কলকাতা, ১ মার্চ : দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যে, সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত। ক্লাস নাইন থেকে ক্লাস টুয়েলভ পর্যন্ত ওয়েটিং লিস্টে থাকা সব প্রার্থীদের চাকরির দাবিতে প্রেস ক্লাবের কাছে অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছেন প্রায় ১০০ জন SSC চাকরিপ্রার্থী। গতকাল সকালে প্রথমে গান্ধি মূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভে বসেন তাঁরা। কিন্তু, সেনাবাহিনীর ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকায় তাঁদের তুলে দেয় পুলিশ। এরপর দুপুরে প্রেস ক্লাবের কাছে অবস্থানে বসেন তাঁরা। তাঁদের দাবি না মেটা পর্যন্ত অবস্থান চলবে বলে জানিয়েছেন অবস্থানকারীরা।
ক্লাস ইলেভেন ও টুয়েলভের ইংরেজি বিষয়ের ওয়েটিং লিস্টে থাকা অর্পিতা দাস বলেন, "আমরা গান্ধি মূর্তির পাদদেশে বসতে চেয়েছিলাম। পুলিশ আমাদের অনুমতি দিল না। তুলে দিলে। বলল, ওখানে ১৪৪ ধারা জারি আছে। ওখানে বসা যাবে না।"
কী দাবিতে এই অবস্থান জানতে চাওয়া হলে অর্পিতা বলেন, "আমরা প্রত্যেকেই স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েটিং প্রার্থী। পরীক্ষা নেওয়ার আগে স্কুল সার্ভিস কমিশন একটি গেজেট বার করেছিল। যেখানে ওনারা বলেছিলেন, এই গেজেট অনুযায়ীই পরীক্ষা হবে এবং নিয়োগ হবে। কিন্তু, রেজাল্ট বের হওয়ার পর আমরা দেখেছি ওই গেজেটে উল্লিখিত প্রত্যেকটা নিয়ম লঙ্ঘন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। তার মধ্যে আছে ১:১:৪ রেশিও মেনে ওয়েটিং লিস্ট তৈরি করা। অর্থাৎ ১০০টা শূন্যপদ থাকলে সেখানে ওয়েটিং লিস্টে থাকবেন ৪০ জন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ১০০টা শূন্যপদের জন্য ওয়েটিংয়ে রাখা হয়েছে ৫০০, ৬০০, ৭০০ জনকে। আমরা এটার প্রতিবাদ করছি। দ্বিতীয়ত, আমাদের ৭ বছর ধরে কোনও নিয়োগ হয়নি। তারপরও স্কুল সার্ভিস কমিশন দাবি করছে, তাদের হাতে সিট নেই। আর যে সিটগুলি ফাঁকা রয়েছে সেগুলির ক্ষেত্রে ওনারা বলছেন যোগ্য প্রার্থী নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এই সমস্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে আজ রাস্তায় এসে বসেছি। আমরা এতজন যোগ্য প্রার্থী এখানে রাস্তায় বসে আছি তাহলে কমিশন কী করে বলে দিচ্ছে যে যোগ্য প্রার্থী খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বা ভ্যাকেন্সি নেই? আমরা ২৩টা জেলাতেই বিভিন্ন DI-র অফিসে ডেপুটেশন দিয়েছি। সেখানকার DI-রা বলেছেন, তাঁদের হাতে যা ভ্যাকেন্সির রিপোর্ট জমা পড়েছে তা তাঁরা উপরমহলে পাঠিয়ে দিয়েছি। আমাদের যতদিন না দাবি আদায় হবে আমরা এখানেই থাকব।"
অবস্থানকারীদের সমর্থন জানাতে গতকাল সেখানে যান BJP-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, "SSC পরীক্ষায় পাশ করেছেন এই রকম প্রায় ৬-৭ হাজার প্রার্থী আছেন। তাঁরা মৌখিকেও পাশ করেছেন। কিন্তু, রাজ্য সরকার দাবি করছে, যোগ্য শিক্ষক নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। যোগ্যতা না থাকলে ওই প্রার্থীরা কীভাবে পাশ করলেন পরীক্ষায়? নিয়োগ হচ্ছে না কেন ? প্রায় দেড় লাখের কাছাকাছি পদ খালি আছে। আর যেখানে নিয়োগ হচ্ছে সেখানে দেখা যাচ্ছে অনেকে পরীক্ষাই দেয়নি। এই যে অনিয়ম, সেটা দূর হওয়া উচিত। স্কুলগুলিতে শিক্ষকের অভাবে পড়ানো যাচ্ছে না। সেখানে যোগ্য শিক্ষক দেওয়া উচিত এবং সময়ে নিয়োগ হওয়া উচিত। চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তায় বসে আন্দোলন করবেন এটা শোভা দেয় না। তাঁরা স্কুলের চেয়ারে বসুন, ছাত্র পড়ান এটাই শোভা দেয়। তাঁরা গান্ধি মূর্তির নিচে ধরনায় বসার অনুমতি চেয়েছিলেন, সরকার দেয়নি। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী একজন দাগি অফিসারকে বাঁচাবার জন্য বিনা অনুমতিতে ওখানে বসতে পারেন। অন্যদের জন্য ১৪৪ ধারার কথা বলা হচ্ছে। খুবই দুঃখজনক। চাকরি নেই, চাকরির জন্য লড়াই করার অধিকার নেই। এভাবে চলতে পারে না। সেইজন্য আমরা তাঁদের লড়াইয়ে সঙ্গে আছি এটা জানাবার জন্য এসেছিলাম।"