কলকাতা, 24 নভেম্বর : স্ক্রাব টাইফাসে মৃত্যু এড়ানো যাচ্ছে না । গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলের মানুষও আক্রান্ত হচ্ছেন । আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে ।
কলকাতার মুকুন্দপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে ১৩ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা মহাদেব মণ্ডল (৪৯)-এর মৃত্যু হয় । তিনি স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন । জানা গেছে, ২২ নভেম্বর মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের বাসিন্দা তরুণ সরকার (৩৩)-র মৃত্যু হয়েছে বহরমপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে । তিনিও স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত ছিলেন বলে জানা গেছে । গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও এমনকী, কলকাতাতেও স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে । কলকাতার পার্কসার্কাসে অবস্থিত বেসরকারি একটি শিশু হাসপাতালে স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচজন ৷ তাঁদের আপাতত চিকিৎসা চলছে ।
স্ক্রাব টাইফাসের পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক? এই বিষয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয়কুমার চক্রবর্তীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় । কারণ, স্ক্রাব টাইফাস এখন ভেরি কমন ইনফেকশন । তবে, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু হতে যাতে দেরি না হয়, তার জন্য চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে ।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, "স্ক্রাব টাইফাসের ওষুধ রয়েছে । রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসাও করা হচ্ছে । এই রোগ খুব সহজে সেরে যায় ।" যদিও, স্ক্রাব টাইফাসে মৃত্যু কেন হচ্ছে, তা দেখতে হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।
তবে, শুধুমাত্র স্বাস্থ্য অধিকর্তা নন । এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি অংশও জানিয়েছেন, স্ক্রাব টাইফাসের পরিস্থিতি এখনও উদ্বেগজনক হয়ে ওঠেনি । সরকারি চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, "স্ক্রাব টাইফাসে উদ্বেগের খুব বেশি কারণ আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি না ।" তবে তিনি বলেন, "যে সব এলাকায় অনেক জঞ্জাল, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রয়েছে, সে সব এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করুন । পৌরসভা, পঞ্চায়েত যাতে এই দায়িত্ব পালন করে সেটা দেখুন । স্বাস্থ্যকর পরিবেশ যাতে বজায় থাকে, সেটা দেখা জরুরি ।"
সার্ভিস ডক্টরস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "স্ক্রাব টাইফাসে মৃত্যু হচ্ছে । তবে, এখনও এটা খুব যে বড় এলাকা জুড়ে হয়েছে, এপিডেমিক বা বিশাল আউটব্রেক হয়েছে, তা বলার মতো জায়গায় নেই । প্রতিবছরই কিছু কিছু ঘটনা দেখা যায়, এবারও হচ্ছে । যা-ই ঘটুক না কেন, যে কোনও রোগে মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক, অত্যন্ত দুঃখজনক । কারণ, স্ক্রাব টাইফাস সামান্য একটি পোকার কামড়ে হচ্ছে । শুরুতে যদি রোগনির্ণয় এবং চিকিৎসা শুরু হয়, তা হলে রোগীর মৃত্যু হওয়া উচিত নয় ।"
চিকিৎসক সজল বিশ্বাস আরও বলেন, " আমাদের রাজ্যে হাইজেনিক কন্ডিশন আমরা এখনও তৈরি করতে পারলাম না । এলাকায় জঞ্জাল পরিষ্কার করার জন্য যে সিস্টেম গড়ে ওঠা উচিত ছিল, তা ঠিক মতো গড়ে ওঠেনি । পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশের উপর গুরুত্ব দেওয়া জরুরি, তা হলে এগুলি থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি ।"
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ব্যাকটেরিয়া ঘটিত একটি রোগের নাম স্ক্রাব টাইফাস । মাইট নামে ছোটো একটি পোকার মাধ্যমে এই রোগটি মানুষের শরীরে সংক্রামিত হচ্ছে । চার-পাঁচ বছর আগেও স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ এতটা দেখা যেত না । অন্য একটি কারণেও হতে পারে স্ক্রাব টাইফাসের সংক্রমণ । তা হল, জঙ্গল এখন সাফ হয়ে যাচ্ছে । সেখান থেকে পোকা-মাকড়ের উৎপাত বাড়তে পারে । ১৯৩০-এ জাপানে প্রথম স্ক্রাব টাইফাস চিহ্নিত হয়েছিল । ভারত, চিন, জাপান, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, এই দেশগুলোর মধ্যে আগে সীমাবদ্ধ । এখন অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ছে বলেও জানিয়েছেন চিকিৎসকরা ।