কলকাতা, 9 সেপ্টেম্বর : সিদ্ধিদাতার আশীর্বাদে ভালই লক্ষ্মীলাভ হচ্ছে কুমোরটুলির ৷ করোনা আর লকডাউনের গুঁতোয় যখন কমছে দুর্গাপুজোর বাজেট, ঠিক তখনই উন্মাদনা বাড়ছে গণেশপুজো নিয়ে ৷ কুমোরটুলির হিসাবই বলে দিচ্ছে, গত কয়েক বছরে গণেশপুজোয় ঝোঁক বেড়েছে আমবাঙালির ৷ তাই বেড়েছে মূর্তির চাহিদাও ৷ আর সেই চাহিদার জোগান দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা ৷ কথায় কথায় তাঁরা জানালেন, আগে কেবলমাত্র হিন্দিভাষীরাই প্রতিমার বরাত দিতেন বা প্রতিমা কিনে নিয়ে যেতেন ৷ কিন্তু গত কয়েক বছর সংখ্যায় বাড়ছেন বাঙালি ক্রেতারা ৷ ঘরে ঘরে শুরু হয়েছে গণেশের আরাধনা ৷ একইসঙ্গে, পাড়ায়-পাড়ায়, অলিতে-গলিতেও বাড়ছে বারোয়ারি গণেশ পুজোর সংখ্যা ৷ ফলে ছোট আকারের মূর্তির পাশপাপাশি গণেশের বড় বড় প্রতিমা তৈরিরও বরাত পাচ্ছেন শিল্পীরা ৷
কুমোরটুলি ঘুরে যে তথ্য হাতে এল, তা বলছে, গত বছর যে পরিমাণ গণেশ প্রতিমা তৈরি করেছিলেন মৃৎশিল্পীরা, এবার তৈরি করেছেন তার দ্বিগুণেরও বেশি ৷ লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়েছে বড় প্রতিমার চাহিদাও ৷ এবার 12 থেকে 14 ফুটের বেশ কয়েকটি গণেশ মূর্তি তৈরি করেছেন শিল্পীরা ৷ ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার গণেশের প্রতিমা তৈরি হয়েছে শুধুমাত্র উত্তর কলকাতার কুমোরটুলিতেই ৷ স্থানীয় এক মৃৎশিল্পী জানিয়েছেন, গত বছর 200 প্রতিমা তৈরি করেছিলেন তিনি ৷ এ বছর চাহিদা বেশি থাকায় তৈরি করেছেন 500টি গণেশ প্রতিমা ৷ বিকিকিনি বাড়ায় খুশি শিল্পীরা ৷ তাঁদের বক্তব্য, করোনা আবহে দুর্গাপুজোর আয়োজনে কাটছাঁট করতে হয়েছে উদ্যোক্তাদের ৷ ফলে আয় কমেছে কুমোরটুলিরও ৷ সেই ঘাটতি কিছুটা হলেও সামাল দিয়েছেন সিদ্ধিদাতা গজানন ৷
গণেশ চতুর্থীর একদিন আগে কলকাতার কুমোরটুলিতে ভিড় ছিল ভালোই ৷ করোনা আবহে মুখে মাস্ক বেঁধেই ঠাকুর কিনতে এসেছিলেন বহু মানুষ ৷ ক্রেতারা মনে করছেন, করোনাই পরোক্ষে গণেশ পুজোর ইচ্ছা বাড়িয়েছে আমবাঙালির মনে ৷ কিন্তু কেন এই মানসিকতা ? অনেকের মতে, বাঙালি হিন্দুরা যে কারণে লক্ষ্মীপুজো করেন, সেই একই কারণে গণেশপুজোও শুরু করেছেন তাঁরা ৷ করোনা আবহে কাজ হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ ৷ কমেছে রোজগার ৷ অনেকেরই বিশ্বাস, সিদ্ধিদাতার আরাধনা করলে ঘুচবে অভাব ৷ সদয় হবেন ধনদেবী ৷ এই বিশ্বাস থেকেই অনেকে বাড়িতে গণেশপুজো শুরু করেছেন ৷
আরও পড়ুন : London Durga Puja : ফের মিলছে প্রবাসের বরাত, ছন্দে ফিরছে কুমোরটুলি
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর শহরে সর্বজনীন গণেশ পুজোর সংখ্যা ছিল হাজার দু’য়েক ৷ আর এ বছর এখনও পর্যন্ত অনলাইনে সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি পুজোর আবেদন জমা পড়েছে ৷ এই তথ্য থেকেই স্পষ্ট, দেবীর দুর্গার রাজ্যে ক্রমশ ভক্ত বাড়ছে তাঁর সন্তানের !