কলকাতা, 20 সেপ্টেম্বর : এক কোরোনা রোগীকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার নামে ব্যবসার অভিযোগ উঠল দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে । অভিযোগ, ওই হাসপাতালে 57 বছরের এক কোরোনা রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসেবে বিশাল অঙ্কের বিল দেখানো হয় । পাশাপাশি বিলের বকেয়া টাকা জমা দেওয়ার জন্য রোগীর পরিজনকে হাসপাতাল থেকে বার বার ফোন করা হয় । রোগীর মৃত্যুর পর বকেয়া জমা না দিলে তাঁর মুখ দেখতে না দেওয়ার কথা বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । সংশ্লিষ্ট রোগীর ছেলে হাসপাতালের বিরুদ্ধে ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC)-এ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ।
মৃত রোগী খিদিরপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন । কমিশনের কাছে তাঁর ছেলে জানান, কোরোনা আক্রান্ত সন্দেহে 24 অগাস্ট বাবাকে দক্ষিণ কলকাতার ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি করান । 25 অগাস্ট কোরোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে । ভরতির সময় রোগীকে ICU-তে রাখা হয় । কিন্তু কোরোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট আসার পর তাঁকে স্পেশাল COVID ICU-তে স্থানান্তর করা হয় । মৃতের ছেলের দাবি, তাঁর বাবার 2 লাখ 50 হাজার টাকার স্বাস্থ্যবিমা ছিল । এদিকে, চিকিৎসার খরচ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তিন লাখ টাকা জমা করেন তিনি । টাকা জমার পর রোগীকে বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয় । 31 অগাস্ট ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয় তাঁকে । 8 সেপ্টেম্বর তাঁকে ভেন্টিলেটরের বাইরে আনা হয় । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে তাই তাঁকে আর ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখার প্রয়োজন নেই । রোগীকে নেবুলাইজ়েশন দেওয়া হচ্ছিল । ছেলের অভিযোগ, এর তিন-চার দিন পর তাঁর বাবাকে ফের বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয় । মাঝেমধ্যে ভেন্টিলেটরের সাপোর্টেও রাখা হচ্ছিল । 18 সেপ্টেম্বর ভোর তিনটে নাগাদ হাসপাতাল থেকে তাঁদের জানানো হয়, রোগীর অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ফের ভেন্টিলেটর সাপোর্টে রাখা হয়েছে । ভোর পাঁচটা নাগাদ হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তাঁর বাবা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন । তবে চিকিৎসকদের চেষ্টায় তিনি স্থিতিশীল রয়েছেন । এর পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ফের জানায়, দ্বিতীয়বার হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় ভোর 6টা 20 মিনিটে তাঁর বাবার মৃত্যু হয়েছে ।
মৃতের ছেলের অভিযোগ, 15 সেপ্টেম্বর হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসার খরচ দিতে না পারলে রোগীকে অন্য কোনও নার্সিংহোমে যেন ভরতি করা হয় । পাশাপাশি হাসপাতাল থেকে বার বার বকেয়া বিলের টাকা চাওয়ার বিষয়টি তাঁদের কাছে সমস্যা হয়ে উঠেছিল । পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, "বাবার চিকিৎসার খরচ হিসেবে বিল করা হয় প্রায় 11 লাখ টাকা । এর মধ্যে আমরা দিয়েছি তিন লাখ টাকা । স্বাস্থ্যবিমা থেকে পাওয়া গেছে দু'লাখ টাকা । বিলের বাকি টাকা আমরা দিতে অপরাগ ।" মৃতের ছেলের অভিযোগপত্রের কপি পাঠানো হয় কলকাতার পুলিশ কমিশনার, আলিপুর থানা এবং ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে । অভিযোগ জানানোর পর 18 সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রোগীর মুখ দেখতে দেওয়া হয় তাঁর আত্মীয়দের । তবে অভিযোগ দায়েরের পরে বিলের বকেয়া টাকা চায়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । অভিযোগপত্রে ঘটনার যথাযথ তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন মৃতের ছেলে ।