কলকাতা, 22 জানুয়ারি : রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি বিভাগের অন্তর্বর্তী সেমেস্টার পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ঘিরে তৈরি হল জটিলতা । অভিযোগ, অনলাইনে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য পাসওয়ার্ড বাইরের মানুষের সঙ্গে শেয়ার করেছেন এক অধ্যাপক । তাই গোটা পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা । গতকাল এই জটিলতার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করে পড়ুয়াদের একাংশ উপাচার্যের কাছে চিঠি দিয়েছেন ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের গাইডলাইন মেনে 50 শতাংশ অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন ও 50 শতাংশ পূর্ববর্তী সেমেস্টারে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সেমেস্টার পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । সেই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই প্রতিটি বিভাগে স্নাতকের দ্বিতীয়, চতুর্থ ও স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমেস্টারের পরীক্ষা হয়ে গেছে । চূড়ান্ত সেমেস্টারের মতো অন্তর্বর্তী সেমেস্টারের পরীক্ষাও নেওয়া হয়েছে অনলাইনে । অনলাইনে পরীক্ষার পোর্টালে জমা পড়া উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে পরীক্ষকদের কাছে পাসওয়ার্ড পাঠানো হয়েছে । ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপকদের কাছে মেলে সেই গোপন পাসওয়ার্ড পাঠাতেই বাধে বিপত্তি ।
ওই বিভাগের এক অধ্যাপক বলেন, "13 জানুয়ারি তাঁদের সকলের কাছে আসে পাসওয়ার্ডের মেল । বিভাগেরই এক অধ্যাপকের পাঠানো সেই মেলে দেখা যায়, বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ছাড়াও অপরিচিত কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছে মেল । তারপর 18 জানুয়ারি বিভাগীয় বৈঠকে তোলা হয় বিষয়টি । মেল পাঠানো অধ্যাপক দায় স্বীকার করে ক্ষমাও চান । বিভাগীয় প্রধান ওইদিনই পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে দেওয়া হবে বলে জানান । " কিন্তু, তারপরেও গোটা ব্যবস্থা থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা ।
আরও পড়ুন : তিন মাস মেয়াদ বাড়ল রবীন্দ্রভারতীর উপাচার্যের
কারণ হিসেবে তাঁরা জানান, ঘটনার পরে প্রায় এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে । তারপর পাসওয়ার্ড বদল করে উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হলেও, মাঝের দিনগুলিতে কোনও অনৈতিক কাজ ঘটে থাকলে তার দায় নিতে হবে বিভাগের সকল অধ্যাপক-অধ্যাপিকাকেই । যা তাঁরা কেউ নিতে রাজি নন । তাই তাঁরা কোনও অবস্থাতেই এই পরীক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত থাকতে রাজি নন বলে জানিয়ে দিয়েছেন । ওইদিনের বৈঠকে গোটা বিষয়টি দেখার দায়ভার ছেড়ে দেওয়া হয় বিভাগীয় প্রধানের উপর ।
বিভাগের অপর এক অধ্যাপিকার বক্তব্য, "পরীক্ষার বিষয়ে এই ধরনের বিচ্যুতি এক অমার্জনীয় অপরাধ । কোনও অবস্থাতেই একে সমর্থন করা যায় না । বিভাগীয় প্রধানকে দেখতে হবে যাতে পড়ুয়াদের স্বার্থ কোনও অবস্থাতেই বিঘ্নিত না হয় ।"
পাশাপাশি, ওইদিনের পর থেকে কয়েকজন অধ্যাপিকার কাছে অপরিচিত মেল আইডি থেকে একাধিক অশোভনীয় মেসেজ এসেছে বলে অভিযোগ জানানো হয়েছে । তবে, জটিলতার বিষয়টি বিভাগের অভ্যন্তরেই ছিল । জানা গিয়েছে, সম্প্রতি এই বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন অন্তর্বর্তী সেমেস্টারের পড়ুয়ারা । তাঁদের একাংশ ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়ে উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন ।
এবিষয়ে উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরির বক্তব্য জানতে তাঁর সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি ।