কলকাতা, 18 অক্টোবর: উৎসবের মরশুমে কানপাতা দায় হয়ে ওঠে । কে কত জোরে বক্স বাজাতে পারে, তার যেন প্রতিযোগিতা চলে পাড়ায় পাড়ায় । এর জেরে শিশু, বাচ্চা, বয়স্করা তো বটেই, সুস্থ-সবল মাঝবয়সিরাও বিরক্ত হয়ে ওঠেন । অনেকেই তার জেরে অসুস্থও হয়ে পড়েন । সার্বিকভাবে বিকট শব্দের (Sound Pollution) কারণে পরিবেশে মারাত্মক রকম ক্ষতি হয় । তাই পরিস্থিতির বদল ঘটাতে আইন মেনে কালীপুজো ও ছট পুজোতে অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে (WBPCB Order for Diwali)। বিশেষ করে খোলা মঞ্চের অনুষ্ঠানের জন্য সাউন্ড লিমিটর সিস্টেম স্থাপন বাধ্যতামূলক (Sound limiter mandatory) করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । যা স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারিতে চলবে । এর অন্যথা হলে আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে (West Bengal Pollution Control Board)।
দিন কয়েক আগেই রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এ বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে প্রতিটি জেলা প্রশাসন ও পুলিশকে শব্দদূষণ রোধে কড়া পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে । পর্ষদের তরফে বলা হয়েছে, সমস্ত পুলিশ এবং জেলা প্রশাসনের কর্তৃপক্ষকে বলা হচ্ছে যে, খোলা মঞ্চে মাইক্রোফোন ব্যবহারের অনুমতি কেবল তখনই দেওয়া যেতে পারে, যদি অনুষ্ঠানের আয়োজকরা শব্দ সীমাবদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন । আয়োজকদের লিখিতভাবে জানাতে হবে যে, তাঁরা সাউন্ড লিমিটার ইনস্টল করতে রাজি ।
পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সচিব রাজেশ কুমার বলেন, "ইতিমধ্যে নির্দেশ জারি করা হয়েছে । আদেশের অনুলিপি পুলিশ কমিশনার, সমস্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ সুপার, সহকারী পুলিশ কমিশনার ও থানার দায়িত্বে থাকা সমস্ত আধিকারিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে । কালী পূজার সময় এবং ছটে প্রায়ই অনুমোদিত সীমা লঙ্ঘন করে মাইক্রোফোন বাজানো হয় বলে এই পদক্ষেপ করা হয়েছে । বিসর্জনের সময় নির্দিষ্ট সীমার ঊর্ধ্বে গিয়ে ডিজে বাজিয়ে ভাসানে যায় বিভিন্ন পুজো কমিটি । সে সবকে রুখতেই এই উদ্যোগ ।"
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ায় ডিজে বক্স বন্ধে নজিরবিহীন অভিযান পুলিশের
প্রতি বছরই দুর্গাপুজো কিংবা অন্যান্য উৎসবে শব্দবিধি মানার নির্দেশ দেওয়া হয় রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে । কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন জায়গায় ডিজের তাণ্ডব চলে এবং সেখানে পুলিশ প্রশাসন উপস্থিত থাকলেও কেউ কোনও পদক্ষেপ করে না বলে অভিযোগ ওঠে । অন্যদিকে, পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে যুক্তি দেওয়া হয়, উৎসবে মানুষের উৎসাহে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হয় না এবং তারা যে নির্দিষ্ট সীমা লঙ্ঘন করে মাইক বা বক্স বাজিয়ে যাচ্ছেন তাদের তা বোঝানো সম্ভব হয় না । কারণ সেই পরিকাঠামো সবসময় সব জায়গায় থাকে না । কিন্তু এ বছর রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের সাম্প্রতিক নির্দেশে পরিস্থিতির বদল ঘটবে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল । কারণ এ ক্ষেত্রে যাঁরা খোলা মঞ্চে অনুষ্ঠান করছেন অর্থাৎ আয়োজকদেরই সাউন্ড লিমিটর সিস্টেম স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সেই সিস্টেম থাকলে আয়োজকরাই বুঝতে পারবেন, তাঁরা কতটা ভলিউমে মাইক বা বক্স বাজাচ্ছেন ।