কলকাতা, 24 মে: আমফানের তাণ্ডবে তছনছ হয়েছে কলকাতা, দুই 24 পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুর সহ একাধিক জেলা। ঘূর্ণিঝড়ের রোষে অনেকেই হারিয়েছেন মাথার উপরের ছাদ, হারিয়েছেন উপার্জনের পথও। আমফানের জেরে এমন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠনের (JUTA) তরফ থেকে অর্থ সংগ্রহের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের টিউশন ফি ও হস্টেল ফি এক বছরের জন্য মকুব করা হোক। অধ্যাপকদের পাশাপাশি ছাত্র সংগঠনগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত সহপাঠীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। কোন কোন পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাঁদেরও খুঁজে বের করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছেন তাঁরা।
JUTA-র তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রথমত, তাঁদের তরফে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের সাহায্যের জন্য অর্থ সংগ্রহের ডাক দেওয়া হয়েছে। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে ইতিমধ্যে অধ্যাপক-অধ্যাপিকারা নিজেদের সাধ্যমতো অনুদান দেওয়া শুরু করেছেন। কোন কোন পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জোগাড় করছেন তাঁরা। এই বিষয়ে ছাত্র সংগঠনগুলির কাছেও সাহায্য চাওয়া হয়েছে JUTA-র তরফে।
এই প্রসঙ্গে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "আমরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক সাহায্য করব। তার জন্য JUTA থেকে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছি। অর্থ সংগ্রহ করে আমরা তা তাঁদেরকে পাঠাব। কিছু পড়ুয়া নিজেরাই শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। আমরা যতটা সম্ভব, যেভাবে সম্ভব তাঁদের সাহায্য করব।"
শুধু নিজেদের তরফ থেকে আর্থিক সাহায্যই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পড়ুয়াদের সাহায্যের জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও আবেদন জানিয়েছে JUTA। JUTA-র তরফে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের ফি মকুবের আবেদন জানিয়ে উপাচার্য সুরঞ্জন দাশকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই বিষয়ে পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, "আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে আবেদন করেছি, ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়াদের থেকে যেন আগামী এক বছরের টিউশন ফি ও হস্টেল ফি না নেওয়া হয়।"
অধ্যাপক মহলের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সহপাঠীদের পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে এসেছে ছাত্র সংগঠনগুলিও। কোরোনা আবহে চলা লকডাউনে দুঃস্থ সহপাঠীদের সাহায্য করার জন্য 'নিড হেল্প' ব্যানারে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছিল আর্টস ফ্যাকাল্টি স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (AFSU)। সংগৃহীত অর্থ থেকে ধাপে ধাপে 200-র উপর পড়ুয়াদের অর্থ সাহায্য করেছেন তাঁরা। এবার লকডাউনের দুঃস্থদের সঙ্গে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদেরও 'নিড হেল্প' ব্যানারে সাহায্য করার উদ্যোগ নিয়েছে AFSU।
AFSU-র সভানেত্রী তীর্ণা ভট্টাচার্য বলেন, "নিড হেল্প করছিলাম লকডাউনের জন্য। ওই ব্যানারেই এবার আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের উপর ফোকাস করব। JUTA-ও উদ্যোগ নিয়েছে। তাঁদের তরফে আমাদের কাছে তথ্য চাওয়া হচ্ছে, কারা কারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানতে। এভাবে শিক্ষকরাও আমাদের পাশে আছেন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফেও যদি সাহায্যের আবেদন করা হয় তাহলে তাতে অনেক বেশি সাড়া পাওয়া যাবে শিক্ষক, কর্মচারী, পড়ুয়া, প্রাক্তনী সহ সবার কাছ থেকেই। এই বিষয়ে AFSU-র তরফে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।"
তবে, কত পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার সার্বিক চিত্র এখনও পাওয়া যায়নি বলেই জানাচ্ছেন তীর্ণা ভট্টাচার্য। যেহেতু নেটওয়ার্ক সমস্যা রয়েছে। তীর্ণা ভট্টাচার্য বলেন, "প্রচুর পড়ুয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আমাদের কাছে এখনও পর্যন্ত এক একটা ক্লাস থেকে চার-পাঁচজন করে ক্ষতিগ্রস্ত পড়ুয়ার খবর আসছে। বেশিরভাগ পড়ুয়াদের বাড়ির অ্যাডবেস্টার, টিনের চাল উড়ে গেছে। মাটির বাড়ি ভেঙে গেছে। বাথরুম ভেঙে গেছে। দুই 24 পরগণা, বিশেষত, দক্ষিণ 24 পরগণার খুব খারাপ অবস্থা। কিন্তু, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে আমরা এখনও সবার সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি।"