কলকাতা, 10 অক্টোবর: দীর্ঘদিনের নীরবতা ভেঙে অবশেষে নিয়ে মুখ খুললেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন হেভিওয়েট মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee) ৷ একসময় যে শোভন চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের (Mamata Banerjee) অন্যতম কাছের মানুষ, এবার মমতার সেই 'কানন'ই মুখ খুললেন এক সময়ের দলীয় সহকর্মী শুভেন্দুর অধিকারীর (Suvendu Adhikari) বিরুদ্ধে ৷
ঘটনার সূত্রপাত হয় লক্ষ্মী পুজোয় ৷ পুজোর দিনে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আরও একবার মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তীব্র আক্রমণ করেন ৷ নন্দীগ্রাম আন্দোলনের (Nandigram Movement) প্রসঙ্গ টেনে বলেন, নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় অধিকারীদের বাসভবন 'শান্তিকুঞ্জ'-তেই ছিলেন ৷ শুভেন্দুর স্পষ্ট বার্তা, নন্দীগ্রাম না হলে মমতা আজকের মমতা হতে পারতেন না ৷ তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়াও হত না ৷ শুভেন্দু মনে করিয়ে দেন 2008 সালের 13 মার্চ রাতে শান্তিকুঞ্জের ছাদে ছিলেন 'দিদি' ৷
আরও পড়ুন: 'বিজেপি কর্মীদের রক্তে মমতার হাত রাঙা না থাকলে বিজয়া করতে যেতাম', তোপ সুকান্তর
প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীপুজোর নিমন্ত্রণ পেয়ে রবিবার শান্তিকুঞ্জে পৌঁছে যান বিজেপি-এর রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) ৷ তাঁকে বাড়িতে স্বাগত জানাতে বেরিয়ে আসেন শুভেন্দু ৷ সেই সময়েই সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় ফের একবার মমতাকে আক্রমণ করেন শুভেন্দু ৷
এই ঘটনার পরই দীর্ঘদিনের নিরবতা ভেঙে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট (Facebook Post) করেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ৷ শুভেন্দুর দাবির প্রেক্ষিতে পালটা বলেন, "রাজনীতি করতে নেমে ইতিহাসকে বিকৃত করছেন তিনি (শুভেন্দু অধিকারী) ৷ এটা কখনওই মেনে নেব না ৷ আমি এই আক্রমণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি ৷ বাংলার মানুষ জানেন সেদিন কী হয়েছিল ৷ ঘটনাটি 2007 সালের 14 মার্চের, নাকি 2008 সালের 13 মার্চ তা নিয়েই ধন্দে রয়েছেন তিনি ৷ আসলে ওই ঘটনাটি ঘটেছিল 2007 সালের 14 মার্চ ৷ যেদিন নন্দীগ্রামে গুলি চলে, সেদিন আমি উপস্থিত ছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ৷ তৃণমূল ভবনে ৷ সেটা নিশ্চয়ই শান্তিকুঞ্জ ছিল না ৷ আমার মনে আছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের চোখে জল ৷ ঝরঝর করে কাঁদছেন ৷ তিনি বললেন, 'ওরা সবাইকে মেরে ফেলল কানন ! চল আমরা নন্দীগ্রামে যাই ৷' বিকেল সাড়ে তিনটে-চারটের সময় আমরা রওনা হয়েছিলাম ৷"
এই ভিডিয়োতেই শোভন জানান, "আমার মনে আছে ৷ রাত সাড়ে দশটার সময় আমরা কোলাঘাট থেকে চণ্ডীপুরের দিকে বাঁক নিতেই আমাদের গাড়ি আটকে দেওয়া হল ৷ সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়ি ৷ দেখলাম, চারপাশ থেকে আমাদের ঘিরে ধরেছেন বহু মানুষ ৷ তাঁদের হাতে গাঁইতি, কোদাল ৷ তাঁরা বলছে, পুলিশ, মিডিয়া কাউকে যেতে দেওয়া হবে না ৷ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেতে পারেন ৷ এ দিকে ওঁরও (মমতার) জেদ, 'আমি নন্দীগ্রাম যাবই ৷' সেদিন আমিই এগিয়ে গিয়েছিলাম ৷ পরিস্থিতি দেখে শুনে ওঁকে (মমতাকে) বলেছিলাম, 'আপনাকে ওরা মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেছে ৷ তাই কাউকে যেতে দেবে না বলছে ৷ আপনি ফিরে চলুন ৷' সেদিন শুভেন্দু কোথায় ছিলেন ? আর তিনি এমনভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করছেনই বা কী করে? সে দিন শুভেন্দু চণ্ডীপুরে আসেননি কেন ? কোথায় ছিলেন তিনি ? অথচ, নিজেকে তিনি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের হোতা বলে দাবি করেন !"
শোভনের এই পোস্ট নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই জল্পনা শুরু হয়েছে ৷ প্রশ্ন উঠছে, এবার কি তাহলে ঘাসফুল শিবিরে পুরনো ফর্মেই ফিরতে চলেছেন 'দিদি'র স্নেহের 'কানন' ?