কলকাতা, 8 ফেব্রুয়ারি : বেশ কয়েকবছর ধরেই চেষ্টা চলছিল। কিন্তু, একাধিক প্রতিবন্ধকতায় এখনও পর্যন্ত শিক্ষার মূলস্রোতে ফেরানো সম্ভব হয়নি রাজ্যের টোলগুলিকে। তবে, আর দেরি না করে এবার সংস্কৃত শিক্ষার পীঠগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে সচেষ্ট হয়েছে সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় 12 বছর ধরে বন্ধ থাকা পরীক্ষা ব্যবস্থাকে সচল করার মাধ্যমে, তা করার চেষ্টা করছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
2008 সাল থেকে অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল রাজ্যের টোলগুলির পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ। কারণ, মাধ্যমিক সমতুল্য 'আদ্য' ও উচ্চমাধ্যমিক সমতুল্য 'মধ্য' পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, টোলের পড়ুয়াদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছিল উচ্চশিক্ষার দরজা। সেই সময় বঙ্গীয় সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদের অধীনস্থ ছিল টোলগুলি এবং পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বও ছিল পরিষদের উপর। পরীক্ষা না হওয়ার কারণে প্রায় নিশ্চিহ্ন হতে বসেছিল টোলগুলি। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই টোলগুলিকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছিল। সেই চেষ্টা আরও জোরালো হয় 2016 সালে সংস্কৃত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তকমা পাওয়ার পর। সেই সময় সংস্কৃত সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে বঙ্গীয় সংস্কৃত সাহিত্য পরিষদের অধীনস্ত টোলগুলিকে অধিগ্রহণ করার অনুমতি দেয় রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর। অধিগ্রহণের সেই প্রক্রিয়া শেষ হয় 2019 সালে।
অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর দেখা যায় রাজ্যজুড়ে মোট টোলের সংখ্যা 421টি। টোলগুলিতে মোট 509 জন পণ্ডিত রয়েছেন। যাঁরা নিয়মিত সরকারের কাছ থেকে 7 হাজার 632 টাকা করে ভাতা পান। এই টোলগুলি অধিগ্রহণের পরেই পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৷ সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘2019 সালে টোলগুলো আমাদের অধীনে আসে। আমরা চেয়েছিলাম, 2020 সালেই পরীক্ষা চালু করে, পঠন-পাঠন এগিয়ে নিয়ে যেতে। কিন্তু, অতিমারির কারণে সব বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা আর পরীক্ষাটা নিতে পারিনি। সেই সময় পরীক্ষা দিনও স্থির হয়ে গেছিল। এখন যখন পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হচ্ছে, সবাই পরীক্ষা নিচ্ছে, তখন এদের পরীক্ষাটা না নিলে তো এদের সাথে বঞ্চনা করা হবে। 2008 সাল থেকে এদের পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছিল। সেই আদ্য ও মধ্য পরীক্ষা আবার নেওয়ার কাজ শুরু করছি আমরা।’’
আরও পড়ুন : গোপনীয়তা ভঙ্গের অভিযোগ, পরীক্ষা ব্যবস্থা থেকে সরলেন রবীন্দ্রভারতীর ইংরাজি বিভাগের অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা
ইতিমধ্যেই টোলের পণ্ডিতদের সঙ্গে বৈঠক করে পরীক্ষার নিয়মবিধি স্থির করেছেন উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘2008 থেকে 2020 সাল পর্যন্ত পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এর মধ্যে কতজন পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক, তার একটা তথ্য আমরা সংগ্রহ করলাম। 421টা টোলের খোঁজখবর নিয়েছি। 509 জন পণ্ডিতরা ভাতা পাচ্ছেন কিনা খোঁজ নিলাম। তাঁদেরও তো সাহায্য নিতে হবে। তারপরে 22টা পরীক্ষাকেন্দ্র নির্ধারিত করলাম যেখানে পরীক্ষা নেওয়া হবে। এরপরে ফর্ম ফিলাপ শুরু করা হবে।’’ উপাচার্য জানাচ্ছেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়ে যাবে ফর্ম ফিলাপের প্রক্রিয়া। কিন্তু, 2008 সাল থেকে বন্ধ রয়েছে পরীক্ষা। এত বছর পরে কী টোলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে আগ্রহী হবেন? সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি প্রথম সেটাই খবর নিয়েছিলাম। আমি টোলের পণ্ডিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা আমায় জানান, প্রচুর মানুষ বসে আছেন এই পরীক্ষাটার জন্য। ফর্ম ফিলাপ হলেই কতজন পরীক্ষা দেবেন সেটা আমরা নির্দিষ্টভাবে জানতে পারব। তবে, টোলের পণ্ডিতরা আন্দাজ করে বলেছেন সংখ্যাটা 8-9 হাজার হবেই৷’’
সংস্কৃত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য জানাচ্ছেন, ফর্ম ফিল আপের প্রক্রিয়া শেষ হতে দেড় মাস মতো সময় লেগে যাবে। তারপরেই পরীক্ষার দিন ঘোষণা করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, "পরীক্ষাটা চালু করে দিতে পারলেই নতুন পড়ুয়া ভরতি হচ্ছে আগ্রহী হবেন। ফলে ধীরে ধীরে টোলগুলো আবার মূলস্রোতে ফিরে আসবে।"