কলকাতা, 11 জুন : মুকুল রায়ের (Mukul Roy) ঘর ওয়াপসি ৷ বিজেপি ছেড়ে ফের তৃণমূলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) এক সময়ের একনিষ্ঠ সেনানী ৷ ঘাস-ফুল পেরিয়ে পদ্ম ঘুরে ফের ঘাস-ফুলে ফুটল মুকুল - কীভাবে চক্রাকারে ঘুরল তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বৃত্ত ? নানা সময়ে নানা ভাবে কীভাবে দিনে দিনে বাড়ল তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব ? একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক ৷
রাজনীতির আঙিনায় ফুটল মুকুল
যুব কংগ্রেস নেতা হিসেবে রাজনৈতিক জীবন শুরু মুকুল রায়ের ৷ যত দিন যায়, ততই ধীরে ধীরে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেন ৷ এরপর 1998 সালে জাতীয় কংগ্রেস ছেড়ে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস দল গঠন করেন মমতা ৷ সেই দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন মুকুল রায় ৷ তার ঠিক তিন বছর পর, 2001 সালে তিনি জগদ্দল বিধানসভা কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি ৷ তাঁকে হারিয়ে দেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী হরিপদ বিশ্বাস ৷ বিধায়ক হতে না পারলেও দলে ক্রমেই গুরুত্ব বাড়তে থাকে তাঁর ৷ 2006 সালে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হন ৷ সে বছরই তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে রাজ্যসভারও সদস্য হিসেবে মনোনীত হন মুকুল রায় ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো ছিলেনই ৷ তিনি ছাড়াও বিরোধী দল হিসেবে রাজ্যে তৃণমূলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করিয়ে দেওয়ার কৃতিত্বের অবশ্যই অন্যতম দাবিদার মুকুল রায় ৷
কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের দায়িত্বে
দ্বিতীয় ইউপিএ মন্ত্রিসভায় জাহাজ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন মুকুল রায় ৷ পরে পেয়েছিলেন রেলমন্ত্রকও ৷ 2012 সালে রেল বাজেটে ভাড়া বৃদ্ধি হলে অসন্তুষ্ট হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তাঁর দাবি মতো সেই সময়ের রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদী ইস্তফা দিলে রেলমন্ত্রকে বসানো হয় মুকুলকে ৷
আরও পড়ুন: তৃণমূলে ফিরতে চাওয়া নেতাদের ‘মল-মূত্রের’ সঙ্গে তুলনা তথাগত রায়ের
পদ্মের ডালে মুকুল
এরপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে ৷ কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার ৷ এ দিকে সারদা ও নারদ কেলেঙ্কারিতে একে একে নাম জড়ায় মুকুলের ৷ প্রথমদিকে তাঁকে সমর্থন করলেও পরে একটু একটু করে তৃণমূলের সঙ্গে মুকুলের দূরত্ব বাড়তে থাকে ৷ বাড়তে থাকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার চাপও ৷ লাভপুরে সিপিএম সমর্থক তিন ভাইয়ের হত্যার মামলাতেও জড়ায় মুকুল রায়ের নাম ৷ এরপর 2017 সালে আচমকই ঘাস-ফুল থেকে মুকুল ঝরে পড়ে ৷ মহাপঞ্চমীর বিকেলে মুকুল রায় ঘোষণা করেন, তিনি আর তৃণমূলের সঙ্গে থাকছেন না ৷ এরপর 11 অক্টোবর তিনি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেন ৷ আর 3 নভেম্বর হাতে তুলে নেন গেরুয়া পতাকা ৷
আরও পড়ুন : মমতা-অভিষেকের বিরুদ্ধে শুভেন্দুকেই বঙ্গ-বিজেপির মুখ করার সম্ভাবনা
বিজেপিতে উত্থান
2017 সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরও অস্বস্তি কাটেনি এই বর্ষিয়ান নেতার ৷ তিনি দলে যোগ্য গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না বলে দলের অন্দরে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন বলে শোনা যায় ৷ তবে 2021-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনকে ঢেলে সাজায় বিজেপি ৷ মুকুল রায়কে দলের সর্ব-ভারতীয় সভাপতি করা হয় ৷ বঙ্গ দখলের লক্ষ্যকে পাখির চোখ করে মুকুলের নেতৃত্বের উপর আস্থা রাখে নরেন্দ্র মোদির দল ৷ একের পর এক তৃণমূল নেতাকে ভাঙিয়ে দলবদল করানো, তারকা প্রার্থীদের গেরুয়া শিবিরে টানা, প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মতো কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে পরপর প্রচারে এনে ঝড় তোলা - মুকুলের এমন নানা পদক্ষেপে বিজেপির পালে কিছুটা হলেও হাওয়া লাগে ৷ তবে তাতে ইতিবাচক কিছু যে হয়নি, তার প্রমাণ আজ আমাদের সামনে ৷ মুকুল নিজে খুব একটা আগ্রহী না হলেও তাঁকে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা থেকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করায় বিজেপি ৷ 35 হাজার 89 ভোটের ব্যবধানে জয়ও আসে ৷ তবে ভরাডুবি হয় গেরায়া শিবিরের ৷ ক্ষমতায় আসা তো দূরস্ত, দুই অঙ্কের সংখ্যাও পেরোতে পারে মোদি-শাহরা ৷
আরও পড়ুন: লবিবাজি করে অবজ্ঞার করুণ পরিণতি, ফেসবুকে ক্ষোভ অনুপমের
মুকুলের ঘর ওয়াপসি
এরপর থেকেই হাওয়া ঘুরতে শুরু করে ৷ বেসুরো হতে থাকে সুর ৷ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর নামও আলোচনায় ছিল ৷ কিন্তু তিনি অসুস্থ বলে জানিয়ে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ৷ বিরোধী দলনেতা করা হয় বিজেপির নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীকে ৷ যে শুভেন্দু বরাবর মুকুলবিরোধী বলে পরিচিত দলের অন্দরে ৷ এরপর বিজেপির কোনও বৈঠকেও যোগ দেনন মুকুল রায় ৷ ক্রমেই তিনি দলে নিষ্ক্রিয় হতে থাকেন ৷ তখন থেকেই শুরু হয় তাঁর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা ৷ সেই জল্পনা আরও জোরালো হয় অসুস্থ মুকুল-জায়াকে দেখতে হাসপাতালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের আগমনে ৷ মুকুলের পুত্র শুভ্রাংশু রায়ের মুখেও শোনা যায় মমতা স্তুতি ৷ জল্পনা কাটিয়ে সেই বৃত্ত এ বার সম্পূর্ণ হল ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই ফের ঘাস-ফুলে ফুটল মুকুল ৷ তৃণমূলে ঘর ওয়াপসি হল দলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের ৷