কলকাতা, 28 ডিসেম্বর: কোভিড-19 এ আক্রান্ত সব চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকে সরকার ঘোষিত আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। তাঁদের চিকিৎসার জন্য আর্থিক দায় নিতে হবে। যে সব হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে, সেই সব স্থানের স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনই দাবি তুলল এরাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল।
সরকারি চিকিৎসকদের এই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, কোভিড-19 এর কারণে এরাজ্যে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যু মিছিল চলছে। এখনও পর্যন্ত কোভিড-19 এ শুধুমাত্র চিকিৎসকদের মৃত্যুর সংখ্যা ৮৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে। অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের মনে হচ্ছে কোভিড-19 এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ এখন আর সরকার এবং প্রশাসনের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। তাঁরা এখন রাজনৈতিক লড়াইয়ে ব্যস্ত। এদিকে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কোভিড-19 এর দ্বিতীয় ঢেউ এবং কোভিড-19 এর নতুন স্ট্রেইনের দাপটে এখন দিশেহারা অবস্থা।" তিনি বলেন, "আমাদের দেশেও কোভিড-19 এর দ্বিতীয় ঢেউয়ের যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে রাজ্য প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন মদতে যেভাবে মানুষ উৎসবে শামিল হচ্ছেন, তাতে এই আশঙ্কা আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে।
চিকিৎসকদের এই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, এই ধরনের ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে এরাজ্যে এক এক করে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে সেফ হোম, কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে কোভিড-19 রোগীদের চিকিৎসার জন্য বেড। নয় মাস পরেও ক্রিটিকাল কেয়ারের বেড না পেয়ে কোভিড-19 রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠছে। কোভিড-19 এর বিরুদ্ধে চলা যুদ্ধের অন্যতম হাতিয়ার টেস্ট অর্থাৎ, রোগনির্ণয়ের সংখ্যা দিনকে দিন কমিয়ে "রাজ্য ভালো আছে"-র বার্তা দেওয়ার সক্রিয় প্রচেষ্টা চলছে।
আরও পড়ুন: চার রাজ্যে শুরু কোরোনা টিকার ড্রাই রান
চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে জীবন বাজি রেখে কোভিড-19 যুদ্ধে শামিল হলেও, চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা সরকার ঘোষিত অর্থনৈতিক সাহায্য পাচ্ছেন না। অথচ, হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ে আছে স্বাস্থ্যভবনে।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "রাজ্য সরকার ঘোষণা করেছিল, কোভিড-19 এর চিকিৎসা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। অথচ, সাম্প্রতিক সময়ে বহু চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকে নিজের পকেটের টাকা খরচ করে কোভিড-19 এর চিকিৎসা পেতে হচ্ছে। এমনকী, সরকারি হাসপাতাল থেকে বেসরকারি হাসপাতালে রেফার হওয়া চিকিৎসকদেরকেও নিজেদের লাখ লাখ টাকা খরচ করে কোভিড-19 এর চিকিৎসা পেতে হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: বন্ধ যাদবপুরের হাসপাতাল, টিবি রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা
তিনি বলেন, "আমারা আবারও দাবি জানাচ্ছি, "কোভিড-19 এ আক্রান্ত সব চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীকে সরকার ঘোষিত আর্থিক সাহায্য দিতে হবে। কোভিড-19 এর জন্য তাঁদের চিকিৎসার আর্থিক দায় সরকারকে নিতে হবে। যে সব হাসপাতালে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে, সেই সব স্থানের সব স্বাস্থ্যকর্মীর সুরক্ষায় জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।" বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-19 এর চিকিৎসার জন্য যেভাবে অতিরিক্ত বিলের অভিযোগ উঠছে, তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছে এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের এই সংগঠন।