কলকাতা, 1 অগস্ট : এবার পুলিশের অন্দরমহলেও চলবে গোয়েন্দাগিরি । রাজ্যে বেড়েই চলেছে ভুয়োদের রমরমা ৷ কোথাও আইপিএস তো কোথাও বা ভুয়ো আইএএস ৷ ভুয়ো আইপিএস কাণ্ডে নাম জড়িয়েছে কলকাতা ও রাজ্য পুলিশের একাংশের । এই পরিস্থিতি রুখতে এবার পুলিশের অন্দরেও গোয়েন্দাগিরি করবে পুলিশ ৷ এমন ব্যবস্থা হচ্ছে যাতে কোনও পুলিশকর্মী অনৈতিক কাজে যুক্ত হলে, সেই খবর পৌঁছে যায় উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে । চোরা খবর বার করবে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের একাংশ ।
পুলিশের অন্দরমহলে কিংবা থানার আওতাধীন ক্ষেত্রে এমন অনেক কিছু ঘটে, যা সচারাচর সদর দফতরের অজানা থেকে যায় । অথচ একটা সময় ছিল যখন কলকাতা পুলিশের প্রতিটি থানা ও ডিভিশনের খুঁটিনাটি খবর পৌঁছে যেত লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকদের কাছে । ফলে বজায় থাকত পুলিশি সুব্যবস্থা । এখন থানাভিত্তিক সব খবর পৌঁছায় না সদর দফতরে । ফলে কোনও পুলিশকর্মী তদন্তের বাইরে এমন কোনও কাজ করছেন কি-না, যে কাজ তাঁর এক্তিয়ারের বাইরে বা অনৈতিক, সেই সমস্থ তথ্য অজানাই থেকে যাচ্ছে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে । আর এর সুযোগ নিয়েই সমাজে ক্রমে বেড়ে চলেছে ভুয়ো আইপিএস, ভুয়ো আইএএস ইত্যাদি ৷
পুলিশের একাংশের অনুমান, এই সব ঘটনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছেন একাধিক পুলিশ আধিকারিক । না হলে কিভাবে দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পুলিশ প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে এই কাজ চলতে পারে ? এই অবস্থায় পুলিশের সেই পুরনো থানা ও ডিভিশন ভিত্তিক চোরাগোপ্তা গোয়েন্দাগিরি পদ্ধতিকে ফেরাতে চাইছে লালবাজার । সূত্রের খবর, এই বিষয় অতিরিক্ত দায়িত্ব থাকছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং রাজ্য পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের উপর। এবার থেকে এসবি বা রাজ্য পুলিশের ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন থানায় গিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্মীদের সঙ্গে কথা বলবেন । রাইফেল সেকশনে গিয়েও ছানবিন করবেন। পুলিশের আইডি কার্ড হাতবদল হচ্ছে কি-না, সেই বিষয়েও দেখভাল করবেন ৷ যদি কোথাও কোনও অনৈতিক কাজ হচ্ছে বলে সন্দেহ হয়, সঙ্গে সঙ্গে তা জানানো হবে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিকের কথায়, "পুরনো প্রথাকে ভেঙে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে পুলিশ । পুলিশের কিছু সংখ্যক কর্মীর মধ্যে দুর্নীতির ব্যাপারটা নতুন নয়। এটাকে নিয়ন্ত্রণে না আনলে, শাস্তির পদক্ষেপ না করলে সমাজে অপরাধের রমরমা বাড়বে ৷" এই বিষয় কলকাতা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, "অনেক সময় আমরা ডিভিশনাল ডিসিরাই হাল্কার উপর থাকতে চাই । নিজে যাচাই না করেই আইও (ইনভেস্টিগেটিভ অফিসার)-এর কথা মেনে নিই । এটাও অনুচিত কাজ ।"
দেবাঞ্জন দেব-সহ একাধিক ভুয়ো কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি আধিকারিক ইতিমধ্যে পুলিশি হেফাজতে । নতুন সংযোজন বেলঘড়িয়ার বাসিন্দা রাজর্ষি ভট্টাচার্য ৷ যে নিজেকে এনআইএ-র পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় 48 লক্ষ টাকা হাতিয়েছে । তাকেও হেফাজতে নিয়েছে গোয়েন্দারা । জানা গিয়েছে, এখনও প্রকাশ্যে না আসা একাধিক ভুয়ো আইপিএস ও আইএএস নিশ্চিন্তে মহানগরীর বুকে ঘোরাফেরা করছে । এদের পরোক্ষ মদত যোগাচ্ছে থানা বা রাইফেল সেকশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশের একাংশ । তা না হলে কিভাবে ধৃত রাজশ্রী ভট্টাচার্যের বাড়ি থেকে উদ্ধার হল আগ্নেয়াস্ত্র ? কিভাবে তার দেহরক্ষীর বাড়ি থেকে উদ্ধার হল কলকাতা পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের আইডি কার্ড ? কিভাবে ভুয়ো আইএএস দেবাঞ্জনের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল কলকাতা পৌরনিগমের, এমনকি খোদ নবান্নের স্ট্যাম্প পেপার ? ভুয়ো সরকারি আধিকারিক মামলার জট বহুদূর বিস্তৃত বলেই অনুমান গোয়েন্দাদের ।
আরও পড়ুন: Fake IPS : সুপারি কিলারের টাকা মেটাতে বাবার পিএফ অ্য়াকাউন্টেও হাত দিয়েছিল রাজর্ষি
তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, ভুয়ো আইপিএস কাণ্ডে পার্কস্ট্রিট থানার একজন এসআইয়ের যোগ রয়েছে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ইতিমধ্যেই সেই অফিসারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে । রাজর্ষি ভট্টাচার্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্গত দমদম থানার একজন পুলিশকর্মীর যুক্ত থাকার বিষয়টিও ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে । ফলে এই ঘটনার সঙ্গে যে একাধিক রহস্য লুকিয়ে রয়েছে, সেটা অনুধাবন করতে পারছেন তদন্তকারীরা ।