ETV Bharat / city

ভর্তুকি বা ভাড়া বৃদ্ধি, নইলে চলবে না বাস, সাফ ঘোষণা মালিকদের

author img

By

Published : May 16, 2020, 9:33 PM IST

লকডাউনের মাঝেই ধীরে ধীরে চালু করা হচ্ছে পরিবহন ব্যবস্থা ৷ তবে বেসরকারি বাস মালিকরা তিনগুণ ভাড়া বৃদ্ধির দাবি করা হয় ৷ আজ পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানান বেসরকারি ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো যাবে না ৷ এরপরই বাস মালিকরা ভর্তুকি অথবা ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সরব হন ৷

private bus
বেসরকারি বাস

কলকাতা, 16 মে: ভাড়া বৃদ্ধি করতে দেওয়া হোক অথবা ভর্তুকি দেওয়া হোক, তবেই বাস চালানো সম্ভব-সাফ জানিয়ে দিল বাস মালিকেরা ৷ আজ নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বেসরকারি ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো যাবে না । পরিবহনমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই বাস মালিকরাও তাঁদের দাবি তুলে ধরলেন ৷

জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, "ভাড়া না বাড়ানো হলে আমাদের পক্ষে পথে বাস নামানো অসম্ভব । এমনিতেই লকডাউনের কারণে যাত্রী না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তার উপর যদি আগের ভাড়াতেই বাস চালাতে হয় তাহলে সারাদিনের জ্বালানি খরচই উঠবে না । বেসরকারি পরিবহন শিল্পে এমনিতেই দুর্ভোগ চলছে । আজ গণপরিবহন শিল্পকে শেষ করে দিতে কফিনে শেষ পেরেকটিও পোতা হয়ে গেল । লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে গণপরিবহন শিল্পের সঙ্গে । সরকারের এই বার্তা কার্যত মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল । এই সিদ্ধান্তই যদি নেওয়ার ছিল, তাহলে পরিবহনমন্ত্রী 13 মে সমস্ত বাস সংগঠনগুলির সঙ্গে কেন বৈঠক করলেন? তিনি বাস সংগঠনগুলিকে কেন ভাড়া ঠিক করতে বললেন? 1975 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত যতবার ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে, সংগঠনগুলি তাদের প্রস্তাবিত ভাড়ার তালিকা সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন । সবকটি তালিকা বিচার করে তবেই ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে । এইক্ষেত্রে সরকার সেই ভূমিকাটি কেন পালন করতে পারলো না? এটা সরকারের ব্যর্থতা । যেখানে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে কোনও সমতা থাকছে না, সেই পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষে রাস্তায় গাড়ি নামানো সম্ভব নয় ।’’

সাংবাদিক বৈঠকে আজ পরিবহন মন্ত্রী বলেন যে, ‘‘ভাড়া না বাড়ালেও বেসরকারি বাস মালিকদের অন্যান্য সব রকম সহায়তা করতে সরকার প্রস্তুত । সরকারের তরফে কাউকে চাপ দেওয়া হবে না । তবে বেসরকারি বাস পথে না নামলে সেক্ষেত্রে যে ঘাটতি তৈরি হবে, তা সরকারি বাস দিয়ে পুষিয়ে দেওয়া হবে ।’’ এই বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ডঃ পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন যে, ‘‘গণপরিবহনের শিরদাঁড়াই হল বেসরকারি বাস পরিষেবা । কারণ পরিবহন ব্যবস্থাতে প্রায় 10 থেকে 12% অংশ জুড়ে থাকে সরকারি বাস এবং বাকি 90%-ই বেসরকারি বাস । একদিকে যেমন এই সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ বাসযাত্রীদের ওপর যে বাড়তি ভাড়ার চাপ কমল, অন্যদিকে একটা সমস্যা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে ৷ মোট পরিবহন চাহিদার কেবল 10% পূরণ করে সরকারি বাস ৷ বর্তমানে যাত্রীসংখ্যা কম হওয়ায় কেবল সরকারি বাস চালিয়েই যাত্রী পরিবহন সম্ভব হলেও পরবর্তী সময়ে যখন লকডাউন শিথিল করা হবে, তখন ক্রমবর্ধমান যাত্রী সংখ্যা কীভাবে সামাল দেবে সরকার? যাত্রী সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসের সংখ্যা না বাড়লে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে উঠবে ৷ বেসরকারি বাসচালকদের এখন যেহেতু ভাড়া বাড়াতে দেওয়া হল না, পরবর্তী সময়ে যদি তারা বাস চালাতে অস্বীকার করেন, তখনই বা কী করবে সরকার? শুধুমাত্র সরকারি বাস চালিয়ে কলকাতার যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব নয়, প্রয়োজন রয়েছে বেসরকারি বাস ও অটোরও ৷

ওয়েস্টবেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বোস বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গণপরিবহনের কথা মাথায় রেখে কোনও প্যাকেজ দিতে হবে, নয়তো রাজ্য সরকারকে রেশন কার্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিপো থেকে জ্বালানি দিতে হবে । তবেই পথে বাস নামানো সম্ভব ।’’ অন্যদিকে অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন যে, ‘‘তড়িঘড়ি প্রস্তাবিত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ না করে যদি আমরা সব দিক ভালো করে একবার বিবেচনা করে নিতাম, যেমন পরিষেবা চালু করতে বলা হলেও কতগুলি বাস দিতে পারব বা কত জন যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারব এবং লকডাউনের চতুর্থ পর্যায়ে অন্যান্য অফিসও খুলছে কি না সহ আরও অন্যান্য বিষয়গুলি সম্পর্কে জেনে তারপর ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ঠিক করা হত, তাহলে ভালো হত ৷ সেসব কিছু বিবেচনা না করেই প্রস্তাবিত ভাড়ার তালিকা ঘোষণা করা হল । আমরা সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে নিজেদের সচেতনতার পরিচয় দিতে পারেনি । এরফলে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, সেই দায়ভার শুধু সরকারের উপরে চাপিয়ে দিলে হবে না, আমাদেরকেও তার দায়ভার নিতে হবে । তবুও আমরা আশা করব যেন দ্রুত এই জটিলতার অবসান ঘটে এবং নিশ্চিতভাবে সরকার যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি করার বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন ।’’

2014 সালের পর 2018 সালের 8 জুন শহরে 1 টাকা ও রাজ্যে প্রতি কিলো মিটারে 10 পয়সা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় । সেই নতুন ভাড়া কার্যকরী হয় 11 জুন থেকে । এরপর লকডাউনের মাঝে পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার কথা বললে একধাক্কায় তিনগুণ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বেসরকারি বাস মালিকরা ৷

কলকাতা, 16 মে: ভাড়া বৃদ্ধি করতে দেওয়া হোক অথবা ভর্তুকি দেওয়া হোক, তবেই বাস চালানো সম্ভব-সাফ জানিয়ে দিল বাস মালিকেরা ৷ আজ নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, বেসরকারি ও মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো যাবে না । পরিবহনমন্ত্রীর এই ঘোষণার পরই বাস মালিকরাও তাঁদের দাবি তুলে ধরলেন ৷

জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যয় বলেন, "ভাড়া না বাড়ানো হলে আমাদের পক্ষে পথে বাস নামানো অসম্ভব । এমনিতেই লকডাউনের কারণে যাত্রী না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি, তার উপর যদি আগের ভাড়াতেই বাস চালাতে হয় তাহলে সারাদিনের জ্বালানি খরচই উঠবে না । বেসরকারি পরিবহন শিল্পে এমনিতেই দুর্ভোগ চলছে । আজ গণপরিবহন শিল্পকে শেষ করে দিতে কফিনে শেষ পেরেকটিও পোতা হয়ে গেল । লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে রয়েছে গণপরিবহন শিল্পের সঙ্গে । সরকারের এই বার্তা কার্যত মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিল । এই সিদ্ধান্তই যদি নেওয়ার ছিল, তাহলে পরিবহনমন্ত্রী 13 মে সমস্ত বাস সংগঠনগুলির সঙ্গে কেন বৈঠক করলেন? তিনি বাস সংগঠনগুলিকে কেন ভাড়া ঠিক করতে বললেন? 1975 সাল থেকে এখনও পর্যন্ত যতবার ভাড়া বৃদ্ধি হয়েছে, সংগঠনগুলি তাদের প্রস্তাবিত ভাড়ার তালিকা সরকারের কাছে জমা দিয়েছেন । সবকটি তালিকা বিচার করে তবেই ভাড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে । এইক্ষেত্রে সরকার সেই ভূমিকাটি কেন পালন করতে পারলো না? এটা সরকারের ব্যর্থতা । যেখানে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে কোনও সমতা থাকছে না, সেই পরিস্থিতিতে আমাদের পক্ষে রাস্তায় গাড়ি নামানো সম্ভব নয় ।’’

সাংবাদিক বৈঠকে আজ পরিবহন মন্ত্রী বলেন যে, ‘‘ভাড়া না বাড়ালেও বেসরকারি বাস মালিকদের অন্যান্য সব রকম সহায়তা করতে সরকার প্রস্তুত । সরকারের তরফে কাউকে চাপ দেওয়া হবে না । তবে বেসরকারি বাস পথে না নামলে সেক্ষেত্রে যে ঘাটতি তৈরি হবে, তা সরকারি বাস দিয়ে পুষিয়ে দেওয়া হবে ।’’ এই বিষয়ে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ডঃ পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন যে, ‘‘গণপরিবহনের শিরদাঁড়াই হল বেসরকারি বাস পরিষেবা । কারণ পরিবহন ব্যবস্থাতে প্রায় 10 থেকে 12% অংশ জুড়ে থাকে সরকারি বাস এবং বাকি 90%-ই বেসরকারি বাস । একদিকে যেমন এই সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ বাসযাত্রীদের ওপর যে বাড়তি ভাড়ার চাপ কমল, অন্যদিকে একটা সমস্যা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে ৷ মোট পরিবহন চাহিদার কেবল 10% পূরণ করে সরকারি বাস ৷ বর্তমানে যাত্রীসংখ্যা কম হওয়ায় কেবল সরকারি বাস চালিয়েই যাত্রী পরিবহন সম্ভব হলেও পরবর্তী সময়ে যখন লকডাউন শিথিল করা হবে, তখন ক্রমবর্ধমান যাত্রী সংখ্যা কীভাবে সামাল দেবে সরকার? যাত্রী সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাসের সংখ্যা না বাড়লে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে উঠবে ৷ বেসরকারি বাসচালকদের এখন যেহেতু ভাড়া বাড়াতে দেওয়া হল না, পরবর্তী সময়ে যদি তারা বাস চালাতে অস্বীকার করেন, তখনই বা কী করবে সরকার? শুধুমাত্র সরকারি বাস চালিয়ে কলকাতার যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব নয়, প্রয়োজন রয়েছে বেসরকারি বাস ও অটোরও ৷

ওয়েস্টবেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপ নারায়ণ বোস বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে গণপরিবহনের কথা মাথায় রেখে কোনও প্যাকেজ দিতে হবে, নয়তো রাজ্য সরকারকে রেশন কার্ড ব্যবস্থার মাধ্যমে ডিপো থেকে জ্বালানি দিতে হবে । তবেই পথে বাস নামানো সম্ভব ।’’ অন্যদিকে অল বেঙ্গল বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন যে, ‘‘তড়িঘড়ি প্রস্তাবিত ভাড়ার তালিকা প্রকাশ না করে যদি আমরা সব দিক ভালো করে একবার বিবেচনা করে নিতাম, যেমন পরিষেবা চালু করতে বলা হলেও কতগুলি বাস দিতে পারব বা কত জন যাত্রীকে পরিষেবা দিতে পারব এবং লকডাউনের চতুর্থ পর্যায়ে অন্যান্য অফিসও খুলছে কি না সহ আরও অন্যান্য বিষয়গুলি সম্পর্কে জেনে তারপর ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি ঠিক করা হত, তাহলে ভালো হত ৷ সেসব কিছু বিবেচনা না করেই প্রস্তাবিত ভাড়ার তালিকা ঘোষণা করা হল । আমরা সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে নিজেদের সচেতনতার পরিচয় দিতে পারেনি । এরফলে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে, সেই দায়ভার শুধু সরকারের উপরে চাপিয়ে দিলে হবে না, আমাদেরকেও তার দায়ভার নিতে হবে । তবুও আমরা আশা করব যেন দ্রুত এই জটিলতার অবসান ঘটে এবং নিশ্চিতভাবে সরকার যাত্রী পরিষেবা দেওয়ার মতো একটি পরিস্থিতি তৈরি করার বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন ।’’

2014 সালের পর 2018 সালের 8 জুন শহরে 1 টাকা ও রাজ্যে প্রতি কিলো মিটারে 10 পয়সা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় । সেই নতুন ভাড়া কার্যকরী হয় 11 জুন থেকে । এরপর লকডাউনের মাঝে পরিবহন ব্যবস্থা চালু করার কথা বললে একধাক্কায় তিনগুণ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল বেসরকারি বাস মালিকরা ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.