কলকাতা, 2 জুন: নামটাই যথেষ্ট । সত্যজিৎ রায় (Satyajit Ray stamp)। যিনি বাংলা সিনেমা তো বটেই উপমহাদেশের সিনেমাকে বিশ্ব চলচ্চিত্রের মানচিত্রে একটা পাকাপাকি জায়গা করে দিয়েছেন । শুধু চিত্রনির্মাতা নন, তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী । এ হেন মানুষের জন্ম শতবর্ষে বেসরকারি ভাবে স্ট্যাম্প প্রকাশ করা হলেও সরকারি ভাবে কোনও স্ট্যাম্প প্রকাশ করা হল না । স্বাভাবিক ভাবেই ব্যথিত সত্যজিৎ-প্রেমীদের একাংশ (No centenary stamp for Satyajit Ray)।
ডাকটিকিট ডিজাইনার ও ফিল্যাটেলিস্ট দীপক দে সত্যজিৎ রায়ের উপরে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ ডাকটিকিট ডিজাইন করেছেন । তাঁর কথায়, সত্যজিৎ রায়ের উপর বেসরকারি ভাবে ডাক টিকিট ও স্পেশাল কভার প্রকাশ করা হলেও সরকারি ভাবে এখনও কোনও ডাকটিকিট প্রকাশিত হয়নি । তিনি বললেন, "বাঙালিরাই এই আবেগটা বুঝবে । তবে ডাক বিভাগের তরফে এখনও পর্যন্ত সত্যজিৎ রায়ের উপর দুটি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে । একটি কমেমোরেটিভ স্ট্যাম্প প্রকাশ করেছে । আর একটি ডেফিনিটিভ স্ট্যাম্প প্রকাশিত হয়েছে । তবে অনেক সময় ডাক বিভাগ কমেমোরাটিভ স্ট্যাম্প একবার বেরিয়ে গেলে সেই ব্যক্তির উপরে আর 100 বছরে স্ট্যাম্প প্রকাশ করে না, যদি না তিনি মহাত্মা গান্ধীর মতো কেউ হন । এর আগে রবিশঙ্করের 100 বছর হয়ে গেলে তাঁর ক্ষেত্রেও ডাক বিভাগ সেন্টিনারি স্ট্যাম্প বা স্পেশাল কভার প্রকাশ করেনি । ঠিক একই ঘটনা ঘটল সত্যজিৎ রায়ের ক্ষেত্রেও । তবে অনেক বেসরকারি উদ্যোগে এঁদের 100 বছরে স্ট্যাম্প এবং স্পেশাল কভার বেরিয়েছে ।"
1993 সালে ডাকটিকিট ডিজাইনার ও ফিল্যাটেলিস্ট দীপক দে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ও ভাবনার উপর বেশ কয়েকটি ডাকটিকিট ডিজাইন করেছিলেন ।
তিনি এই স্ট্যাম্পগুলি ভারত সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রকের জন্য ডিজাইন করেছিলেন ।
আরও পড়ুন: Anik Dutta Drafts Logo of Aparajito : সত্যজিতের ধারা মেনেই অপরাজিতর লোগোর খসড়া আঁকলেন অনীক
এই ডাকটিকিটগুলি ডিজাইন করার পেছনে রয়েছে একটি গল্প । এই গল্পটিই আমহার্স্ট স্ট্রিটের বাড়িতে বসে তিনি শোনালেন । দীপক দে বলেন, "কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রকের জন্য আমি সত্যজিৎ রায়ের উপর 11টি ডাকটিকিট ডিজাইন করি । সেগুলি কলকাতা ডাক বিভাগ থেকে দিল্লিতে পাঠানো হয় । তার মধ্যে চারটি টিকিট নির্বাচিত করে অনুমোদন দেওয়া হয় ছাপার জন্য । তবে তারপর জানতে পারি যে, সেখানে সত্যজিৎ রায়ের ছবিটির যে চরিত্রগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল সেই চরিত্র নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে । একটি স্ট্যাম্পে সত্যজিৎ রায়ের 'চারুলতা' ছবির নায়িকা মাধবী মুখোপাধ্যায়ের ছবি ছিল । আরেকটি স্ট্যাম্পে তাঁর ছবি আগন্তুকের নায়িকা মমতা শঙ্করের ছবি ছিল । এই ছবিগুলি নিয়েই গোল বাঁধল । কারণ মন্ত্রকের বক্তব্য ছিল যে, এই চরিত্রগুলি এখনও জীবিত, তাই স্ট্যাম্পে যদি এঁদের দেখা যায়, তবে এতে তাঁদের বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন করা হবে । শেষ পর্যন্ত সেই ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয় ৷ তবে আমার মূল টিকিটের ডিজাইন নিয়ে তাকে কিছুটা রদবদল করে ওঁরা নিজেদের মতো করে সেই ডাকটিকিটগুলি প্রকাশ করে । তবে ডাকটিকিটগুলির জন্য আমাকে আমার পারিশ্রমিক দেওয়া হলেও আমি আমার প্রাপ্য স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হই ।"
পথের পাঁচলির 25 বছর উপলক্ষে দীপক দে বিশেষ ডাকটিকিট ডিজাইন করেছিলেন । সেটাই ছিল সত্যজিৎ রায় ও তাঁর ছবি নিয়ে দীপক দে'র প্রথম কাজ । সিনে সেন্ট্রাল থেকে এই স্ট্যাম্পটি প্রকাশিত হয় । তখন সত্যজিৎ রায় জীবিত ছিলেন । এর পরের স্ট্যাম্পটি ছিল অভিযান ছবিটি নিয়ে ।
এই বিষয়টি নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায়ের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "ওঁর 100 বছরের জন্মবার্ষিকীতে যদি ডাক বিভাগ তাঁকে সম্মান জানিয়ে সেন্টিনারি ডাকটিকিট প্রকাশ করত, তাহলে অবশ্যই ছেলে হিসেবে আমার খুব ভালো লাগত । আমি এটুকুই বলতে পারি ।"
অন্যদিকে, ডাক বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন যে, সত্যজিৎ রায়ের উপরে ডাক বিভাগ থেকে কমেমোরেটস টিকিট ও ডেফিনিটিভ ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়েছে । তবে এমন অনেক জনপ্রিয় ও বিখ্যাত মানুষজন রয়েছেন যাঁদের সেন্টিনারি স্ট্যাম্প প্রকাশ নাও করা হতে পারে । তবে এর ব্যতিক্রম আছে, যেমন মহাত্মা গান্ধী বা পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু ।
প্রসঙ্গত 1921 সালের 2 মে সত্যজিৎ রায়ের জন্ম এবং 23 এপ্রিল 1992 তাঁর মৃত্যু হয় ।