কলকাতা, 19 জুন: সাম্প্রতিক সময়ে সৌগত রায় (Saugata Roy) আর বিতর্ক যেন একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ ! বিতর্ক কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না তাঁর ! শনিবার বরানগরের একটি কলেজে গিয়ে তাঁর করা মন্তব্য নতুন করে অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে ৷ দিন কয়েক আগেই সঙ্গীতশিল্পী কেকে-এর মৃত্যু (KK Demise) নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা ৷ নজরুল মঞ্চে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিভিন্ন মহল ৷ প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয় রাজ্যের শাসকদল ও পুলিশ প্রশাসনকে ৷ শনিবার সেই বিতর্ককেই আরও উস্কে দেন সৌগত ৷ প্রশ্ন তোলেন অনুষ্ঠানের বিপুল খরচের জোগান ও উৎস নিয়ে ৷ তৃণমূল সূত্রের দাবি, দলের অন্যতম প্রবীণ নেতার এমন আচরণে ক্ষুব্ধ শীর্ষ নেতৃত্ব ৷ অন্যদিকে, সৌগতর বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই ফের একবার শাসকদলের সমালোচনায় সরব বিরোধীরা ৷
বরানগরের অনুষ্ঠানে সৌগত বলেন, ‘‘গান গাইতে এসে কেকে-র মৃত্যু হল ৷ আমি শুধু ভাবছি এত টাকা কোথা থেকে এল ! 30 লাখ নাকি 50 লাখ, কত যেন লেগেছে শুনলাম ! টাকা তো হাওয়া থেকে আসে না । কলেজের ফেস্টের জন্য এত টাকা দিল কে ? এত টাকা খরচ করে মুম্বইয়ের শিল্পী আনার কি খুব দরকার ছিল ? এত টাকা দিয়ে অনুষ্ঠান করতে হলে তো কারও না কারও কাছে 'সারেন্ডার' করতে হয় ! হয় প্রোমোটার, না হয় এলাকার মাস্তান ৷ আর জীবনের প্রথমেই যদি 'সারেন্ডার' কর, তাহলে বাকি জীবন কী করবে ?’’
আরও পড়ুন: KK in West Bengal Assembly : বিধানসভার শোক প্রস্তাবেও জায়গা পেলেন প্রয়াত সংগীতশিল্পী কেকে
প্রসঙ্গত, সংগীতশিল্পী কেকে-র মৃত্যুর পর এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলিই তুলেছিলেন বিরোধীরা ৷ এমনকী এই বিষয়টি নিয়ে সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত বলেও দাবি করেছিলেন তাঁরা ৷ যদিও শেষ পর্যন্ত আলাদা করে সিবিআই তদন্তের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি ৷ কিন্তু সৌগত রায়ের এই মন্তব্যের পর তৃণমূলকে আক্রমণের জন্য বিরোধীরা নতুন অস্ত্র হাতে পেয়ে গেলেন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ বিরোধীদের বক্তব্য, দলের অন্দরেই যখন এমন প্রশ্ন উঠছে, তখন এই বিষয়ে আরও তদন্ত হওয়া উচিত ৷
বিজেপি-র মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এই ইস্যুতে সৌগতর পাশে দাঁড়িয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "সৌগত রায় যে রাজনৈতিক দলের সাংসদ, সেই রাজনৈতিক দল গ্রামে, গঞ্জে সব জায়গায় টাকা দিয়ে এই ধরনের অনুষ্ঠান করছে ৷ এত টাকা কোথা থেকে আসছে? আজ কেকে-র অনুষ্ঠান নিয়ে সৌগত প্রশ্ন তুলছেন ৷ কিন্তু, এমন ঘটনা তো পশ্চিমবঙ্গব্যাপী ঘটছে ৷ কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ পর্যন্ত একই চিত্র ৷ তিনি (সৌগত) কার উদ্দেশে প্রশ্ন তুললেন ? কেন তুললেন ? নিজের কোন অবস্থান স্পষ্ট করার চেষ্টা করলেন, সেটা ভিন্ন বিষয় ৷ কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে ৷"
সৌগতকে সমর্থন করেছে সিপিএমও ৷ দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, "কেকে-র মৃত্যুর পর আমরাও এই কথাটাই বলেছিলাম ৷ কলেজে ইউনিয়ন বলে তো কিছু নেই ৷ তাহলে ইউনিয়নের নামে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা কলেজ কর্তৃপক্ষ কীভাবে করল ? এটা কি অনুপ্রেরণা ? নাকি এটা কলেজকে সামনে রেখে তোলাবাজি ?"
অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতা আবদুল মান্নান এই প্রসঙ্গে বলেন, "এটা ওঁদের দলের বিষয় ৷ আমি এ নিয়ে কী বলব ? গোটা দলটাই তো এভাবে চলছে ৷ দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এমন প্রশ্ন তুলছেন ! আমরা বললে বলতেন, বিরোধীরা বলছেন ! কিন্তু, এবার তো দলের ভিতরেই প্রশ্ন উঠছে ৷ দলনেত্রী বা দলের 2 নম্বর নেতাকেই এর জবাব দিতে হবে ৷"
আরও পড়ুন: KK Theme : বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবে 'ফিরছেন' কেকে, দুর্গাপুজোর মণ্ডপে শিল্পীর শেষ লাইভ শো
বিরোধীদের এই সমালোচনাকে প্রকাশ্য়ে অন্তত পাত্তা দিতে নারাজ তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ দলের তরফে রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, "এই বিষয়টি নিয়ে অহেতুক বিতর্ক হচ্ছে ৷" যদিও সৌগত রায়ের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সরাসরি কোনও কথা বলতে রাজি হননি শান্তনু ৷ তবে তাঁর বক্তব্য, "যারা কলেজে পড়েছেন, তাঁরা জানেন এই ধরনের অনুষ্ঠান করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির সময়েই কিছু টাকা নেওয়া হয় ৷ আর গত 2-3 বছর ধরে এই ধরনের কোনও অনুষ্ঠান হয়নি ৷ ফলে কলেজের তহবিলে টাকা ছিল ৷ সেই টাকা দিয়েই অনুষ্ঠান হয়েছে ৷ এ নিয়ে অযথা বিতর্ক করে লাভ নেই ৷"
তৃণমূল সূত্রে খবর, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব সৌগত রায়ের আচরণ ভালোভাবে নেয়নি ৷ তবে, সৌগত রায় দীর্ঘদিনের সাংসদ ও বর্ষীয়ান নেতা ৷ তাই বিষয়টি সরাসরি তৃণমূলনেত্রীই দেখবেন বলে শোনা যাচ্ছে ৷ তিনিই এই ঘটনায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন ৷