কুমোরটুলিতে চাহিদা নেই বড় দুর্গার, ছোটো প্রতিমা গড়ছেন শিল্পীরা

প্রতি বছর কুমোরটুলিতে দু'শো থেকে আড়াইশোটি বড় দুর্গা প্রতিমা তৈরি হয় । এ-বছর সেখানে বড় দুর্গা তৈরি হয়েছে মাত্র 14 থেকে 16 টি । চাহিদা বেড়েছে ছোটো প্রতিমার । বেশিরভাগ মূর্তি তৈরি হচ্ছে দেড় ফুট থেকে পাঁচ ফুটের মধ্যে ।

কলকাতা, 30 সেপ্টেম্বর : ঢাকে কাঠি পড়বে বটে, কিন্তু বড় দুর্গার চাহিদা এ বছর অনেকটাই কম । চাহিদা বেড়েছে ছোটো প্রতিমার । উমার বাপের বাড়ি আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই । 22 অক্টোবর মহাষষ্ঠী । পুজোকে ঘিরে বাঙালির উন্মাদনা রয়েছে ঠিকই, তবে এ-বছর আগমনীর রং অনেকটাই ফিকে । কোরোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর ভবিষ্যৎ মাঝে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল । দুর্গাপুজোর আয়োজকদের প্রস্তুতিতেও ভাটা পড়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় । বহু পুজো কমিটিই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য এ-বছর পুজো করবে। খুব বেশি জাঁকজমক-আড়ম্বরে যেতে চাইছে না কলকাতার বহু দুর্গাপুজো কমিটি । কোরোনা সংক্রমণের জন্য বিশ্বজুড়ে তৈরি হয়েছে আর্থিক মন্দা । আর সেই আর্থিক মন্দার প্রভাব এসে পড়েছে দুর্গাপুজোতেও ।

কোরোনা পরিস্থিতির জন্য বাজেট কমাতে বাধ্য হয়েছেন অনেক দুর্গাপুজো কমিটি । এ-বছর কুমারটুলিতে বড় দুর্গার চাহিদা অনেক কম । তবে অর্ডার বেড়েছে ছোটো দুর্গা প্রতিমার । প্রতি বছর কুমোরটুলিতে দু'শো থেকে আড়াইশোটি বড় দুর্গা প্রতিমা তৈরি হয় । এ বছর সেখানে বড় দুর্গা তৈরি হয়েছে মাত্র 14 থেকে 16টি । ছোটো থেকে মাঝারি দুর্গা প্রতিমার চাহিদা বেড়েছে অনেকটা । বেশিরভাগ মূর্তি তৈরি হচ্ছে দেড় ফুট থেকে পাঁচ ফুটের মধ্যে । তবে কুমোরটুলির শিল্পীরা এবছর অতিরিক্ত প্রতিমা তৈরি করছেন না । আগাম অর্ডার পেলে তবেই তাঁরা প্রতিমা তৈরি করছেন । ঘূর্ণিঝড় আমফান ও কোরোনার সংক্রমণে ব্যবসার অনেক ক্ষতি হয়েছে । বহু অর্ডার বাতিল হয়ে গেছে । ঘূর্ণিঝড় আমফানের দাপটে ভেঙে গেছে বেশ কিছু অর্ধ নির্মিত প্রতিমা । চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে মৃৎশিল্পীদের । তাই এবছর শিল্পীরা বড় প্রতিমা তৈরি করছেন না । অর্ডার বাতিল হলে যাতে লোকসান কম হয়, তার জন্য ছোটো প্রতিমা গড়ছেন শিল্পীরা।

কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী মালা পাল। ছোটো দুর্গা তৈরি করার জন্য বহু সম্মান পেয়েছেন তিনি । মালা পাল জানিয়েছেন, "আমফানে বহু প্রতিমা ভেঙে গেছে । অন্নপূর্ণা পুজো ও পয়লা বৈশাখে ব্যবসা হয়নি কোরোনার সংক্রমণে । বহু অর্ডার বাতিল হয়েছে । চরম আর্থিক সংকটের মুখে পড়তে হয়েছে শিল্পীদের ।" তাই এবছর সাহস করে আর বড় দুর্গা তৈরি করছেন না শিল্পীরা । অন্যান্য বছর 23 টি বড় দুর্গার অর্ডার থাকে মালাদেবীর । সেখানে এ বছর মাত্র দু'টি বড় দুর্গা তৈরি করছেন তিনি । সেই তুলনায় ছোটো দুর্গার চাহিদা বেড়েছে । গত বছর 11টি ছোটো দুর্গা তৈরি করেছিলেন । এ বছর এখনও পর্যন্ত 14টি ছোটো দুর্গা তৈরি করছেন । এরপরও অর্ডার আসছে । কিন্তু ফিরিয়ে দিচ্ছেন । কারণ, হাতে আর বেশি সময় নেই । অল্প সময়ের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করতে চান শিল্পী মালা পাল।

ছোটো প্রতিমার চাহিদা বাড়ছে কুমোরটুলিতে

কুমোরটুলির অন্য এক প্রতিমা শিল্পী বঙ্কিম পাল । জানিয়েছেন, "এ-বছর পুজো উদ্যোক্তারা ছোটো দুর্গা প্রতিমাই চাইছেন । এই পরিস্থিতির মধ্যে পুজো করাটা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল । এছাড়াও কমিটিগুলির হাতে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা না থাকাতেও ছোটো প্রতিমাতে পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । তাই এ বছর ছোটো দুর্গা প্রতিমার অর্ডার বেড়েছে ।" অর্ডার বাড়লেও একসঙ্গে বেশি প্রতিমার কাজ ধরতে চাইছেন না শিল্পীরা । আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন শিল্পীরা । যদি অর্ডার বাতিল হয়ে যায় ! সেই ভয়টা থেকেই গেছে শিল্পীদের মধ্যে ।