কলকাতা, 2 জুলাই : জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে আমজনতার ৷ একদিকে যখন করোনা আবহে রাজ্যজুড়ে জারি রয়েছে নানা বিধিনিষেধ, অন্যদিকে তখন রুজি বাঁচাতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত অ্য়াপ ক্য়াবের চালক ও ডেলিভারি বয়দের ৷ তাঁদের অভিযোগ, পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়লেও যাত্রী বা ডেলিভারিপিছু তাঁদের কমিশন বাড়েনি ৷ অথচ জ্বালানি-সহ গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের খরচ লাগাতার বাড়ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে কমিশন বাড়ানোর দাবিতে সরব হয়েছেন তাঁরা ৷ রাস্তায় নেমে সামিল হচ্ছেন বিক্ষোভ, প্রতিবাদে ৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে দক্ষিণ কলকাতা পার্কসার্কাস সাতমাথা মোড়ে (সেভেন পয়েন্ট) বিক্ষোভ দেখান অ্য়াপ ক্যাবের চালকরা ৷ তাঁদের সঙ্গেই এই কর্মসূচিতে যোগ দেন ডেলিভারি বয়রা ৷ প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ব্য়ানার, প্ল্য়াকার্ড হাতে চলে বিক্ষোভ ৷ কমিশন বাড়ানোর দাবিতে ওঠে স্লোগান ৷ বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে তাঁদের কথা একটু ভাবুক সরকার ৷ সংশ্লিষ্ট অ্য়াপ ক্য়াব এবং খাবার-সহ বিভিন্ন পণ্য ডেলিভারি দেওয়া সংস্থাগুলি যাতে তাঁদের কমিশন বাড়ায়, সেই নির্দেশ দিক প্রশাসন ৷ তা না হলে সংসার চালানোই দায় হবে তাঁদের পক্ষে ৷
আরও পড়ুন : করোনাবিধি, জ্বালানি মূল্যের সাঁড়াশি চাপে নাভিশ্বাস পরিবহণ কর্মীদের
সিটু অনুমোদিত একটি সংগঠনের সদস্য ইন্দ্রজিৎ ঘোষ জানিয়েছেন, ডেলিভারি বয়রা প্রত্যেক ডেলিভারির জন্য 15 থেকে 20 টাকা কমিশন পান ৷ সেই টাকাটুকুই এঁদের রোজগার ৷ গাড়ির রক্ষণাবেক্ষেণ থেকে তেলের খরচ, কিংবা ট্রাফিক পুলিশের জরিমানা, সবই এই টাকা থেকেই দিতে হয় ৷ তেলের খরচ যেভাবে বাড়ছে, তাতে তেল কেনার পর হাতে আর কিছুই থাকছে না ৷ অথচ সংস্থাগুলি কমিশনও বাড়াচ্ছে না ৷ এভাবে চলতে পারে না ৷ সরকারকে এঁদের কথা ভাবতেই হবে ৷ তা না হলে এঁদের পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে ৷
একই সুর শোনা গিয়েছে, ইমরান নামে এক ডেলিভারি বয়ের মুখেও ৷ তিনি জানান, খাবার ডেলিভারি দিতে কখনও তাঁকে 4 কিলোমিটার, কখনও তারও বেশি দূর মোটরবাইক চালিয়ে যেতে হয় ৷ দূরত্ব বাড়লেও কমিশন বাড়ে না ৷ অথচ রোজই তেলের দাম বাড়ছে ৷ এই অবস্থায় সামান্য 15-20 টাকার কমিশনে আর রুজি বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে না ৷ এই অবস্থায় কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না ওই যুবক ৷
আরও পড়ুন : বিধিনিষেধ উঠলেও বাস চালানো সম্ভব নয়, জানিয়ে দিল উত্তর দিনাজপুরের পরিবহণ সংগঠন
অ্য়াপ ক্য়াব চালকদের অবস্থাও ভাল কিছু নয় ৷ তাঁরা জানাচ্ছেন, যাত্রীপিছু যত টাকা ভাড়া ওঠে, তার 25 শতাংশই অ্য়াপ ক্য়াব সংস্থাকে দিয়ে দিতে হয় ৷ তাছাড়া, অ্য়াপ ক্য়াব চালকদের সকলের নিজের গাড়িও নেই ৷ তাঁরা অনেকেই অন্য লোকের গাড়ি চালান ৷ সেই টাকা মিটিয়ে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ করা ও তেল কেনার জন্য টাকা খরচ করতে হয় ৷ তেলের দাম বাড়ায় তাঁদের আয় লাগাতার কমছে ৷ তাছাড়া, আংশিক লকডাউন পরিস্থিতিতে আগের মতো যাত্রীও রোজ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ ফলে উপার্জন কার্যত না থাকার মতোই ৷ অ্যাপ ক্যাব চালকদের সাফ কথা, এভাবে চলতে থাকলে গাড়ি আর রাস্তায় নামাতে পারবেন না তাঁরা ৷ তারপর কী হবে, সেই কথা ভেবেই আশঙ্কায় বুক কাঁপছে তাঁদের ৷
বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রায় ঘণ্টা খানেক বিক্ষোভ দেখান ইন্দ্রজিৎ, ইমরানরা ৷ তারপর ফিরে যান ৷ তাঁদের আশা, এই প্রতিবাদ সরকারের নজর কাড়বে ৷ বাড়বে কমিশন ৷ তা না হলে, তাঁদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলেই মনে করছেন করোনা ও লকডাউন আবহে লাগাতার আমজনতার নানা প্রয়োজন মিটিয়ে চলা এই অ্য়াপ ক্যাব চালক ও ডেলিভারি বয়রা ৷