কলকাতা, 6 অক্টোবর: বিজয়া (Bijoya Dashami) মানে বাঙালি সংস্কৃতিতে মিষ্টিমুখ ৷ সৌহার্দ্য বিনিময় এবং কোলাকুলি ৷ শুভেচ্ছা ও কুশল বিনিময় করে নেওয়া ৷ আর এই চিরাচরিত রীতিকেই রাজনৈতিক আক্রমণের হাতিয়ারে পরিণত করলেন বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ (Rudranil Ghosh) ! বিজয়ার শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বাংলার শাসক শিবির তথা সরকারকে কড়া ভাষায় বিঁধলেন তিনি ৷
ক্লাবগুলিকে পুজোর অনুদান দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়োগ দুর্নীতি (SSC Recruitment Scam) ও কয়লা কেলেঙ্কারির (West Bengal Coal Smuggling Scam) মতো ইস্যু নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) ও তাদের পরিচালিত সরকারকে (West Bengal Government) তুলোধনা করলেন অভিনেতা ৷ আক্রমণের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিলেন স্বরচিত কবিতা ৷
আরও পড়ুন: জলপাইগুড়িতে উদ্ধারকার্য, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
বুধবার রাতে বিজয়া দশমী উপলক্ষে নিজের সোশ্যাল মিডিয়া অ্য়াকাউন্টে একটি কবিতা পোস্ট করেন রুদ্রনীল ৷ তিনি লেখেন,
"আজকে মায়ের বিদায় বেলা মন খারাপের দিন,
তবে মিটলে পুজো গুনবে দিদি বাড়ল কত ঋণ ৷
খেলা-মেলায় লোক ঠকিয়ে বেড়েছে বেশ বেলা,
তবু কষ্ট চেপে হাসিমুখে আজকে সিঁদুর খেলা ৷"
রুদ্রনীলের এই কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে সরকারের বিরুদ্ধে শ্লেষ ঝরে পড়েছে ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় থেকে অনুব্রত মণ্ডল, কেউ রেহাই পাননি তাঁর কটাক্ষ থেকে ৷ কবিতায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে রুদ্রনীল লিখেছেন,
"নাকতলাতে নাক কেটেছে, খোকন গেছেন জেলে ৷
শাঁখ দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়, কাজ হয় কি তেলে ?"
আর অনুব্রত মণ্ডলকে নিয়ে রুদ্রনীলের টিপ্পনি হল,
"ওদিকে বীরভূমের বীর হারিয়ে গেছে বাজেট গেছে কমে,
বিসর্জনের ব্যাঞ্জো তাসা বাজবে লো ভলিউমে ৷"
এখানেই শেষ নয় রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের কটাক্ষ করে রুদ্রনীল লেখেন,
"এবার অনেক নেতার পুজোয় ছিল একটু ছানা কাটা,
তাই চুরির টাকায় হয়নি লুচি কিংবা কচি পাঠা !
লোক ঠকানো প্যান্ডেলেতে কম ছিল ঝাড়বাতি,
ইডির ভয়ে মন্ত্রীর এবার পাঞ্জাবিটা পাতি ৷
এবার চড়াম চড়াম ঢাক বাজেনি, ঢ্যাং কুড়াকুড় হল,
কার ভয়েতে দুষ্টুরা সব লক্ষ্মী ছেলে, বল ?"
এরপর রুদ্রনীলের লেখায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে ৷ তিনি লিখেছেন,
"ভেবেছিলাম টাকার পাহাড়, চাকরি চুরি হলো না তো থিম !
আরে কয়লা দিয়ে প্যান্ডেলও তো হলো না ঘোড়ার ডিম !"
তাঁর আক্রমণ থেকে ছাড় পাননি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ মহালয়ার আগেই মমতার পুজো উদ্বোধন নিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমোকে কটাক্ষ করেছেন অভিনেতা ৷ লিখেছেন,
"সনাতন ধর্মের মানুষরা কী অপমান দেখলেন ? কী করলেন মাননীয়া ?
পিতৃপক্ষে উদ্বোধন মার-অপমান করে,
চললেন উমা সবটা দেখে হিসেব নেবেই পরে ৷
এদিকে বিদায়বেলায় কোলাকুলি, মিষ্টি, নিমকি, নাড়ু,
আমার রাজ্যে দেখল উমা দুয়ারজুড়ে দারু ৷"
নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকা চাকরিপ্রার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই অভিনেতা ৷ গান্ধি মূর্তির নিকটে আন্দোলনরত এই চাকরিপ্রার্থীদের সমর্থন করে তিনি লিখেছেন,
"ওদিকে নতুন জামা পায়নি যারা ধর্নামঞ্চে বসে,
ওদের চোখের জল মেপেছে দুর্গা দারুণ রোশে ৷
ওরা ভেবেছিল চাকরি পেলেই মায়ের জন্য শাড়ি,
বাবার জন্য জামা কিনে ফিরবে সবাই বাড়ি ৷
কেউ ফেরেনি বাড়ি ওরা, দেখেইনি অঞ্জলি ৷
এই পুজোতে খালি পেটে শিক্ষা হল বলি ৷
মাগো বাংলা আবার বাঁচতে তো চায়, চাইছি সবাই ক্ষমা,
সব অসুরের চাইছি নিধন, আবার এসো উমা ৷"
এর আগেও বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে নিজের লেখা কবিতা ব্যবহার করেছেন রুদ্রনীল । এবার আবার কলম ধরলেন তিনি ৷