কলকাতা, 27 জুন: পিএসি চেয়ারম্যানের (PAC Chairman) পদ থেকে ইস্তফা দিলেন মুকুল রায় (Mukul Roy) ৷ শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে ওই পদে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি ৷ সোমবার ই-মেল মারফত বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Biman Banerjee) নিজের ইস্তফাপত্র পাঠান মুকুল ৷
প্রসঙ্গত, পিএসি চেয়ারম্যান পদে মুকুল রায়ের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছিল ৷ অন্যদিকে, অসুস্থতার কারণে নিয়ম করে পাবলিক অ্যাকাউন্ট কমিটির বৈঠকে যোগ দিতেও পারছিলেন না তিনি ৷ এই নিয়ে কমিটির অন্যান্য সদস্যের মধ্যে ক্ষোভ ছিল ৷ শুধু তাই নয়, মুকুলকে এই পদ থেকে সরানোর দাবিতে বিজেপি আদালত পর্যন্ত গিয়েছে ৷ কিন্তু তাঁকে সরানো সম্ভব হয়নি ৷ এই প্রেক্ষাপটে আচমকা নিজে থেকেই সরে দাঁড়ালেন মুকুল ৷ তবে, বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে পাঠানো ই-মেলে মুকুল তাঁর পদত্যাগের কারণ হিসাবে শারীরিক অসুস্থতার বিষয়টি জানিয়েছেন কিনা, সেটি স্পষ্ট নয় ৷
এ দিন টেলিফোনে মুকুল রায়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিল ইটিভি ভারত ৷ কিন্তু, সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয় ৷ তবে, মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর শরীর ভালো নেই ৷ সেই কারণেই এই ইস্তফা ৷ শীর্ষ নেতৃত্বের মত নিয়েই এই পদক্ষেপ করেছেন মুকুল ৷
আরও পড়ুন: Speaker on Mukul roy : খারিজ হচ্ছে না বিধায়ক পদ, বিজেপিতেই মুকুল; রায় স্পিকারের
উল্লেখ্য, মুকুলের বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই সরব বিজেপি ৷ পাশাপাশি, পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান পদ মুকুলকে দেওয়া নিয়েও ক্ষোভ ছিল গেরুয়া শিবিরে ৷ প্রসঙ্গত, 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন মুকুল ৷ সেই বছরেরই 11 জুন তৃণমূল ভবনে গিয়ে বিজেপি ছেড়ে শাসকদলে ফেরেন তিনি ৷ তারপর থেকেই তাঁর বিধায়ক পদ খারিজের দাবিতে কখনও স্পিকার, আবার কখনও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে বিজেপি পরিষদীয় দল ৷ কিন্তু, অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্য়োপাধ্য়ায় দু'বার জানান, মুকুল এখনও বিজেপি-তেই রয়েছেন ! তাই তিনি বিজেপি-র বিধায়ক ৷ মুকুল যে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন, তার কোনও প্রমাণ নেই বলেও দাবি করেন অধ্যক্ষ ৷ এরই মধ্যে গত 25 জুন যে 41টি কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়, তার মধ্যে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটিও ছিল ৷
বিজেপি থেকে তৃণমূলে ফেরার পরই মুকুলকে পিএসি-র চেয়ারম্যান করা হয় ৷ কিন্তু, এত বছর ধরে বিরোধী বিধায়কদেরই মূলত এই পদে বসানো হয়েছে ৷ সেক্ষেত্রে দলবদল করার পর তাঁকে কীভাবে এবং কেন পিএসি চেয়ারম্য়ান করা হল, এ নিয়ে সব মহলেই প্রশ্ন ওঠে ৷ যদিও, সরকারপক্ষ সে সবকে পাত্তা দেয়নি ৷
এই অবস্থায় মুকুল রায়ের হঠাৎ পদত্যাগ নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি ৷ দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, "সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ভাবে, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার রীতিনীতি ভেঙে, সমস্ত ঐতিহ্যকে দূরে সরিয়ে রেখে বিজেপি থেকে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মুকুল রায়কে পিএসসি চেয়ারম্যান পদে নিযুক্ত করা হয় ৷ আমরা অতীতেও দাবি করেছিলাম, বালুরঘাট থেকে নির্বাচিত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অশোক লাহিড়িকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হোক ৷ তৃণমূল কংগ্রেসের দখলদারির রাজনীতির কারণেই বিধানসভার রীতিনীতি ভেঙে মুকুল রায়কে ওই পদে দায়িত্ব দেওয়া হয় ৷ অথচ, তিনি যখন আমাদের দলে ছিলেন, তখন গোটা কলকাতায় বড় বড় পোস্টার লাগিয়ে বলা হয়েছিল 'গদ্দার মুকুল রায়' ! অনেকেই তাঁর নাম পর্যন্ত করতেন না ৷ বিধানসভা নির্বাচনের পর তিনি গদাধর হয়ে তৃণমূলে যোগ দেন এবং পিএসি-র চেয়ারম্যান হয়ে যান ৷ মুকুল রায় তো দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ৷ তাহলে এত দেরিতে ইস্তফা কেন ! নাকি এই ইস্তফার পিছনে অন্য কোনও অঙ্ক রয়েছে তৃণমূলের !"
একইসঙ্গে, এই নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ৷ এ দিন তিনি বলেন, "মুকুল রায় কেন ইস্তফা দিয়েছেন, সেটা একমাত্র তিনিই বলতে পারবেন ৷ আর বলতে পারবেন স্পিকার ৷ সবাই জানে, রাজনৈতিক স্বার্থেই মুকুল রায়কে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ৷ এই অবস্থায় মুকুল রায়ের উপর পদত্যাগ করার জন্য কোনও চাপ ছিল, নাকি এটি নাটকের কোনও প্লট, সেটি মুকুল রায় বলতে পারবেন ৷ আর যিনি তাঁকে এই পদে নিয়োগ করেছেন, তিনি বলতে পারবেন ৷"
ওই বিষয়ে বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, "আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনও খবর আসেনি ৷ আমার সচিবালয়ে এসে থাকতে পারে ৷ যদি এসে থাকে, তবে তা এখনও আমার কাছে পৌঁছয়নি ৷ এলে দেখব, চিঠিতে কী রয়েছে ৷ মুকুলের পদত্যাগপত্র আইনমাফিক দেওয়া হয়েছে কি না, তা দেখা হবে ৷ আইনমাফিক দেওয়া হলে তবেই তা গ্রহণ করব ৷ নইলে নয় ৷"