কলকাতা, 1 মে: জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি তাঁর জীবনের আমৃত্যু সাক্ষী । পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বের রবীন্দ্র অনুরাগীদের অবশ্য গন্তব্য এই বাড়ি । যেখানে তাঁরা গিয়ে বিশ্বকবির জীবনের বিভিন্ন দিকের সঙ্গে পরিচিত হন । ঋদ্ধ হন । একযুগ আগে এই বাড়িতে আরও একটি সংগ্রহশালা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল । যেখানে বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের কিংবদন্তি মানুষের কাজের সংগ্রহ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয় ।
বিষয়টির বাস্তবায়ন করতে তদানীন্তন উপাচার্য করুণাসিন্ধু দাসের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য । তাঁর চেষ্টা এবং উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে সর্বত সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন মান্না দের জীবনীকার গৌতম রায় । মান্না দে সঙ্গীত অ্যাকাডেমির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় 2009 সালের 28 মে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে মান্না দে সংগ্রহশালার পথ চলার শুরু । যা উদ্বোধন করেছিলেন মান্না দে স্বয়ং । স্ত্রী সুলোচনা দে-কে সঙ্গে নিয়ে এই সংগ্রহশালা ঘুরে দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন । রবি ঠাকুরের বাড়িতে তৈরি সংগ্রহশালায় প্রথম তাঁর সবকিছু নিয়ে আর্কাইভ তৈরি হয়েছে দেখে আপ্লুত হয়েছিলেন । এই আর্কাইভের উদ্দেশ্য ছিল রবীন্দ্র তীর্থে বাংলার অন্যান্য কিংবদন্তিদের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো ।
শুরু করলেও জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে মান্না দে-র নামাঙ্কিত আর্কাইভ অন্ধকারে কার্যত তলিয়ে গিয়েছে । এই অধোগতির কারণ হিসেবে সঙ্গীত শিল্পীর জীবনীকার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দায়ী করেছেন । গৌতম রায়ের (Goutam Roy on Manna Dey) কথায়, “এখন ওই আর্কাইভ আবর্জনা ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে । বর্তমান উপাচার্যকে বলেও কিছু করা যাচ্ছে না । এই অবস্থায় আমরা জিনিসপত্রগুলো ফেরত চেয়েছিলাম । কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া জিনিস ফেরত দেওয়ার নিয়ম নেই । ফলে মূল্যবান ছবি, গান সবকিছু ওখানে অবহেলায় পড়ে রয়েছে । নষ্ট হচ্ছে ৷”
আরও পড়ুন: Manna Dey : মৃত্যুর আট বছর পরও হৃদয়ে রয়ে গিয়েছেন মান্না
কিংবদন্তি প্রয়াত শিল্পীর আজ 103তম জন্মদিন। 1919 সালে জন্মেছিলেন কলকাতার সিমলে স্ট্রিটে । তাঁর বাড়িটি স্বামী বিবেকানন্দনের পাড়ায় । যা নিয়ে গর্ব ছিল মান্না দে-র । স্কটিশ চার্চের প্রাক্তনী, গোবর গোহর আখড়ায় কুস্তি করা মানা দে-র গানের জগতে প্রবেশ কাকা কৃষ্ণচন্দ্র দে-র সহযোগী হিসেবে ৷ কিংবদন্তি মানুষটিকে নিয়ে সঙ্গীতপ্রেমীদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো । দিন যত যাচ্ছে মান্না প্রিয়তা বাড়ছে । তাঁর সবকিছু নিয়ে একটি সংগ্রহশালা তৈরির ইচ্ছে থাকলেও তা রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় আটকে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন গৌতম রায় ৷ অভিমানের সুরে বললেন, “আমার হাওড়ার বাড়িতে মান্না দে-র দুষ্প্রাপ্য ছবি, ব্যবহার্য জিনিস, গানের রেকর্ডিং সবকিছু রয়েছে । এক টুকরো জমি চেয়ে বারবার চিঠি দিয়েছি । কিন্তু প্রাপ্তি স্বীকার পর্যন্ত করা হয় না । এত সংগ্রহ কোথায় কীভাবে রাখা হবে, এর ভবিষ্যৎ কী, উত্তর আমার অজানা । আসলে মান্না দে-র নামে তো ভোট বাড়ে না ৷"
পেশায় প্রযুক্তিবিদ মানুষটির এই চেষ্টার ভবিষ্যৎ এখন প্রশ্নের মুখে । অথচ কিংবদন্তি শিল্পীকে জীবনের বেলা শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেঙ্গালুরুতে গিয়ে সম্মানজ্ঞাপন করে এসেছিলেন । 103 বছরের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে অবহেলা মনে করিয়ে দেয় শিল্পীরই গাওয়া বিখ্যাত গানের লাইন, 'জিন্দেগি ক্যায়সি হ্যায় পহেলি হায়, কভি ইয়ে হাসায়ে, কভি ইয়ে রুলায়ে' ।