কলকাতা, 2 অগস্ট : 100 দিনের কাজে সাফল্য নিয়ে বরাবরই সরব মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) তৃণমূল সরকার ৷ রাজ্যের দাবি, অন্যদের তুলনায় বাংলায় এই প্রকল্পের আওতায় (Mahatma Gandhi National Rural Employment Guarantee Act) অনেক বেশি মানুষের রোজগারের উপায় করা সম্ভব হয়েছে ৷ একইসঙ্গে, সামনে এসেছে আরও একটি তথ্য ৷ যা যথেষ্ট উদ্বেগের বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷ সূত্রের খবর, 100 দিনের কাজের আওতায় যাঁরা রোজগার করছেন, তাঁদের অধিকাংশই বৃদ্ধ ৷ বয়স 61 থেকে 80 বছরের মধ্যে ৷ তুলনায় 18 থেকে 30 বছরের শ্রমিকের সংখ্যা অনেকটাই কম ৷
আরও পড়ুন : 100 দিনের কাজে মিলছে না সম্পূর্ণ মজুরি, বিক্ষোভ গ্রামবাসীদের
গত 7 এবং 8 জুলাই দিল্লিতে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের একটি দু’দিনের বৈঠক হয় ৷ সেই বৈঠকের পর মন্ত্রকের তরফ থেকে 100 দিনের কাজের রাজ্যওয়াড়ি পরিসংখ্যান প্ৰকাশ করা হয় ৷ বিভিন্ন রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন দফতর কেন্দ্রকে যে তথ্য পাঠিয়েছে, তার উপর ভিত্তি করেই এই পরিসংখ্যান তৈরি করা হয়েছে ৷ সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, 2013-14 আর্থিক বছরে পশ্চিমবঙ্গে 100 দিনের কাজের প্রকল্পে 18 থেকে 30 বছর বয়সী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল 13 লাখ 35 হাজার 816 ৷ 2020-21 অর্থবর্ষে সেই সংখ্যাটাই কমে হয় 7 লাখ 73 হাজার 27 ৷ শতাংশের হিসাবে দেখলে সাত বছরের ব্যবধানে রাজ্য়ে 100 দিনের কাজের প্রকল্পে 18 থেকে 30 বছর বয়সীদের অংশগ্রহণ 14.56 শতাংশ থেকে কমে হয়েছে 6.53 শতাংশ ৷
অন্যদিকে, 2013-14 আর্থিক বছরে এই রাজ্যে 100 দিনের কাজের প্রকল্পে 61 থেকে 80 বছর বয়সী শ্রমিকের সংখ্যা ছিল 8 লাখ 75 হাজার 5 ৷ গত আর্থিক বছরে (2020-21 অর্থবর্ষে) তা বেড়ে হয় 15 লাখ 68 হাজার 370 ৷ অর্থাৎ সাত বছরে রাজ্য়ে 100 দিনের কাজে বৃদ্ধ বা প্রবীণদের অংশগ্রহণ 9.5 শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে 13.26 শতাংশ ৷ বিশেষজ্ঞদের অনুমান, এই ট্রেন্ডের পিছনে একাধিক আর্থসামাজিক কারণ থাকতে পারে ৷
অর্থনীতিবিদ প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায় মনে করেন, রাজ্য়ে বড় শিল্প সেই অর্থে কিছু নেই ৷ ফলে বছরভর রোজগারের উপায় ক্রমশ কমছে ৷ 100 দিনের কাজ কখনই সারা বছরের কর্মনিশ্চয়তা দেয় না ৷ তরুণদের পক্ষে এই সামান্য রোজগার যথেষ্ট নয় ৷ কারণ, তাঁদের অধিকাংশের উপরেই পরিবারের দায়-দায়িত্ব থাকে ৷ ফলে কাজের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেন তাঁরা ৷ আর তার জেরে রাজ্য়ে 100 দিনের কাজ করার মতো তরুণের সংখ্যা কমে যায় ৷ সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন প্রবীণরা ৷
আরও পড়ুন : লকডাউন উঠলেও 100 দিনের কাজ অমিল, চাইলেই কাজ ; বলছে প্রশাসন
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী অবশ্য এর মধ্যে রাজনীতির ছোঁয়াই বেশি দেখতে পাচ্ছেন ৷ তাঁর অভিযোগ, 100 দিনের কাজে যোগ দিলেই শাসকদলের নেতা, কর্মীদের তোলা দিতে হয় ৷ আর সেই কারণেই কেন্দ্রীয় সরকারি এই প্রকল্পের আওতায় কাজের আগ্রহ হারিয়েছেন বাংলার তরুণরা ৷ ফলে প্রকল্পের কাজ করার মতো লোক মিলছে না ৷ সেই কারণেই বৃদ্ধদের প্রকল্পের অধীনে আনা হচ্ছে ৷
সমাজ বিজ্ঞানীরা অবশ্য এর পিছনে সামাজিক অবক্ষয়কেও অন্যতম কারণ হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন ৷ বহু ছেলে-মেয়েই বড়় হয়ে আর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব নিতে চায় না ৷ ফলে অশক্ত শরীরেও রোজগারের চেষ্টা করতে হয় প্রবীণদের ৷ 100 দিনের কাজে বিরাট কিছু আয় হয় না ৷ অথচ খাটুনি থাকে হাড়ভাঙা ৷ বৃদ্ধ বয়সেও যদি রাজ্য়বাসীর একটা বড় অংশকে সরকারি প্রকল্পে কাজ করে পেটের ভাত জোগাড় করতে হয়, তবে তা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার বলেই মত ওয়াকিবহাল মহলের ৷