ইছাপুর, 9 অক্টোবর : দেড় বছর আগে করোনা সন্দেহে বিনা চিকিৎসায় মারা যান ইছাপুরের বাসিন্দা শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় ৷ ছেলের মৃত্যুতে দোষীদের কঠোর শাস্তি চান মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় ৷ ইছাপুরের সন্তানহারা দুর্গা শেষ দেখেই ছাড়বেন । এবার দ্বিতীয় বছর, যে দুর্গাপুজোয় ছেলে শুভ্রজিৎ নেই । দুর্গাপুজো খুব ভালবাসত ছেলেটা ৷ সারাদিন প্যান্ডেলেই কাটিয়ে দিত ৷ কিছু মানুষের অসহযোগিতা ও অসহমর্মিতার স্বীকার হতে হয় ইছাপুরের নেতাজিপল্লির 19 বছরের শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে ৷ অসুস্থ শুভ্রজিতের বাঁচা আর সম্ভব হয়নি ৷ কাঁদতে কাঁদতে মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায়ের এখন চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে ৷ তবে তিনি দেখেই ছাড়বেন আদালতে মামলা কতদূর গড়ায় ৷
বছর দেড়েক আগের ঘটনা ৷ ইছাপুরের বাসিন্দা দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অসুস্থ শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে হাসপাতালে ভর্তি করা যায়নি করোনা সন্দেহে ৷ চারটি হাসপাতাল তাঁকে ফিরিয়ে দেয় তাদের কাছে কোভিড পরিকাঠামো নেই জানিয়ে ৷ কার্যত বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয় শুভ্রজিতের ৷ 2020 সালের 10 জুলাই অসুস্থ শুভ্রজিৎকে প্রথমে কামারহাটি ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করেন তার মা-বাবা ৷ সেখান থেকে তাঁকে বেলঘড়িয়ার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখান থেকে আবার সাগরদত্ত মেডিক্যাল কলেজ হয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা শুভ্রজিৎকে ৷ অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে এভাবে এক হাসপাতাল থেকে আর এক হাসপাতালে ঘুরতে হয় মা-বাবাকে ৷ ছেলের চিকিৎসার দাবিতে আত্মহত্যাও হুমকি দেন শুভ্রজিতের মা ৷
অভিযোগ, বেলঘড়িয়ার নার্সিংহোমটি করোনা পরীক্ষার জন্য শুভ্রজিতের রক্তের নমুনা নিয়েছিল ৷ তারা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাদা কাগজে কোভিড পজিটিভ লিখে দেয় ৷ তাদের কাছে কোভিড পরিকাঠামো নেই বলে ভর্তি না করে ফেরত পাঠিয়ে দেয় ৷ সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ৷ 11 জুলাই ভোররাতে সেখানেই মৃত্যু হয় শুভ্রজিতের ৷ কোভিড হয়েছে সন্দেহ করে তাঁর মৃতদেহও পরিবারকে দেওয়া হয়নি তখন ৷ সেই ঘটনার তেরো মাস পরে জানতে পারা যায়, শুভ্রজিৎ করোনা আক্রান্ত ছিল না ৷
সেই সময় ছেলের মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি শুভ্রজিতের মা শ্রাবণী চট্টোপাধ্যায় ৷ তখন তিনি দেহ নিতেও অস্বীকার করেছেন ৷ ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন ৷ এনিয়ে অভিযোগও দায়ের করতে যান ৷ তাঁর অভিযোগ তখন স্বাস্থ্য দফতরে পাঠানো হয়েছিল ৷ 304এ ধারায় মামলা দায়ের হয় ৷ এটি এমন একটি ধারা যাতে করে মামলাটি লঘু হয়ে যায় ৷ সেই সময় আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের সহযোগিতায় মামলাটি কলকাতা হাইকোর্ট ওঠে ৷ দুই আইনজীবী বিনা পারিশ্রমিকে মামলা লড়েন ৷ আদালত শুভ্রজিতের দেহের ময়নাতদন্ত, ভিসেরা পরীক্ষা এবং আরটি-পিসিআর-সহ সমগ্র প্রক্রিয়াটি ভিডিয়োগ্রাফি করার নির্দেশ দেয় ৷ সেই আরটি-পিসিআর রির্পোটেই জানা যায়, শুভ্রজিতের করোনা ছিলই না ৷
ছেলের কথা বলতে গিয়ে শ্রাবণী জানান, সংসারে আর্থিক অনটন ছিল আগাগোড়াই ৷ তবে ছেলের দাবি-দাওয়া তেমন কিছু থাকত না ৷ তবে যেটা ভালবাসত তা হল, বাইরের খাবার ৷ মাঝে মধ্যেই হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার আনানোর বায়না করত সে ৷ সেই বছরই উচ্চমাধ্যমিকে ভাল ফলও করেছিল শুভ্রজিৎ ।
এই অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন শুভ্রজিতের মা ৷ স্পষ্ট জানালেন, এর শেষ দেখে ছাড়বেন তিনি ৷ তাঁর উপর হওয়া এই অন্যায় তিনি কিছুতেই বরদাস্ত করবেন না । এই ঘটনায় জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়ে তবেই তিনি শান্ত হবেন ।
দেবী দুর্গা নারীশক্তির প্রতীক । একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে মা দিন রাত ক্ষোভে ফুঁসছেন । বললেন, "যত দূর যেতে হয় যাব । শেষ দেখে ছাড়ব । ওকে ছাড়া আমাদের যেমন কষ্ট হচ্ছে, বাবা-মাকে কষ্ট পেতে দেখে ওর আত্মাও ঠিক তেমন ভাবেই কষ্ট পাচ্ছে ৷ দোষীদের শাস্তি হলেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে ।"
আরও পড়ুন : COVID POSTMORTEM : মৃত শুভ্রজিৎ করোনা আক্রান্ত ছিল না, উল্লেখ আরটি-পিসিআর রিপোর্টে