কলকাতা, ১৮ মার্চ : রাজ্যের কোরোনা আক্রান্ত প্রথম রোগীকে কলকাতার বেলেঘাটা ID হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে ভরতি করা হয়েছে ৷ শেষ পাওয়া খবরে, COVID-19-এ আক্রান্ত এই যুবকের মা-বাবা এবং তাঁদের গাড়ির দুই চালক ছাড়াও আরও ১১ জন কোরোনা সংক্রমণ সন্দেহে বেলেঘাটার হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভরতি হয়েছেন।
এদিকে লন্ডন থেকে আসা ওই যুবক, তাঁর মা-বাবা, গাড়ির দুই চালকের সোয়াবের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে আজ। নমুনা সংগ্রহের পর চারজনকে রাখা হবে রাজারহাটের কোয়ারান্টাইন সেন্টারে। অন্যদিকে, রাজ্যের এই আক্রান্তের সংস্পর্শে আর কে বা কারা এসেছেন, তাঁদের খোঁজ চলছে। বিমানে চেপে লন্ডন থেকে কলকাতায় ফিরেছিলেন আক্রান্ত যুবক। বিমানে তাঁর সহযাত্রীদের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।
দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা এই আক্রান্তের বয়স ১৮ বছর। COVID-19-এ আক্রান্ত এই যুবক লন্ডনের ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের পড়ুয়া। গত ১৫ মার্চ তিনি লন্ডন থেকে কলকাতায় ফেরেন। মঙ্গলবার রাতে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তী বলেন, "ইংল্যান্ড থেকে ১৮ বছরের এক যুবক ফিরেছেন। ১৫ মার্চ তিনি কলকাতায় এসেছেন। তখন তাঁর কোনও উপসর্গ ছিল না। পরে উপসর্গ দেখা দেয়। মঙ্গলবার সকালে বেলেঘাটার ID হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয়। তাঁর সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছিল। মঙ্গলবার রাতে এই নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া গেছে। তাতে COVID-19 পজ়িটিভ এসেছে।"
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, কোরোনা আক্রান্তের মা, বাবা এবং তাঁদের গাড়ির চালককে প্রথমে মঙ্গলবার রাতে রাজারহাটের কোয়ারান্টাইন সেন্টারে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে, রাতেই সিদ্ধান্তে কিছু বদল ঘটানো হয়। পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, COVID-19-এ আক্রান্তের মা-বাবা এবং তাঁদের গাড়ির দুই চালককে মঙ্গলবার রাতে বেলেঘাটার এই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বুধবার সকালে এই চারজনের সোয়াবের নমুনা পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। তারপর চারজনকে রাজারহাটের কোয়ারান্টাইন সেন্টারে পাঠানো হবে।
আক্রান্ত যুবকের মা রাজ্যের একজন আমলা। বাবা একজন চিকিৎসক। ১৫ মার্চ লন্ডন থেকে বিমানে চেপে ফেরার পর বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্যানিংয়ে তাঁর কোনও উপসর্গ ধরা পড়েনি। ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডে চলতি বছরেই পড়তে গেছিলেন যুবক। সেই সূত্রে তিনি লন্ডনে ছিলেন। আদতে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, অসুস্থ বোধ করায় মঙ্গলবার এই যুবককে নিয়ে যাওয়া হয় টালিগঞ্জে অবস্থিত MR বাঙ্গুর হাসপাতালে। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় চিকিৎসকদের কাছে যুবক জানান, লন্ডনে একটি পার্টিতে তিনি অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই পার্টিতে অন্য যাঁরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে কয়েকজন COVID-19-এ আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরই এই যুবককে মঙ্গলবার বেলেঘাটার হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে MR বাঙুর হাসপাতালের যে চিকিৎসক এবং তাঁর সহযোগী এই যুবকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন, তাঁরা এই যুবকের COVID-19-এ আক্রান্ত হওয়ার খবরে ভীত হয়ে পড়েন। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক জানান, MR বাঙ্গুর হাসপাতালের এই চিকিৎসক এবং তাঁর সহযোগীর ক্ষেত্রে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, সেই বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লন্ডন থেকে ফেরার সময় বিমানে এই যুবকের যে সহযাত্রীরা ছিলেন, ভারত সরকারের কাছে তাঁদের বিষয়ে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরের অন্য একটি সূত্রের খবর, ১৫ মার্চ লন্ডন থেকে ফেরার পরে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এই যুবককে বেলেঘাটার হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলা হয়। তবে যুবকের মা তখন জানান, তাঁর ছেলেকে একদিন তিনি বাড়িতে রাখতে চান। এরপর ওইদিন দমদম বিমানবন্দর থেকে গাড়িতে চেপে মায়ের সঙ্গেই যুবক বাড়িতে ফিরেছিলেন। মঙ্গলবার সকালে বাড়ি থেকে গাড়িতে চেপে মায়ের সঙ্গে যুবক বেলেঘাটার হাসপাতালে আসেন।
এদিকে মঙ্গলবার রাতেই কোরোনা আক্রান্ত সন্দেহে আরও 11 জন বেলেঘাটার ID হাসপাতালের আইসোলেশন বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।