কলকাতা, 7 মে : শহর ও শহরতলীতে দূষণের মাত্রা যেভাবে বেড়ে চলেছে তাতে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনের কপালে । তাই এবার 15 বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়িগুলিকে বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর । এরপর ব্যক্তিগত গাড়িগুলি বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে ৷ সেই মতোই 15 বছরের বেশি বয়স হয়ে যাওয়া গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে (Public Vehicle Department sending notice to private bus operators) ।
ইতিমধ্যে পাবলিক ভেহিকেলস ডিপার্টমেন্টের (PVD) তরফে মালিকদের নোটিশ পাঠানো শুরু হয়েছে । তবে বেসরকারি বাস মালিকপক্ষের মতে, এর ফলে বেসরকারি বাসের অভাব দেখা দেবে পথে । সমস্যায় পড়বেন নিত্যযাত্রীরা । চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকেই বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে জানা গিয়েছে, চলবে 2023 পর্যন্ত । এই সময়ের মধ্যে স্ক্র্যাপ বা কাটাই হয়ে যাবে হাজার হাজার বেসরকারি বাস, মিনিবাস, অটো, টাক্সি-সহ বহু ব্যাক্তিগত গাড়িও ।
শহর ও শহরতলীতে বায়ু দূষণ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া । এই নিয়ে বারেবারে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনালের তরফে 15 বছরের পুরনো গাড়ির বাতিলের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । পিভিডি-র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে আগামী বেশ কয়েকমাসের মধ্যে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মিলিয়ে বাতিল হয়ে যাবে প্রায় 500-র কাছাকাছি বাস । পাশাপাশি অটোর সংখ্যা হল প্রায় 1000 এবং ট্যাক্সি সংখ্যা 1000 থেকে 2000-এর মধ্যে । যদিও 2024 এর মধ্যে এই সংখ্যাগুলি আরও বেড়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে ।
আরও পড়ুন : Firhad Slams BJP : যুব নেতার মৃত্যু নিয়ে নাটক করছে বিজেপি, অভিযোগ ফিরহাদের
পিভিডি-র এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক সাফ ভাষায় জানিয়ে দেন, এবার আর রেয়াদ করা হবে না । কলকাতা পৌরসভা এরিয়ার মধ্যে 15 বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি চলবে না । সেগুলিকে চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই নোটিশ পাঠানো শুরু হয়েছে । এমনকি যাঁরা সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস ও পারমিট নবীকরণ করেননি তাঁদেরকে চিঠি পাঠানো হচ্ছে । কোনভাবেই আর 15 বছরের উপরের গাড়ি পথে চলবে না, সেই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে রাজ্য পরিবহণ দফতর ।
এরপরেই মাথায় হাত পড়েছে বেসরকারি বাস ও মিনিবাস মালিকদের । এই বিষয় অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "গত দু'বছরের অতিমারির জন্য বেসরকারি বাস মালিকদের একেবারে কোমর ভেঙে গিয়েছে । এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পেট্রল-ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি । পাশাপাশি যন্ত্রাংশের দাম দিনেদিনে বেড়েই চলেছে । তাই পুরনো বাস বাতিল হয়ে গেলে তার পরিবর্তে নতুন বাস কেনার মত সামর্থ্য বেসরকারি বাস মালিকদের আর নেই । একটি নতুন বাস কিনতে গেলে প্রথমেই যে এককালীন ডাউনপেমেন্ট করতে হয় সেই টাকাও এখন আমাদের কাছে নেই । এছাড়াও রয়েছে মাসে মাসে কিস্তি । প্রতিদিনই পুরনো গাড়ি কাটাই হচ্ছে । তাই সমস্ত রুটেই বেসরকারি বাস অপ্রতুল । এর ফলে ব্যবসা চালিয়ে যেতে কিছু অসাধু মানুষজন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছে । অন্যদিকে বাকিরা গাড়ি বসিয়ে দিচ্ছে । প্রত্যেকটি রুটে এখন বাসের অভাব দেখা দিয়েছে । সদ ইচ্ছা থাকলেও বেসরকারি বাস মালিকরা আর নতুন গাড়ি কিনতে পারছেন না ।"
তিনি আরও বলেন, "ডিজেল ও পেট্রলের অত্যাধিক মূল্য বৃদ্ধির জন্য রাজ্য পরিবহণ দফতর বারেবারে সিএনজি যানবাহনের কথা বলছে । তবে তার পরিকাঠামো এখনও আমাদের শহরে নেই । হাতে গোনা কয়েকটি পাম্প রয়েছে । নতুন সিএনজি বাস বা নতুন ডিজেল বাস কিনতে হলে সরকারকে বেসরকারি বাস মালিকদের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে । তা যদি না হয় তাহলে আমাদের পক্ষে আপাতত নতুন গাড়ি কেনা সম্ভব নয় । ফলে রাস্তায় রুটে রুটে অপ্রতুলতা দেখা দিচ্ছে । 2023- 24 সালে গিয়ে এই অভাব প্রকটভাবে দেখা দেবে বলে আমার মনে হয় ।"
আরও পড়ুন : Post Poll Violence Case : 'ভোট পরবর্তী হিংসা' মামলায় হাজিরার জন্য অনুব্রতকে সময় দিতে চায় সিবিআই
জয়েন কাউন্সিল অফ বার সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "শহর ও শহরতলীরকে দূষণমুক্ত করার জন্য 2009 সাল থেকে এই নিয়ম চালু হয় । রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় এখনও অনেক পুরনো গাড়ি চলে তবে শহরের প্রাণকেন্দ্রকে দূষণমুক্ত রাখতে এবার কোমর বেঁধেছে রাজ্য পরিবহণ দফতর । প্রতিদিনই পুরনো গাড়ি বাতিল হচ্ছে । এভাবে 2023-24 সালের মধ্যে হাজার হাজার বাস ও মিনিবাস বাতিল হয়ে যাবে । তবে যে গাড়িগুলো বাতিল হচ্ছে তার জায়গায় নতুন গাড়ি আনতে গেলে প্রয়োজন এককালীন অনেক টাকা । সেরকম আর্থিক জোর আর এখন অনেককেই নেই । তবুও অনেক চেষ্টা করলে হয়ত একজন মালিক একটি বাস কিনে উঠতে পারবেন, কিন্তু তাঁর পক্ষে একাধিক বাস কেনা সম্ভব হবে না । এর ফলে আগামী বছর থেকে অভাব দেখা দেবে বাসের । যাত্রীদের ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেবে । ইতিমধ্যেই মালিকরা সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস করাতে পারেননি বলে বাস বসিয়ে দিয়েছেন । একাধিক রুটে কমেছে বাস ।"