কলকাতা, 19 জুন : লকডাউন ও বর্তমান কোরোনা পরিস্থিতিতে চরম সংকটের মধ্যে পড়েছেন জুতো তৈরির কারিগরেরা । কলকাতার রাজাবাজার এলাকার চর্ম শিল্পের সঙ্গে যুক্ত এই সব জুতোর কারিগরদের অবস্থা বেশ শোচনীয় । তিন মাস লকডাউনের জেরে কার্যত লাটে উঠেছে ব্যবসা । কর্মহীন প্রায় 10 হাজার মানুষ ।
কুটির শিল্পের মতো রাজাবাজার বড় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ঘরে ঘরে তৈরি হয় চামড়ার জুতো । বিভিন্ন ডিজাইনে প্রস্তুত জুতোগুলো এখান থেকে সরবরাহ হয় রাজ্যের বহু নামী-দামী শোরুমে । সুনামের সঙ্গে পাড়ি দিয়ে থাকে দেশ-বিদেশে । জুতো তৈরির জন্য যাবতীয় কাঁচামাল মেলে এখানে । জুতো তৈরি কারবারের সঙ্গে এই এলাকায় যুক্ত রয়েছেন প্রায় 10 হাজারের বেশি মানুষ । এর ওপরে নির্ভর তাঁদের রুটি-রুজি । কারিগরদের অধিকাংশ হলেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের । রাজাবাজারে থাকলেও এদের বেশিরভাগ অংশ বিহারের বাসিন্দা । কাজের তাগিদে রাজাবাজারে থাকেন তাঁরা । জানা গেছে, দু'রকম ভাবে কাজ করেন কর্মীরা । নামী-দামী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কাজের বরাত নিয়ে কাজ করে থাকেন একশ্রেণির কারিগর । অন্য আর এক শ্রেণির কারিগর দৈনিক রোজে স্থানীয় ঠিকাদারদের অধীনে কাজ করে থাকেন । এক্ষেত্রে প্রতিদিন আয় হয় 400 থেকে 500 টাকা । সাপ্তাহিক পেমেন্ট করেন ঠিকাদারেরা ।
মার্চ মাস পর্যন্ত সব ঠিকঠাক চলছিল । কিন্তু পরিস্থিতি বদলে দিল লকডাউন । রাজাবাজারে জুতোর কাজে যুক্ত থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকাংশ ইতিমধ্যে ফিরে গেছেন নিজেদের রাজ্যে । যার ফলে প্রায় সুনসান অবস্থা রাজাবাজার চর্মনগরীর। 20 থেকে 25 জন নামমাত্রভাবে কারবার চালাচ্ছেন । বাকি শ্রমিকরা নিজেদের দেশে ফিরে কর্মহীন হয়ে রয়েছেন । অন্যদিকে, অতি স্বল্প সংখ্যক স্থানীয় যে কারিগরেরা রয়েছেন, তাঁঁরা সেভাবে কাজের বরাত পাচ্ছেন না । কার্যত লকডাউন শিথিল হলেও বড় বড় জুতোর শোরুমের বিক্রি একদম তলানিতে । সেকারণে নতুন করে মিলছে না বরাত । ওয়াকিবহাল মহলের মতে, প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন না । স্কুল ছুটি থাকার কারণে পড়ুয়াদের জুতোর প্রয়োজনীয়তা প্রায় নেই বললে চলে । এর ফলে কার্যত লাটে উঠেছে জুতোর ব্যবসা ।
রাজাবাজার মার্কেটের জুতো তৈরির কাঁচামালের এক বিক্রেতা বলেন, "অবস্থা খুব খারাপ । শুধু দোকান খুলছি ও বন্ধ করছি । কোনও বিক্রি নেই ।" জুতো প্রস্তুতকারকরা জানালেন, "লকডাউনের ফলে পরিস্থিতি খুব খারাপ । অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছি ।" একরকম বক্তব্য, শোরুমের জুতো বিক্রেতাদের।