ETV Bharat / city

পরাধীন ভারতে গৃহবন্দি হতে হয়েছিল কলকাতার তৎকালীন প্রাক্তন মেয়র সুভাষচন্দ্রকেও - গৃহবন্দি

নারদ কাণ্ডের জেরে গৃহবন্দি কলকাতার তিন প্রাক্তন মেয়র ৷ এই ঘটনা মনে করায় অতীতের এক ঘটনা ৷ পরাধীন ভারতে গৃহবন্দি করা হয়েছিল কলকাতার তৎকালীন প্রাক্তন মেয়র নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকেও ৷ আজ আরও একবার বাঙালির হয়তো ফিরে যাবে অতীতের সেই দিনগুলোতে ৷

Narada Case : In British Rule former mayor Netaji Subhash Chandra Bose was also in house arrest
পরাধীন ভারতে গৃহবন্দি হতে হয়েছিল কলকাতার তৎকালীন প্রাক্তন মেয়র সুভাচন্দ্রকেও
author img

By

Published : May 21, 2021, 7:39 PM IST

Updated : May 21, 2021, 11:01 PM IST

কলকাতা, 21 মে : কিংবদন্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ নতুন কিছু নয় ৷ আমরা যারা খুব সাধারণ, তারা নানা সময়, নানাভাবেই তাঁদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি ৷ এই প্রচেষ্টা একেবারেই নিজেদের উন্নীত করে আরও ভাল মানুষ হিসাবে প্রমাণ করার উদ্যোগ মাত্র ৷ কিন্তু কখনও কখনও এমন কিছু ঘটনাও ঘটে যায়, যা অনভিপ্রেত হওয়া সত্ত্বেও অতীতের কোনও স্মৃতিকে উসকে দেয় ৷ যার সঙ্গে হয়তো জড়িয়ে রয়েছে কোনও কিংবদন্তীর নাম ৷ যিনি নিজে অনন্য, অতুলনীয়, তেমনই কোনও সেরার সেরা মানুষের সঙ্গে হঠাৎ করেই জড়িয়ে যায় বর্তমানের কোনও ঘটনা প্রবাহ ৷

করোনা আবহে রাজ্যের উত্তাপ বাড়াচ্ছে পাঁচ বছর আগের এক অনভিপ্রেত ঘটনা ৷ 2016-এ সামনে আসে নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ ৷ অভিযোগ ওঠে, ঘুষ নেওয়ার ৷ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রীকে ৷

একুশের ভোটের পালা মিটতেই রাজ্যজুড়ে কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার ৷ আর ঠিক তখনই শীতঘুম ছেড়ে ফের ময়দানে হাজির সিবিআই ৷ নারদ কাণ্ডে জালে তুলেছে চার হেভিওয়েটকে ৷ যাঁদের মধ্যে তিনজনই কলকাতা পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র ৷ এঁরা হলেন, সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়, শোভন চট্টোপাধ্য়ায় এবং ফিরহাদ হাকিম ৷

প্রথমে গ্রেফতারি, পরে অন্তর্বর্তী জামিন, তারপর তাতে স্থগিতাদেশ এবং সব শেষে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ ৷ সব মিলিয়ে ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে নারদ কাণ্ডের লেটেস্ট আপডেট ৷ আর এই ঘটনাই মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের এক লড়াইয়ের স্মৃতি ৷ যে স্মৃতি বাঙালির গর্বের, হয়তো বা কিছুটা অহংকারেরও ৷ কারণ, সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ৷ জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির দক্ষ নেতৃত্বের প্রামাণ্য দলিল ৷

1940 সালের জুলাই মাস ৷ পরাধীন ভারতে ইংরেজ শাসকের হাতে গ্রেফতার হন দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷ তবে কারাগারের বদলে তাঁর ঠাঁই হয় নিজের বাড়িতে ৷ বলা হয়, বাড়িতেই ‘বন্দি’ থাকতে হবে তাঁকে ৷ উদ্দেশ্য, ব্রিটিশ বিরোধী শক্তি বিশেষত জার্মানির সঙ্গে নেতাজির সখ্য বানচাল করা ৷ যদিও ইংরেজেদের সেই ফন্দি কাজে আসেনি ৷ তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়েই গৃহবন্দি দশা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন সুভাষচন্দ্র ৷ 1941 সালের 16 জানুয়ারি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি ৷ তার পরের ঘটনা সকলেরই জানা ৷

প্রশ্ন উঠতেই পারে, রাজ্য়ের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এর সম্পর্ক কী ? আসলে গৃহবন্দি সুভাষচন্দ্রও কিন্তু ছিলেন শহর কলকাতার তৎকালীন প্রাক্তন মেয়র ৷ 1930 সালের 22 অগাস্ট থেকে 1931 সালের 15 এপ্রিল পর্যন্ত এই দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি ৷

এটা ঠিক, যে পরাধীন ভারতের সেই সংগ্রামের সঙ্গে আজকের স্বাধীন ভারতের কোনও তুলনা টানা হয়তো চূড়ান্ত ধৃষ্টতা ৷ তবুও এখনকার ঘটনাক্রমে অতীতের অনুরণন হওয়াটা বোধ হয় খুব একটা অস্বাভাবিক নয় ৷ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বঙ্গসন্তান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর যুদ্ধ ঘোষণা শুধুমাত্র বাঙালির নয়, সমগ্র দেশবাসীরই সম্মানের লড়াই ছিল ৷ নেতাজির সেই নেতৃত্ব আজও উদ্বুদ্ধ করে বাঙালিকে ৷

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ইদানিং আগ্রাসন বড়ই লক্ষ্যণীয় ৷ একুশের বিধানসভা ভোটের মতো নির্বাচনী লড়াই বাংলা আগে কখনও দেখেছে কিনা, তাও বিরাট প্রশ্ন ৷ বাঙালির অহং, বাঙালির জাত্যাভিমান এই ভোটে বড় ফ্য়াক্টর ছিল ৷ এমনকী বর্তমানে নারদ পর্বের মধ্যেও অনেকেই বাঙালি অহংকে দমাতে না পারার প্রতিহিংসা খুঁজে পাচ্ছেন ৷ আর নেতাজিকে বাদ দিয়ে বাঙালির অহং চিরকালই অসম্পূর্ণ ৷

আরও পড়ুন : শোভন-বৈশাখী মিমে ঝড় বইছে সমাজের ভার্চুয়াল দেওয়ালে

সুব্রত-ফিরহাদ-শোভনরা বর্তমান সময়ের জননেতা, রাজনীতিক ৷ তাঁরা কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক নন ৷ তাঁদের সঙ্গে নেতাজির তুলনা তাঁরা নিজেরাও করবেন না ৷ কিন্তু আজ তাঁরা যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাতে হয়তো ঘরবন্দি কোনও বাঙালি দাদু তাঁর পরবর্তী প্রজন্মকে আবারও বলবেন নেতাজির কথা ৷ শোনাবেন, নেতাজিকে কীভাবে হাতের মুঠোয় পুরতে চেয়েছিল ভিনদেশি শাসক ৷ আর কীভাবে তিনি সেই জাল কেটে নিজের উদ্দেশ্যে সাধনে ব্রতী হয়েছিলেন ৷ কার্যত লকডাউনের রাজ্য়ে এমন হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক ?

তথ্য সহায়তা : সুতপা সুর, ইতিহাসের শিক্ষিকা, বাগবাজার মাল্টিপার্পাস গার্লস স্কুল ৷

[বি.দ্র. প্রতিবেদনটিতে নেতাজির সঙ্গে কারও তুলনা করা হয়নি । অতীতে বা বর্তমানে কলকাতার মেয়ররা গৃহবন্দি হয়েছেন, সেই সত্য খবরটুকু লেখা হয়েছে মাত্র ]

কলকাতা, 21 মে : কিংবদন্তীদের পদাঙ্ক অনুসরণ নতুন কিছু নয় ৷ আমরা যারা খুব সাধারণ, তারা নানা সময়, নানাভাবেই তাঁদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি ৷ এই প্রচেষ্টা একেবারেই নিজেদের উন্নীত করে আরও ভাল মানুষ হিসাবে প্রমাণ করার উদ্যোগ মাত্র ৷ কিন্তু কখনও কখনও এমন কিছু ঘটনাও ঘটে যায়, যা অনভিপ্রেত হওয়া সত্ত্বেও অতীতের কোনও স্মৃতিকে উসকে দেয় ৷ যার সঙ্গে হয়তো জড়িয়ে রয়েছে কোনও কিংবদন্তীর নাম ৷ যিনি নিজে অনন্য, অতুলনীয়, তেমনই কোনও সেরার সেরা মানুষের সঙ্গে হঠাৎ করেই জড়িয়ে যায় বর্তমানের কোনও ঘটনা প্রবাহ ৷

করোনা আবহে রাজ্যের উত্তাপ বাড়াচ্ছে পাঁচ বছর আগের এক অনভিপ্রেত ঘটনা ৷ 2016-এ সামনে আসে নারদ স্টিং অপারেশনের ফুটেজ ৷ অভিযোগ ওঠে, ঘুষ নেওয়ার ৷ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের তৎকালীন কয়েকজন নেতা ও মন্ত্রীকে ৷

একুশের ভোটের পালা মিটতেই রাজ্যজুড়ে কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার ৷ আর ঠিক তখনই শীতঘুম ছেড়ে ফের ময়দানে হাজির সিবিআই ৷ নারদ কাণ্ডে জালে তুলেছে চার হেভিওয়েটকে ৷ যাঁদের মধ্যে তিনজনই কলকাতা পৌরনিগমের প্রাক্তন মেয়র ৷ এঁরা হলেন, সুব্রত মুখোপাধ্য়ায়, শোভন চট্টোপাধ্য়ায় এবং ফিরহাদ হাকিম ৷

প্রথমে গ্রেফতারি, পরে অন্তর্বর্তী জামিন, তারপর তাতে স্থগিতাদেশ এবং সব শেষে গৃহবন্দি থাকার নির্দেশ ৷ সব মিলিয়ে ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে নারদ কাণ্ডের লেটেস্ট আপডেট ৷ আর এই ঘটনাই মনে করিয়ে দিচ্ছে অতীতের এক লড়াইয়ের স্মৃতি ৷ যে স্মৃতি বাঙালির গর্বের, হয়তো বা কিছুটা অহংকারেরও ৷ কারণ, সেই ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ৷ জড়িয়ে রয়েছে বাঙালির দক্ষ নেতৃত্বের প্রামাণ্য দলিল ৷

1940 সালের জুলাই মাস ৷ পরাধীন ভারতে ইংরেজ শাসকের হাতে গ্রেফতার হন দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ৷ তবে কারাগারের বদলে তাঁর ঠাঁই হয় নিজের বাড়িতে ৷ বলা হয়, বাড়িতেই ‘বন্দি’ থাকতে হবে তাঁকে ৷ উদ্দেশ্য, ব্রিটিশ বিরোধী শক্তি বিশেষত জার্মানির সঙ্গে নেতাজির সখ্য বানচাল করা ৷ যদিও ইংরেজেদের সেই ফন্দি কাজে আসেনি ৷ তাদের চোখকে ফাঁকি দিয়েই গৃহবন্দি দশা থেকে নিজেকে মুক্ত করেন সুভাষচন্দ্র ৷ 1941 সালের 16 জানুয়ারি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান তিনি ৷ তার পরের ঘটনা সকলেরই জানা ৷

প্রশ্ন উঠতেই পারে, রাজ্য়ের বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে এর সম্পর্ক কী ? আসলে গৃহবন্দি সুভাষচন্দ্রও কিন্তু ছিলেন শহর কলকাতার তৎকালীন প্রাক্তন মেয়র ৷ 1930 সালের 22 অগাস্ট থেকে 1931 সালের 15 এপ্রিল পর্যন্ত এই দায়িত্ব সামলেছিলেন তিনি ৷

এটা ঠিক, যে পরাধীন ভারতের সেই সংগ্রামের সঙ্গে আজকের স্বাধীন ভারতের কোনও তুলনা টানা হয়তো চূড়ান্ত ধৃষ্টতা ৷ তবুও এখনকার ঘটনাক্রমে অতীতের অনুরণন হওয়াটা বোধ হয় খুব একটা অস্বাভাবিক নয় ৷ ব্রিটিশের বিরুদ্ধে বঙ্গসন্তান নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর যুদ্ধ ঘোষণা শুধুমাত্র বাঙালির নয়, সমগ্র দেশবাসীরই সম্মানের লড়াই ছিল ৷ নেতাজির সেই নেতৃত্ব আজও উদ্বুদ্ধ করে বাঙালিকে ৷

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও ইদানিং আগ্রাসন বড়ই লক্ষ্যণীয় ৷ একুশের বিধানসভা ভোটের মতো নির্বাচনী লড়াই বাংলা আগে কখনও দেখেছে কিনা, তাও বিরাট প্রশ্ন ৷ বাঙালির অহং, বাঙালির জাত্যাভিমান এই ভোটে বড় ফ্য়াক্টর ছিল ৷ এমনকী বর্তমানে নারদ পর্বের মধ্যেও অনেকেই বাঙালি অহংকে দমাতে না পারার প্রতিহিংসা খুঁজে পাচ্ছেন ৷ আর নেতাজিকে বাদ দিয়ে বাঙালির অহং চিরকালই অসম্পূর্ণ ৷

আরও পড়ুন : শোভন-বৈশাখী মিমে ঝড় বইছে সমাজের ভার্চুয়াল দেওয়ালে

সুব্রত-ফিরহাদ-শোভনরা বর্তমান সময়ের জননেতা, রাজনীতিক ৷ তাঁরা কোনও স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক নন ৷ তাঁদের সঙ্গে নেতাজির তুলনা তাঁরা নিজেরাও করবেন না ৷ কিন্তু আজ তাঁরা যে পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাতে হয়তো ঘরবন্দি কোনও বাঙালি দাদু তাঁর পরবর্তী প্রজন্মকে আবারও বলবেন নেতাজির কথা ৷ শোনাবেন, নেতাজিকে কীভাবে হাতের মুঠোয় পুরতে চেয়েছিল ভিনদেশি শাসক ৷ আর কীভাবে তিনি সেই জাল কেটে নিজের উদ্দেশ্যে সাধনে ব্রতী হয়েছিলেন ৷ কার্যত লকডাউনের রাজ্য়ে এমন হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক ?

তথ্য সহায়তা : সুতপা সুর, ইতিহাসের শিক্ষিকা, বাগবাজার মাল্টিপার্পাস গার্লস স্কুল ৷

[বি.দ্র. প্রতিবেদনটিতে নেতাজির সঙ্গে কারও তুলনা করা হয়নি । অতীতে বা বর্তমানে কলকাতার মেয়ররা গৃহবন্দি হয়েছেন, সেই সত্য খবরটুকু লেখা হয়েছে মাত্র ]

Last Updated : May 21, 2021, 11:01 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.