কলকাতা, ১১ ফেব্রুয়ারি: নিয়ম বলছে, পৌরভোটের দিনক্ষণের বিষয়ে সুপারিশের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের । কিন্তু, এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে সরকারিভাবে কিছু জানানো হয়নি । কিছুদিন আগে কমিশনের তরফে কয়েকটি চিঠি দেওয়া হলেও তার উত্তর আজও আসেনি । তবে পৌরভোটের বিষয় সবুজ সংকেত দিয়েছে নবান্ন । সেই সূত্রেই শুরু হয়ে গেছে কাজ । রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, তারা যা ইঙ্গিত পেয়েছে তাতে মার্চের প্রথম সপ্তাহে সরকারিভাবে চিঠি চলে আসার কথা । সেক্ষেত্রে 10 থেকে 15 তারিখের মধ্যে পৌর নির্বাচনের নোটিফিকেশন জারি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল । পাশাপাশি কমিশন চাইছে, কয়েক দফায় পৌর নির্বাচন সম্পন্ন করতে । সে ক্ষেত্রে নির্বাচন গড়াতে পারে জুন পর্যন্ত।
রীতি অনুযায়ী ভোটের দিনক্ষণের বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোনও লিখিত চিঠি নির্বাচন কমিশন পায়নি । তবে পুরোদমে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে তারা । এদিকে সোমবার 92টি পৌরসভা এবং পৌরনিগমে আসন সংরক্ষণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হয়ে গেছে । আগেই 17টি পৌরসভা এবং পৌরনিগমে সেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে । নিয়ম অনুযায়ী খসড়া তালিকা প্রকাশের দিন থেকে 10 সপ্তাহ পরে ভোট নিতে কোনও অসুবিধা নেই । অর্থাৎ 27 মার্চের পর যে কোনও দিন ভোটগ্রহণ হতে পারে । সেই সূত্রেই শোনা যাচ্ছে এপ্রিলে কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচন দিয়ে শুরু হতে পারে পৌরভোট ।
27 মার্চ শেষ হচ্ছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা । তারপর আর প্রচারে কোনও বাধা নেই । সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশের 10 সপ্তাহের মধ্যে ভোট করা যায় না ঠিকই, তবে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে কোনও অসুবিধা নেই । সেই সূত্রে মার্চে ঘোষণা হতে পারে কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচনের দিনক্ষণ । মার্চের শেষ সপ্তাহের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে মনোনয়ন প্রক্রিয়া । ট্র্যাডিশন বলছে, কলকাতা পৌরনিগমের সঙ্গে অন্য পৌরসভা এবং পৌরনিগমের নির্বাচন করা হয় না । প্রশান্ত কিশোরও নাকি কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচন আগে করার জন্য তৃণমূল নেত্রীকে পরামর্শ দিয়েছেন ।
2014 সালেও কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচনের 15 দিন পর অন্য পৌরসভাগুলির নির্বাচন হয়েছিল । সব ঠিক থাকলে সেই রীতি এবারও বজায় থাকবে । তবে এবার আর 15 দিন নয় । তা বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে । কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচন আগে করার পিছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে সূত্রের খবর । গত লোকসভা ভোটে কলকাতার কয়েকটি ওয়ার্ডে তৃণমূল পিছিয়ে থাকলেও সমস্যা হবে না বলে মনে করছে তৃণমূল নেতৃত্ব । ভালো ফলের বিষয়ে 100 শতাংশ আশাবাদী তারা । আর কলকাতা পৌরনিগমে ভালো ফল হলে অন্য পৌরসভা এবং পৌরনিগমগুলিতে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে । তাই এপ্রিলে কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচন করার পর বাকি পৌরসভাগুলির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে ।
এদিকে 24 এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে রমজান মাস । সেই সময়, ভোটের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে তৃণমূল নেত্রীর । তাই কলকাতা পৌরনিগমের নির্বাচনের পর মাঝে একটা মাস সময় নেওয়া হবে বলেই মনে করছেন অনেকে । সেই ক্ষেত্রে ইদের পর শুরু হবে বাকি পৌরনিগম এবং পৌরসভাগুলির নির্বাচনের কাজ । নির্বাচন কমিশন মনে করছে, সিউড়ি, বোলপুর সহ 111টি পৌরসভার নির্বাচন একদিনে করতে গেলে বিস্তর কাঠ-খড় পোড়াতে হবে । তাই তারা চাইছে কয়েক দফায় ভোট করতে । এই প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, “111টি পৌরসভার নির্বাচন একসঙ্গে করতে হলে তা প্রায় সাধারণ নির্বাচনের পর্যায়ে চলে যাবে । সেটা করতে গেলে যে ক্ষমতা দরকার তা আমাদের নেই । তাই একদিনে এই নির্বাচন করা কার্যত অসম্ভব । সেই জন্যই আমরা চাইছি কয়েকটি দফায় নির্বাচন করতে ।"