষদ গঠনের নামে সাদা হাতি পোষার ব্যবস্থা চলছে । যার বিশাল আর্থিক দায় জনগণের ঘাড়েই চাপবে । " তাই বিধানপরিষদ গঠনের বিরোধিতা এবং এই পরিকল্পনা বাতিলের জোরালো দাবি তুলেছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকের বিরোধিতার সুরে সুর মিলিয়ে রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ফের সরব হয়েছেন সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী । বলেছেন, " অগ্নিমূল্য বাজার দর । এই অবস্থায় রাজ্যসরকারের টাস্কফোর্সের দেখা নেই । বিরোধিতা, সমালোচনার ঝড় বড় হতেই টাস্ক ফোর্স ইতিউতি উকি মারছে । আলুর দাম যখন সাড়ে চার টাকা কিলো হয়েছিল তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিরোধিতা করতে রাস্তায় নেমেছিলেন । মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সমালোচনা করেছিলেন । দাম বেড়েছে খাব কী স্লোগান তুলেছিলেন সেদিনের বিরোধী নেত্রী । "
তিনি আরও বলেন, " বর্তমানে প্রত্যেকটি জিনিসের দাম বেড়েছে । লকডাউনে মানুষ কাজ হারিয়েছে । পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ায় বামপন্থীদের রাস্তায় নেমে বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছে । অথচ রাজ্য সরকার হাতগুটিয়ে বসে থাকে । প্রতিবাদের হিম্মত নেই রাজ্য সরকারের । দিল্লিতে কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্যের বর্তমান সরকার একযোগে একসুরে মানুষকে অসহায়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে ।"
আরও পড়ুন : বিধানসভায় পাস বিধান পরিষদ প্রস্তাব
এখানেই শেষ নয়। অতীতের উদাহরণ টেনে বাম আমলের অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের সেদিনের পদক্ষেপ কথা তুলেছেন সুজন চক্রবর্তী । বলেছেন, " 100কোটি টাকা ট্যাক্স ছাড়া হয়েছিল সেইসময় । কিন্তু বর্তমানে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার ট্যাক্সের টাকায় কোষাগার ভরতি করতে মত্ত । পেট্রোপণ্যের দাম বর্তমানে যেখানে থাকা উচিত তার থেকে অনেক বেশি । দাম বাড়িয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার উভয়েই লাভ করছে , তাই কুম্ভিরাশ্রু দেখা যাচ্ছে । প্রতিবাদ করছে শুধুমাত্র বামপন্থীরা । "