কলকাতা, 5 সেপ্টেম্বর : ছিল রুমাল হয়ে গেল বেড়াল । নতুন এক মডাস অপারেন্ডির কেপমারির তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ গ্রেপ্তার করল এমন এক দুষ্কৃতীকে, যে খুন করতে চেয়েছিল মুম্বই পুলিশের এক কর্মীকে । বহু চেষ্টা করেও তার খোঁজ পাচ্ছিল না মুম্বই পুলিশ । পাশাপাশি ওই দুষ্কৃতী দেশজোড়া কেপমারি চক্রের অন্যতম পাণ্ডা । তামিলনাড়ুর বাসিন্দা ওই দুষ্কৃতীকে মহারাষ্ট্র থেকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ । তাকে শহরে আনার তোড়জোড় চলছে ।
ঘটনার সূত্রপাত গত 16 অগাস্ট । বড়বাজারের রূপচাঁদ রায় রোডের বেসরকারী ব্যাঙ্কে ঘটে বেনজির এক কেপমারির ঘটনা । ওই ব্যাঙ্কে নির্মল আগরওয়াল নামে এক ব্যবসায়ী ন'লাখ টাকা জমা করতে গেছিলেন । ব্যাঙ্কে ঢোকার পরেই ভদ্র চেহারার এক ব্যক্তি নির্মলবাবুকে বলেন, "আমি আপনার অফিসে যাচ্ছিলাম । আপনার পেমেন্ট দেওয়া বাকি ছিল ।" ওই ব্যক্তি নির্মল বাবুকে দু'লাখ টাকার চেক দেন । বহু কাস্টমারের সঙ্গে রোজদিন ডিল হয় নির্মলবাবুর । সেভাবে সবাইকে মনে রাখা সম্ভব নয় । তাই নির্মলবাবু ভেবেছিলেন, ওই ব্যক্তি সত্যিই তাঁর কোনও কাস্টমার । হাতের কাছে পেয়ে পেমেন্ট করে দিলেন । তারপর ওই ব্যক্তি বলে, "এই বিল্ডিংয়ের চার তলায় আমার অফিস । বাকি দু'লাখ টাকা আমার অফিস থেকে একটু সংগ্রহ করে নিন ।" নির্মলবাবু ব্যাঙ্কে 9 লাখ টাকা জমা দিয়ে ওপরে চলে যান বাকি পেমেন্ট নেওয়ার জন্য । এরই মাঝে ওই ব্যাঙ্ক কর্মীর (যার কাছে নির্মলবাবু টাকা জমা করেছিলেন) কাছে আসে সে ৷ বলে, "টাকাটার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে । ওই ন'লাখ টাকা আমি আর জমা দেব না ।" এরপর টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায় ৷ পরে বোঝা যায় রীতিমতো ধোঁকা দিয়ে ন'লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন ওই ব্যক্তি । অভিযোগ দায়ের করা হয় পোস্তা থানায় । ঘটনার তদন্তে নামে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ।
জিজ্ঞাসাবাদে ওই ব্যাঙ্ক কর্মী জানান, নির্মলবাবু আর ওই ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখে তিনি ভেবেছিলেন তাঁরা একসঙ্গেই আছেন । ভদ্র-সভ্য চেহারার ওই ব্যক্তিকে দেখে সন্দেহ হয়নি একফোঁটাও । এরপর CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ । ওয়াচ সেকশনের দুঁদে চিনে ফেলেন ওই ব্যক্তিকে । নাম মুকেশ মেনন । বাড়ি তামিলনাড়ু । এর আগেও কেপমারির ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৷ শুরু হয় তল্লাশি । তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যক্তি কলকাতার একটি হোটেলে থেকে অপারেশন চালিয়েছে ৷ তারপর রাজ্য ছেড়ে চলে গেছে । তার খোঁজে মহারাষ্ট্রে যায় কলকাতা পুলিশের দল । সেখানে মুম্বই পুলিশ ও কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা জানতে পারেন ওই একই ব্যক্তি কেপমারির ঘটনা ঘটিয়েছে মুম্বইয়েও । সেখানে MFC থানা এলাকায় কেপমারি করে পালানোর সময় এক পুলিশকর্মীকে পিষে দিয়ে যায় । খুনের উদ্দেশ্যেই তার শরীরের উপর দিয়ে বাইক চালিয়ে দেয় মুকেশ । পরে চিকিৎসায় বেঁচে যান মুম্বই পুলিশের ওই কর্মী ।
মুম্বই পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের যৌথ দল বিভালদি থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে মুকেশকে । প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, মুকেশের গোটা দেশে কেপমারির নেটওয়ার্ক রয়েছে । কলকাতাতেও রয়েছে তার এক এজেন্ট । সেই এজেন্টের খোঁজ শুরু করেছে পুলিশ ।