কলকাতা, 25 জুন: এই যে কোরোনা না ফোরোনা, বাঁটুল থাকলে নির্ঘাত শায়েস্তা হত ৷ তুলে আছাড় মারলেও কিছু বলারছিল না ৷ নন্টে-ফন্টের দুষ্টুমিও অবশ্য কম যায় না ! কেলটুদার কেলোর কীর্তি কতবারফাঁস করেছে ৷ কোরোনাকে শায়েস্তা করতে নিশ্চিত একটা ফন্দি আটত মানিকজোড় ৷ কিন্তু, আর সে উপায় নেই ৷ কারণ কলম ছেড়েছেন কিংবদন্তী ৷নারায়ণ দেবনাথ ৷ অর্ধশতকের বেশি সময় ধরে যিনি বাঙালির শৈশব গড়েছেন, 95-তে পা দিয়ে সেই তিনিইশারীরিক অসুস্থার কারণে অবসরে ৷ নয়তো সেদিনও তো বাঁটুলের নতুন কাণ্ড জেনেছে পাঠক ৷তবে, যারা বাংলা কমিকসস্ট্রিপের খবর রাখে, তারা জানে, বাঁটুল আর নন্টে-ফন্টেতে ফুরোয় না নারায়ণ দেবনাথ৷ আছে হাঁদা-ভোদা, ডানপিটে খাঁদু আরকেমিক্যাল দাদু, বাহাদুর বেড়াল, ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ রায়, ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ, কৌশিক রায়, পেটুক মাস্টার বটুকলাল, শুটকি-মুটকী ৷ এরপর একটা প্রশ্ন ওঠে অবধারিত, যখন শিল্পী কলম তুলে রেখেছেন, সেই জীবন সন্ধ্যায় এসে কী মনে হয়? তাঁর প্রিয় চরিত্র কে?
উত্তর জানার আগে বলে রাখাভালো, অফুরান সৃষ্টিশীল থাকাইবাংলার সেরা কমিকস আর্টিস্টের সাফল্যের রহস্য ৷ যখন শুরু করেন তখন প্রফুল্ল চন্দ্রলাহিড়ি বা কাফি খাঁ-র আঁকা শেয়াল পণ্ডিত ছাড়া তেমন কমিকস ছিল না বাজারে ৷ এমনসময় 1962 সালে শুকতারা পত্রিকায়প্রকাশিত হয় হাঁদা-ভোঁদা । শুরুতেই সমাদর পায় । শিল্পীও একের পর এক জমজমাট গল্পনিয়ে হাজির হন পাঠকের দরবারে ৷ 1965-তে আসে বাঁটুল দি গ্রেট ।যে সম্ভবত বাঙালির প্রথম সুপার হিরো । যদিও শুরুতে বাঁটুলকে সুপার হিরো হিসেবেগড়ে তোলেনি স্রষ্টা । অতিমানবিক ক্ষমতা সম্পন্ন বাঁটুলের আত্মপ্রকাশ খানিক পরে ।তবে, বাঁটুল বাঁটুল হয়ে ওঠেতার শক্তিপ্রদর্শনের পর থেকেই ৷ জনপ্রিয়তার শিখর ছুঁয়ে ফেলে নারায়ণ দেবনাথেরকল্পিত চরিত্র ৷ আরও কিছুদিন পর 1969-এ আবির্ভাব নন্টে-ফন্টের। জনপ্রিয়তায় যে জুটি বাঁটুলের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে ৷ তারপর আরও আরও চরিত্র ৷কিন্তু এই যে এত চরিত্র, তাদের এত এত কাণ্ড ৷ যাপড়ে মুগ্ধ পাঠক ৷ স্রষ্টার কী মনে হয় ? কোন চরিত্রটিকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবেসেছেন?
এই প্রশ্নে হাসেন বাংলা কমিকসস্ট্রিপের রাজা ৷ খানিক থমকে বললেন, "পাঠকরা বলে, বাঁটুল সেরা ৷ সবাই যখন বলে... আমারওতাই মনে হয় ৷ "
বলেন,"পাঠকেরভালোবাসাটাই আসল ৷ এই যে সবাই পড়েছে, জেনেছে ৷ এটাই বড় কথা ৷ "
এখনওকাজ করেন?
"নাঃ, আর পারি না ৷"
বিষণ্ণসঙ্গে লাগে শিল্পীকে ৷ জানান, কোরোনার আগে থেকেই বাইরে বেরোতে পারেন না ৷ হাঁটলে মাথা ঘোরে৷ অথচ, ওই তোটেবিল ৷ এই সেদিনও অক্লান্ত ছিলেন ৷ বাঙালির মনে হত, নারায়ণ দেবনাথের কালি অফুরান, অনন্ত ! জেনারেশনের পর জেনারেশন বেড়েউঠল হাঁদা-ভোদা, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল পড়তে পড়তে ! কিংবদন্তীশিল্পীর সেই মহাকাণ্ডের সাক্ষী দিচ্ছে শোকেসে রাখা, দেওয়ালে টাঙানো প্রেসিডেন্ট স্পেশালরিকগনিশন অ্যাওয়ার্ড, সাহিত্যআকাদেমি পুরস্কার, বঙ্গবিভূষণ, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েরডি-লিট ইত্যাদি ইত্যাদি... ।