কলকাতা, ১১ মার্চ : নিম্ন আদালতের সমন পাঠানোর পদ্ধতির পরিবর্তন, ধর্ষিতার পরিচয় গোপনসহ একাধিক দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ এক ধর্ষিতার মা। তিনি বলেন, ধর্ষণের ক্ষেত্রে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হোক ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে। এর সাথে তিনি দাবি করেন, ধর্ষিতার জন্য ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। বৃহস্পতিবার এই মামলাটির শুনানি হতে পারে জানা গেছে।
ঝড়খালির কোস্টাল থানা এলাকায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ২০১৬ সালে স্থানীয় একজন ধর্ষণ করে। মা-বাবা কর্মসূত্রে বাইরে থাকায় মামার বাড়িতে থাকত সে। ঘটনার পরদিনই তার পরিবার POCSO আইনে অভিযোগ দায়ের করে। যার ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সমস্যার সূত্রপাত হয় চলতি বছরে আলিপুর কোর্টে মামলার বিচার শুরু হলে। ১৭ জানুয়ারি আলিপুর কোর্ট থেকে শিশুটিকে সমন পাঠানো হয় ৫ ফেব্রুয়ারি তাকে কোর্টে হাজিরা দিতে হবে বলে। ঝড়খালি থানার পুলিশ সমনটি শিশুর বাড়িতে না দিয়ে তার পাশের বাড়িতে দিয়ে আসে। এবং পাশের বাড়ির লোক ওই পরিবারে চিঠিটি পৌঁছায় ৮ ফেব্রুয়ারি। চিঠি পাওয়ার পর তারা স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করে। কিন্তু থানার তরফে তাদের বলা হয়, ৫ ফেব্রুয়ারি হাজিরা দেওয়ার কথা। কিন্তু তারা কেন ৯ ফেব্রুয়ারি এসেছে? থানায় এবিষয়ে কিছুক্ষণ চেঁচামেচিও হয়।
এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় থানা ও লিগাল এড সার্ভিস অথরিটিকে চিঠি লেখেন ধর্ষিতার মা। সেখানে তিনি বলেন, তাঁর মেয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং POCSO আইন অনুযায়ী নির্যাতিতার নাম সমনের উপর লেখা যায় না। কিন্তু এক্ষেত্রে কী ভাবে শিশুটির নাম সমনের উপর লেখা হল? এরপর আসে ধর্ষণের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের বিষয়টি। সেটা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে নেওয়া হোক বলে আর্জি জানান তিনি। এবং এরই সাথে শিশুর সঙ্গে শিশুর মতোই আচরণ করার দাবি জানান তিনি। এরপর বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাকের সিঙ্গল বেঞ্চে মামলা দায়ের করে শিশুর পরিবার।
মামলাকারীর তরফে আইনজীবী ইন্দ্রজিৎ রায়চৌধুরি বলেন, "মূলত চারটে দাবিতে এই মামলা দায়ের হয়েছে। এই বাচ্চার প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ করতে হবে। তার সাথে শিশুর মতোই আচরণ করতে হবে। ভবিষ্যতে কোনও বাচ্চার সাথে যেন এরকম আচরণ না করা হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ও নিম্ন আদালতের যে সমন পাঠানোর পদ্ধতি রয়েছে সেটাকে পরিবর্তন করা হবে। এরপর পাশাপাশি শিশুর পরিচয় যাতে কোনওভাবেই বাইরে না আসে সেদিকে নজর রাখতে হবে।"