কলকাতা, 9 জুন : মিথ্যের ফুলঝুরি নিয়ে, ভোটের রাজনীতি করতে প্রচার চালাচ্ছে BJP । ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন CPI(M)-এর পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম । তিনি বলেন, "আজ সকাল 11টা থেকে বেলা 12টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের "ভার্চুয়াল রিয়েলিটি" দেখেছে রাজ্যের বিরোধী দলের নেতারা ।" একযোগে BJP এবং অমিত শাহকে আক্রমণ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের প্রধান দুই বিরোধী দল বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস । তাদের অভিযোগ, সাম্প্রতিককালের সমস্যার কথা ভুলে গিয়ে সোনার বাংলার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনলাইনে হাজির হয়েছেন অমিত শাহ ।
BJP নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রবিবার বিহারে ভার্চুয়াল সভা করেছেন । একইভাবে আজ এরাজ্যে সভা করলেন তিনি । কোরোনা ভাইরাস, লকডাউন, ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষের বিপদে কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার কোনও সাহায্য করেনি। এখন দুই পক্ষ ভোটের লক্ষ্যে ডিজিটাল নির্মিত ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পিছনে লুকিয়ে প্রচারে নেমেছে বলে অভিযোগ করেন মহম্মদ সেলিম ।
এক সুরে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান কটাক্ষ করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে । তিনি বলেন, “কর্মহীন মানুষের কর্মসংস্থানের উল্লেখ করলেন না আমিত শাহ । পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার সমাধান হবে কি ? সোনার পশ্চিমবঙ্গ গড়তে চাইছেন, অথচ এই রাজ্যের নিরন্ন মানুষের কথা বললেন না অমিত শাহ । অমিত শাহের হাতে খুনের রক্ত লেগে রয়েছে । কীভাবে তিনি সোনার বাংলা গড়বেন ? আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সাহায্যের কথা নেই, কথা নেই কোরোনা ভাইরাস নিয়ে কোনও কথা ।” তিনি আরও বলেন, "এই অমিত শাহকে বাংলার মানুষ খালি হাতে ফিরিয়ে দেবে। বাংলার সংস্কৃতি, কৃষ্টি, সম্প্রীতি সম্পর্কে গোবলয়ের অমিত শাহের কোনও ধারণা নেই । কেবলমাত্র ভোটের ঝুলি ভরার জন্য মিথ্যে কথা পরিবেশন করলেন অমিত শাহ ।"
১৯৭৮ সালের বন্যার পরে গ্রাম পুনর্গঠনের জন্য তৎকালীন পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে কাজে লাগানো হয়েছিল । গ্রামবাংলা গড়া হয়েছিল নতুনভাবে। CPI(M)-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “আমফান পরবর্তী পরিস্থিতিতে কীভাবে গ্রামবাংলা পুনর্গঠনের কাজ করা যায়, পুকুর খনন, মানুষের গৃহনির্মাণ করা যায় সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নীরব রইলেন আজ ।” তাঁর অভিযোগ, “NPR, NRC নিয়ে বাংলার মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে বিভেদের চক্রান্ত করেছিলেন অমিত শাহ । গুজরাত, আমেদাবাদকে সোনা দিয়ে মুড়তে পারেননি । অথচ পশ্চিমবঙ্গকে সোনার বাংলা গড়বেন বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করে গেলেন অমিত শাহ ।”
তিনি আরও বলেন, "তৃণমূলের থেকে CPI(M)-এর শাসনকাল ভাল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন অমিত শাহ। এই ফাঁদে কেউ পা দেবেন না । এখন মুখ্যমন্ত্রীর কাজের 10 বছরের হিসেব চাইছেন । একটা সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এসে বলে গিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সময় দিতে হবে । সোনা-দানা খুব ভালো বোঝেন অমিত শাহ। সেই কারণেই সোনার উপর এত লোভ । সোনার বাংলা গড়বেন । 100 দিনের কাজ, ত্রাণ বণ্টন, রেশন ব্যবস্থা, সড়ক যোজনা, আবাস যোজনা নিয়ে কোনও মন্তব্য করলেন না কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । কেবলমাত্র নির্বাচনের ধান্দাবাজি করে গেলেন ।"
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র জানান, “ইন্টারনেটের মাধ্যমে আদ্যপ্রান্ত মিথ্যে কথা বলে গেলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 100 দিনের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে 200 দিন করার দাবি করা হয়েছিল । তার কোনও উল্লেখ নেই অমিত শাহের বক্তব্যে। গত কয়েক বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে কোনও সরকারি চাকরি নেই । কেন্দ্রীয় সরকার লোক নিয়োগ করছে না । রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে বিক্রি করে আদানি, আম্বানিদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে । চাকরির পরীক্ষা নেই, কেন্দ্রের নিয়োগ বন্ধ। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য সংবাদ সংস্থাগুলির ওপরে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে । ইতিমধ্যেই দেশ এবং রাজ্যের বিভিন্ন নামী সংবাদমাধ্যমের কর্মরতদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে । এর থেকে বার্তা স্পষ্ট, অর্থনৈতিক সংকট চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে । ঘোড়া কেনাবেচায় সিদ্ধহস্ত অমিত শাহ তাঁঁর দলে মুকুল রায়কে নিয়েছেন । তৃণমূল সম্পর্কে বিশেষ কিছু বলতে চাননি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী । কারণ তিনিও জানেন তৃণমূল ভেঙেই BJP গড়ে তোলা হবে । নীরব থেকেছেন রাজ্যের শাসন ব্যবস্থা নিয়ে । তাঁঁর গুজরাত এবং আমেদাবাদে আইন-শৃঙ্খলা অবস্থা ভেঙে পড়েছে। কোন মুখে তিনি পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে কথা বললেন ?”
তৃণমূল কংগ্রেস এবং BJP মিলেমিশে একাকার । একই মুখ, লুটের মাধ্যমও এক । আগে নিজের ঘর সামলা পরে গড়িস বাংলা । মন্তব্য রাজ্যের বিরোধী দলের নেতৃত্বের ।