কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর : মাসখানেকের ব্যবধান । গতমাসে ক্রাইম কনফারেন্সে কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা বার্তা দিয়েছিলেন, পুলিশকর্মীদের অপরাধে জড়িয়ে পড়া বরদাস্ত করা হবে না । ওইদিনই অপহরণ এবং ডাকাতিতে অভিযুক্ত এক ASI এবং এক কনস্টেবলকে আদালতের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন অনুজ শর্মা । মুচিপাড়া ডাকাতি এবং অপহরণের ঘটনায় ওই ক্রাইম মিটিংয়ে ডাকাতি দমন শাখার OC-কে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন । ওই মামলায় দ্রুত তদন্ত শেষ করে চার্জশিট পেশের নির্দেশ দেন তিনি । দেখতে বলেন যাতে ধৃত সাতজনকে হেপাজতে রেখে বিচার চালানোর পাশাপাশি শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় । তার একমাসের মধ্যেই চার্জশিট জমা দিল লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ । সপ্তাহের কাজের শুরুর দিনেই সেই চার্জশিট জমা পড়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর । আগামীকাল ক্রাইম কনফারেন্সের আগেই কমিশনারের কথা রাখল গোয়েন্দা বিভাগ ।
ঘটনা 4 জুলাইয়ের । নদিয়ার জুয়েলারি ব্যবসায়ী বাবলু নাথ লাখ খানেক টাকা আর গয়না নিয়ে বউবাজারে এসেছিলেন । সাধারণভাবে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এখান থেকেই গয়না বানান । অভিযোগ, তাঁর পথ আটকে দাঁড়ায় একটি গাড়ি । বলা হয়, পুলিশের চেকিং চলছে । বাবলুকে গাড়িতে উঠতে হবে তখনই । ভয় পেয়ে বাবলু ওই গাড়িতে উঠে পড়েন । তাঁর বক্তব্য, তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয় বিমানবন্দর চত্বরে । আর সবকিছু কেড়ে নেওয়া হয় ৷ তিনি এরপর মুচিপাড়া থানা এলাকায় যান । পুলিশকে লিখিত অভিযোগ জানান ।
এই সংক্রান্ত খবর : ব্যবসায়ীকে অপহরণ ও ডাকাতিতে গ্রেপ্তার মাস্টারমাইন্ড কনস্টেবল
তদন্তে নামে পুলিশ । CCTV ক্যামেরা সূত্র ধরে প্রথমেই পাকড়াও করা হয় গাড়ির চালক নেপাল ধরকে । তাকে জেরা করেই জানা যায়, গাড়িটি ভাড়া করেছিলেন কলকাতা পুলিশের ASI আশিস চন্দ্র । সঙ্গে ছিল আরও তিনজন । পুলিশ নেপাল এবং আশিস এবং বাদল নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে । এই মুহূর্তে তারা রয়েছে পুলিশ হেপাজতে । গোটা ঘটনার তদন্তে মুচিপাড়া থানাকে সাহায্য করে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ । ঘটনায় কেঁচো খুঁড়তে কেউটের সন্ধান পাওয়া যায় । সেই সূত্রে মামলার তদন্তভার নেয় লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা ।
তবে লালবাজারের গোয়েন্দারা কিছুতেই বুঝতে পারছিলেন না ঘটনায় টিপার কে? পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বাদলকে কড়া ভাবে জেরা করতেই বেরিয়ে আসে সেই তথ্য । টিপার বাদলেরই পরিচিত মিঠুন মাথ ওরফে হোড় । সে শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা । নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের বানপুর এলাকাতেও তার বাড়ি আছে । সে বাবলু নাথের এলাকারই বাসিন্দা । ফলে বাবলুর অনেক কিছুই সে জানত । মিঠুন নিজের ব্যবসার কাজে দমদমে যাতায়াত করত । সেখানেই বাদলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় । ঘটনার দিন অর্থাৎ 4 জুলাই মিঠুন বাবলুকে মাজদিয়া স্টেশন থেকেই ফলো করতে শুরু করে । একই ট্রেনে আসে শিয়ালদা । তারপর শিকারকে চিনিয়ে দেয় আশিস চন্দ্রদের । সেই সূত্রে মিঠুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ।
তদন্তের প্রথমেই পাওয়া যায় কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল উৎপল করের নাম । বাড়ি উত্তর 24 পরগনার বামনগাছিতে । বেশ কিছুদিন ধরেই তিনি পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন । ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জেনেছে, ওই কনস্টেবলই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড । তাঁকে বীজপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । লালবাজারের দাবি, ইতিমধ্যেই জেরায় তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন ।