কলকাতা, 25 সেপ্টেম্বর: শনিবারের বারবেলায় ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ফের একবার পৌঁছে গিয়েছিলেন কলকাতার (Kolkata) কুমারটুলিতে (Kumartuli) ৷ গন্তব্য ছিল, রেডিয়ো ম্য়ানের দোকান ! ভাবছেন তো ? কে এই রেডিয়ো ম্যান (Radio Man) ? তাহলে আসুন, আলাপ করিয়ে দিই ৷ বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়া এই মানুষটির নাম, অমিতরঞ্জন কর্মকার ৷ কলকাতার এই নামজাদা কুমোরপাড়াতেই তাঁর এক ফালি দোকান ৷ যার জন্ম হয়েছিল 1952 সালে ৷ লোকে বলে, রেডিয়োর ব্য়ামো যাই হোক, তা সারিয়ে দিতে এই রেডিয়ো ম্য়ানের জুড়ি মেলা ভার !
এদিকে, দরজায় কড়া নাড়ছে দেবীপক্ষ (Durga Puja 2022) ৷ যার শুভ সূচনা হবে রবির ভোরে ৷ বছরের এই একবার অন্তত আজও বাঙালির দিন শুরু হয় সূর্যোদয়ের আগে ৷ ঘরে ঘরে বেজে ওঠে মহিষাসুরমর্দিনী ৷ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সেই উদাত্ত কণ্ঠে দেবীর আবাহন ভিজিয়ে দেয় শ্রোতার চোখের পাতা !
আরও পড়ুন: মহালয়ার আগেই মেগা মহালয়া ! সৌজন্যে আহিরীটোলা সর্বজনীন
অমিতরঞ্জন নিজেই যেন একটা আস্ত ইতিহাসের বই ! আর তাঁর দোকান ? তাকে ছোটখাট একটা মিউজিয়াম বললেও ভুল হবে না ৷ হাল ফ্যাশনের রেডিয়ো থেকে শতাব্দী প্রাচীন 'কথা বলা যন্ত্র' ! সবই মজুত রয়েছে সেখানে ৷ চরম ব্যস্ততার মধ্যেও শান্তভাবে সাংবাদিকদের কৌতুহল মেটালেন তিনি ৷ জানালেন, আগে দোকানে অনেক কর্মচারী ছিলেন ৷ নয়ের দশক পর্যন্ত ব্যবসায় লক্ষ্মীলাভ হত প্রচুর ৷ কিন্তু, তারপর থেকেই শুরু হয় ভাটার টান ৷ রেডিয়ো ছেড়ে টিভি, কম্পিউটার, স্মার্ট ফোনে অভ্যস্থ হয়ে পড়ে বাঙালি ৷ অমিতরঞ্জনের কর্মচারীরাও একে একে তাঁর দোকান ছাড়েন ৷ এখন তাঁদের কেউ সিকিউরিটি গার্ড ৷ কেউ বা রাস্তার মোড়ে দোকান দিয়েছেন পাউরুটি ঘুগনির ৷
তাহলে তাঁর চলে কীভাবে ? বেঁচে থাকার জন্য খোরাকিটুকু তো জোটাতে হবে ৷ এমন প্রশ্নেও বিশেষ বিচলিত নন অমিতরঞ্জন ৷ জানালেন, 2010 থেকে একটু একটু করে হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা ৷ এফএম-এর সৌজন্যে মানুষ আবার রেডিয়ো শুনছে ৷ ফলে তাঁরও কাজ ফুরিয়ে যায়নি ৷
আর মহালয়া এলে ? তখন কি ব্যস্ততা বাড়ে ? জবাবে রেডিয়ো ম্য়ান জানালেন, তা বাড়ে ৷ যেসব বাড়িতে সারাবছর রেডিয়ো চলে না, সেইসব বাড়ির লোকেরাও মহালয়ার ঠিক আগে গুটি গুটি পায়ে তাঁর দোকানের সামনে এসে হাজির হন ৷ তাঁদের হাতে থাকে রকমারি সব রেডিয়ো ৷ তাদের কারও শরীর সস্তা প্লাস্টিকের, আবার কেউ বা বার্ধক্য়ের ভারে লড়ঝড়ে ৷ তা 'রোগী' যেমনই হোক, তাতে কোনও বাছবিচার করেন না অমিতরঞ্জন ৷ নিজের এত বছরের অভিজ্ঞতায় সারিয়ে তোলেন তাদের সকলকেই ৷ বদলে নেন নিজের পারিশ্রমিক ৷ তাতেই সংসার চলে রেডিয়ো ম্য়ানের ৷ আর সুস্থ রেডিয়ো নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় আমবাঙালি ৷ অপেক্ষা শুরু হয় মহালয়ার ভোরের ৷