কলকাতা, 18 অগস্ট: প্রয়াত বাঙালি গবেষকের স্বপ্ন পূরণ করলেন তাঁরই আটজন সহকারী ৷ সেই দলে রয়েছেন প্রয়াত গবেষকের মেয়েও ৷ যাঁকে এত কথা, তাঁর নাম ড. অসীমা চট্টোপাধ্যায় ৷ গবেষণামূলক বিভিন্ন কাজের জন্য পদ্মভূষণ সম্মান পেয়েছিলেন তিনি ৷ সোরিয়াসিস (Psoriasis) নামে একটি ভয়াবহ চামড়ার অসুখ (Skin Disease) থেকে মানুষকে রক্ষা করতে একটি আয়ুর্বেদিক তেল (Ayurvedic Oil) আবিষ্কার করেছিলেন অসীমা ৷ সেই তেল ছিল অব্যর্থ ৷ অথচ, সেটিকে সর্বজনীন করে যেতে পারেননি ড. অসীমা চট্টোপাধ্য়ায় ৷ বাকি ছিল শেষ পর্যায়ের কিছু গবেষণা এবং সেটিকে বাজারজাত করার যাবতীয় প্রক্রিয়া ৷ অসীমার অবর্তমানে সেই কাজের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন তাঁরই মেয়ে, পেশায় চিকিৎসক জুলি বন্দ্যোপাধ্য়ায় ৷ মোট আটজন চিকিৎসক-গবেষকের দল অবশেষে সেই ওষুধটি সকলের ব্যবহারের জন্য খোলা বাজারে আনার কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন ৷
2004 সাল থেকে অসীমা সরেন আয়ুর্বেদিক তেল-এর কাজ শুরু হয়েছিল ৷ সেই প্রক্রিয়ার অন্যতম সদস্য ছিলেন কেন্দ্রীয় আয়ুর্বেদ গবেষণা সংস্থার (Central Research Institute of Ayurveda) প্রাক্তন সহ-অধিকর্তা শুভ্রা মণ্ডল ৷ তিনি জানান, 2006 সালে ড. চট্টোপাধ্য়ায়ের মৃত্যু হয় ৷ পরবর্তীতে তাঁর মেয়ে জুলি বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের নেতৃত্বে তেল বাজারে আনার শেষ কাজটুকু সম্পন্ন করা হয় ৷ শুভ্রা জানিয়েছেন, এই ওষুধ ব্যবহার করা অত্যন্ত সহজ ৷ ত্বকের আক্রান্ত অংশটুকু ভালো করে আগে পরিষ্কার নিতে হয় ৷ তারপর সেখানেই মালিশ করতে হয় অসীমা সরেন আয়ুর্বেদিক তেল ৷ টানা বেশ কিছুদিন এই প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলেই সম্পূর্ণ সেরে যায় সোরিয়াসিস ৷
আরও পড়ুন: Anita Bose Pfaff সংরক্ষিত চিতাভস্মের ডিএনএ পরীক্ষায় ভারত ও জাপান সরকারের দ্বারস্থ হবেন নেতাজি কন্যা
গবেষকদের এই তথ্যকে সমর্থন করেছেন ভ্যাকসিন ট্রায়াল ফেসিলেটর স্নেহেন্দু কোনার ৷ তিনি জানিয়েছেন, সোরিয়াসিস অত্যন্ত বেয়াড়া একটি অসুখ ৷ একবার এর কবলে পড়লে প্রচলিত চিকিৎসায় সম্পূর্ণভাবে রোগমুক্তি কার্যত অসম্ভব ! কিন্তু, সেই তথাকথিত অসম্ভবই সম্ভব করে দেখিয়েছে অসীমা সরেন আয়ুর্বেদিক তেল ৷ ইতিমধ্যেই যাঁদের উপর এই তেল প্রয়োগ করা হয়েছে, তাঁরা সকলেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৷
এমনই একজন সুস্থ হয়ে ওঠা রোগী হলেন গিরিধর বালি ৷ তিনি জানিয়েছেন, সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মাথার প্রায় সমস্ত চুল উঠে যাওয়ার জোগাড় হয়েছিল ৷ কিন্তু অসীমা সরেন আয়ুর্বেদিক তেল ব্যবহার করে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৷ নিজের অভিজ্ঞতা বিস্তারিতভাবে ইটিভি ভারতের কাছে তুলে ধরেছেন তিনি ৷ গিরিধর জানিয়েছেন, তাঁর মাথায় সোরিয়াসিস হয়েছিল ৷ সেই সময় খুব কষ্ট পেতেন তিনি ৷ ড. চট্টোপাধ্য়ায়ের আবিষ্কার তাঁকে সেই কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছে ৷
প্রসঙ্গত, সোরিয়াসিসে আক্রান্ত হলে রোগীর চামড়ায় প্রবল চুলকানি হয় ৷ আক্রান্ত অংশটুকু শুকিয়ে আঁশের মতো হয়ে যায় ৷ চিকিৎসকরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ কমে গেলেই চামড়ার এই অসুখ হয় ৷ সংক্রমণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং ঠান্ডাও এই অসুখের অন্যতম কারণ ৷ প্রাথমিকভাবে চামড়ায় শুধুমাত্র 'ব়্যাশ' বের হয় ৷ পরে তা বাড়তে শুরু করে ৷ পরে সেই অংশের চামড়া শুকিয়ে যায় ৷