কলকাতা, 29 সেপ্টেম্বর : দমদমের যশোর রোডে না কি বেনামে হোটেল রয়েছে নারদকাণ্ডে ধৃত IPS এস এম এইচ মির্জ়ার ৷ সূত্রের খবর হোটেলটির বিষয়ে খোঁজখবর শুরু করেছে CBI ৷ এই নিয়ে মির্জ়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন CBI আধিকারিকরা ৷
দমদম এলাকায় যশোর রোডের উপরে এই বিশাল হোটেল । বিমানবন্দরে 3 নম্বর গেটের খুব কাছে রাস্তার উপরই এই বিশাল হোটেল । ডাকসাইটে নেতা থেকে শুরু করে বিদেশি অতিথি অভ্যাগতরা এই হোটেলেই এসে ওঠেন বলে জানা গেছে । গত আট বছর ধরে রমরমিয়ে ব্যবসা করছে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ।
স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বাসিন্দারাও জানেন, এটা মির্জ়ার হোটেল । কিন্তু কোন মির্জ়া, এতদিন তা স্পষ্ট ছিল না তাঁদের কাছে ৷
হোটেলের কর্মচারীরাও কথায় কথায় বললেন, পুলিশের পদস্থ কর্তা তথা IPS অফিসার মির্জ়ার হোটেল এটা । ঠিকানা 238/22, যশোর রোড । রবিবার সকাল । অন্য দিনের মতো আজ রাস্তায় অত যানবাহন নেই । এই হোটেলটি মির্জ়ার, এমনটা চাউর হয়ে যাওয়াতে ইদানিং নাকি খদ্দেরও কম আসেন, বললেন হোটেলের এক কর্মী । সাধারণ ক্রেতা হিসেবে উপনয়নের জন্য বুক করতে গিয়ে দেখা গেল, এলাহি ব্যবস্থা । প্রচুর খরচ করে সাজানো হয়েছে সমগ্র হোটেল ।
হোটেলের রেস্তরাঁতেও সব ধরনের খাবার মিলবে । আলাদা করে পানশালা এখানে নেই । অতিরিক্ত টাকা দিলে চাইলে তাও মিলবে, বললেন হোটেলের এক কর্মচারী । তবে মদের দামটা বেশি পড়বে ।
এখানকার খাবারের দাম যথাক্রমে, স্টিম রাইস এক প্লেট 100 টাকা, ডাল প্রতি প্লেট 140 টাকা, পাঁঠার মাংস (3 টুকরো) 340 টাকা । এক বোতল জল 40 টাকা । লাল চা 30 টাকা এক কাপ । প্রত্যেকটি খাবারের সঙ্গে GST ও SGST যোগ হবে, বললেন হোটেলের এক কর্মচারী । একজন মানুষের পেট ভরে খেতে প্রায় এক হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ হবে । খাবার নেওয়ার পরে যদি সম্পূর্ণ খাবার না খাওয়া যায়, তাহলে ওই বেশি খাবার কর্মচারীরা প্যাকেট করে দেবেন বলে জানিয়েছেন । অতিরিক্ত প্যাকেট করার জন্য 10 টাকা দিতে হয় ।
নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, ছাড়াও এলাকার কিছু বাসিন্দা এই হোটেলে কাজ করেন । হোটেলে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের মধ্যে থেকেই কয়েকজনকে নিযুক্ত করা হয়েছে, অতিথি- অভ্যাগতদের স্বাগত জানাতে । তাঁদের কাজ, গাড়ির দরজা খুলে অতিথিকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া । বেরোবার সময় আবার দরজা খুলে দেওয়া ।
হোটেলটি চারতলা । তিনতলায় প্রায় 22টির মতো ঘর । সিঙ্গল ডিলাক্স, থেকে প্রিমিয়াম ডিলাক্স, স্যুট সবই আছে । সব ঘরে AC, মিনি বারের সঙ্গে নানা বিলাসবহুল ব্যবস্থা রয়েছে । প্রতিদিনের ভাড়া 3 হাজার থেকে শুরু করে 4 হাজার টাকা পর্যন্ত । ভাড়ার সঙ্গে যুক্ত হবে অতিরিক্ত GST ।
হোটেলের এক কর্মচারী বলছিলেন, মির্জ়া তাঁর স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে কাছেই একটি বহুতলে থাকেন । মাঝে-মাঝেই তাঁরা হোটেলের কাজকর্ম দেখতে আসেন । কর্মীদের ঠিকমতো মাইনে দেন প্রতি মাসের নির্ধারিত সময়ে । তাই অত সব নিয়ে ভাবতে চান না তাঁরা । বিভিন্ন সূত্র মারফত খোঁজ করে জানা গেছে রাজ্য সরকারের এই পুলিশ অফিসারের নামে হোটেলটি নেই । সরকারি নথিতে এই হোটেলের মালিক অন্য একজন । তাঁর সম্পত্তির যে তালিকা রাজ্য সরকারকে দিয়েছেন, সেখানেও এই হোটেলের উল্লেখ নেই ।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নাকি এই হোটেলের মালিকের খোঁজখবর করছে । এই বিষয়ে তারা মির্জ়াকে গতকাল প্রশ্নও করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি ।