কলকাতা, 17 ডিসেম্বর : শুভেন্দু অধিকারী । রাজ্য রাজনীতির শিরোনামে এখন শুধুই তিনি । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী । কিন্তু হঠাৎ তাল কাটল । বেসুরো হলেন পূর্ব মেদিনীপুরের দাপুটে নেতা । দলের সঙ্গে দূরত্ব । শেষে একেবারে সব সম্পর্ক ছিন্ন করে বেরিয়ে এলেন । খুলে রাখলেন সবুজ জার্সি । গেরুয়া জামা গায়ে দেবেন কি না তাও আর দিন দুয়েকের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন রাজ্য রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা । এখনও পর্যন্ত কেমন ছিল শুভেন্দুবাবুর রাজনৈতিক জীবন ?
জন্ম 1970 সালের 15 ডিসেম্বর । 1990 সালে প্রথম কলেজ রাজনীতিতে হাতেখড়ি । 1995 সালে প্রথমবার ভোটে লড়েন । কংগ্রেসের পতাকায় পৌরসভা ভোটে জয়ী হন । 8 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন । এরপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে আলাদা হয় নিজের দল গঠন করেন । তৃণমূল কংগ্রেস । একেবারে শুরু থেকে না হলেও দল গঠনের কিছুদিন পরপরই তৃণমূলে যোগ দেন । সেক্ষেত্রে বলা যেতেই পারে, তৃণমূলের প্রায় জন্মলগ্ন তিনি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সৈনিক । 2000 সালে প্রথমবার ঘাসফুলের জার্সি গায়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা । কাঁথি পৌরসভার কাউন্সিলর । 2009 সাল পর্যন্ত টানা কাউন্সিলর ছিলেন তিনি ।
কাউন্সিলর থাকাকালীন 2001 সালে মুগবেড়িয়া বিধানসভা কেন্দ্রে কিরণময় নন্দের বিরুদ্ধে ভোটে লড়েন । তবে জিততে পারেননি । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভরসা রেখেছিলেন শুভেন্দুর উপর । 2004 সালে তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করেন শুভেন্দুকে । বিপক্ষে তখন লক্ষ্মণ শেঠ । আবারও হার । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসা তখনও শুভেন্দু । 2006 সালে দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা এলাকায় প্রথম বার তৃণমূলের টিকিটে নির্বাচিত হয়ে বিধায়ক হন । সঙ্গে কাঁথি পৌরসভার পৌরপিতার আসনে বসেন । এরপর আর ঘুরে তাকাতে হয়নি শুভেন্দুকে ।
এরই মধ্যে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম নিয়ে তখন উত্তাল রাজ্য রাজনীতি । আর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে তখন মমতার বিশ্বস্ত সৈনিক শুভেন্দু । এই নন্দীগ্রাম আন্দোলনই যে শুভেন্দুকে প্রথমবার রাজ্য রাজনীতির লাইম লাইটে নিয়ে এসেছিল তা বললে খুব একটা ভুল বলা হবে না ।
2009 সালে তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে প্রথমবার সাংসদ হন । পরে বিধায়ক পদ ও পৌরপিতার আসন ছেড়ে দেন । এরপর, 2014 সালে আবার তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।
আরও পড়ুন : তৃণমূল ছাড়লেন শুভেন্দু
মমতা এবার দু'বারের সাংসদ শুভেন্দুকে ফিরিয়ে আনেন রাজ্যে । 2016 সালে নন্দীগ্রামের বিধায়ক । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের মন্ত্রিত্বের ভার সামলান । কয়েকমাস আগে থেকে তাল কাটে । বেসুরো গাইতে শুরু করেন শুভেন্দু । কিছুদিন আগে একটি সভায় মন্তব্য করেছিলেন, তিনি লিফটে করেও উপরে উঠেননি । আর প্যারাসুটেও নামেননি । তাঁর সেই মন্তব্য প্রকাশ্য সমালোচনা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন, তৃণমূল যুবর সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে আসাটা ভালো ভাবে নেননি শুভেন্দু অধিকারী ।
2020 সালের 27 নভেম্বর তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের একাধিক মন্ত্রী পথ থেকে ইস্তফা দেন । 16 ডিসেম্বর তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন । আর আজ তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্যপদ ছাড়েন । সূত্রের খবর, দিন দুয়েকের মধ্যে বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন তিনি ।