কলকাতা, 9 জানুয়ারি: প্রশ্ন ছিল অনেক । কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার লোকটাই চলে গেলেন । মৃত্যু হল নিলম ধানানির । কিছুদিন আগেই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয়েছিল নিলমের মেয়ে গুড্ডনের । মা ও মেয়ে থাকতেন নিউ আলিপুরের সাহাপুর কলোনিতে । দুজনেরই মৃত্যু হওয়ায় এই কেসের সমাধান আর কোনও দিন হবে না বলেই মনে করছে লালবাজার । কারণ গোটা ঘটনার সঙ্গে মা-মেয়ে ছাড়া এখনও পর্যন্ত তৃতীয় কোনও ব্যক্তির যোগসূত্র খুঁজে পায়নি পুলিশ ।
ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে বিষক্রিয়া থেকে মৃত্যু হয়েছিল গুড্ডনের । শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন ছিল না। গলায় দড়ির ফাঁস অর্থাৎ লিগেচার মার্কও নেই। কিন্তু দেহটি বন্ধ ফ্ল্যাটে যত্ন করে বিছানায় শোয়ানো ছিল । পুলিশ যখন দেহ উদ্ধার করে তখন তাতে পচন ধরতে শুরু করেছে । 29 জানুয়ারি কাটিহার যাওয়ার জন্য হাওড়া স্টেশনে গিয়েছিলেন বছর পঞ্চাশের নিলম । কিন্তু স্টেশনে তিনি অসুস্থ বোধ করায় রেলের তরফে তাঁকে হাওড়া স্টেট জেনেরাল হাসপাতালে ভরতি করা হয় । হাসপাতাল থেকে গতকাল নিলম তাঁর দাদা বিজয়কে ফোন করে জানান, গুড্ডন (26) আত্মহত্যা করেছে । তার দেহ ফ্ল্যাটেই পড়ে আছে ।
বিজয় পুলিশকে খবর দিলে তারা গুড্ডনের দেহ উদ্ধার করে । এছাড়া ঘটনাস্থান থেকে উদ্ধার হয় একটি সুইসাইড নোট । কিন্তু সেই নোটটি নিলমের লেখা । যদিও নিলম আত্মহত্যা করেননি ।পরে পুলিশকে তিনি জানান, তাঁরা মা ও মেয়ে একসঙ্গে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন । তাই তিনি সুইসাইড নোটটি লিখেছিলেন । ময়নাতদন্তে রিপোর্ট বলছে গুড্ডনের মৃত্যু বিষক্রিয়ায় হয়েছে । কিন্তু নিলম কি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন ? কারণ ঘরের সিলিং ফ্যান থেকে দড়ির ফাঁস ঝুলছিল ।
সুইসাইড নোটে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে গুড্ডনের বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে । পুলিশি তদন্ত বলছে, মাস সাতেক আগে বিয়ে ঠিক হয়েছিল গুড্ডনের । কিন্তু কোনও কারণে বিয়ে ভেঙে যায় । তারপরেই দুজনে একসঙ্গে আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন । তাহলে নিলম হাওড়া স্টেশনে গেলেন কেন ? তিনি কি মেয়ের মৃতদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যাচ্ছিলেন ? কিন্তু কেন? পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে প্রায় 10 দিন আগে অর্থাৎ 28 ডিসেম্বর নাগাদ ওই যুবতির মৃত্যু হয়েছিল । 29 ডিসেম্বর নিলম হাওড়া স্টেশনে যান । তাহলে কি প্রায় 24 ঘণ্টা তিনি মেয়ের দেহ আগলে বসেছিলেন ? অনেকেই এর মধ্যে কলকাতার রবিনসন স্ট্রিট কাণ্ডের ছায়া দেখছেন ।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নিলমের সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল । কিডনির সমস্যাও ছিল। এই সমস্ত শারীরিক সমস্যার জন্য পুলিশ তাঁকে ঠিক মতো জেরা করতে পারেনি । ফলে তদন্তে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেগ পেতে হচ্ছিল । গোটা ঘটনায় একাধিক ফাঁক রয়েছে, যা ভাবাচ্ছিল পুলিশকে । কিন্তু নিলমের মৃত্যুর পর সেই রহস্য অধরাই থেকে যাবে বলে মনে করছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ।