কলকাতা, 26 জানুয়ারি : রেড রোডে 73 তম প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে মুখোমুখি রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় (Bengal Governor Jagdeep Dhankhar) ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কিন্তু সেই সাক্ষাৎ মোটেও মধুর ছিল না, তা দু’জনকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ৷
বুধবার ওই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আগে আসেন ৷ তার কিছুক্ষণ পর এসে পৌঁছান রাজ্যপাল ৷ রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর একেবারে সামনে চলে আসার পর তিনি উঠে দাঁড়ান ৷ তার পর অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে এগিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Bengal CM Mamata Banerjee) ৷ সাংবিধানিক রীতি মেনে মেনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল ছবি তুলেছেন বটে, কিন্তু সেখানেও ধরা পড়েছে 'অলঙ্ঘনীয় দূরত্ব' । রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা চাইছেন, এমন ছবিও সামান্য সময়ের জন্য ধরা রয়েছে ক্যামেরায় । তবে মুখ্যমন্ত্রী বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝিয়ে দিয়েছে তিনি খুশি নন ।
এর পর রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে নমস্কার জানান ৷ মুখ্যমন্ত্রীও প্রতি নমস্কার জানান ৷ ব্যাস, ওই টুকুই৷ তার পর আর রাজ্যের সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক প্রধানের মধ্যে কোনও বার্তা বিনিময় হতে দেখা যায়নি (mamata dhankhar in republic day parade at red road) ৷
ইদানীং রাজ্য সরকার ও রাজভবনের মধ্যে সম্পর্ক যেভাবে আদায়-কাঁচকলায় পরিণত হয়েছে । তার থেকেই এমন পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল । মিনিটখানেকের সাক্ষাতে দু'জনের শরীরী ভাষাতেই ধরা পড়েছে মঙ্গলবারের ঘটনার অভিঘাত । যেভাবে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যপাল একহাত নিয়েছিলেন, তাতে এমনটাই স্বাভাবিক মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
অন্যদিকে বিতর্ক পিছনে ফেলে 73 তম প্রজাতন্ত্র দিবসে রেড রোডে প্রদর্শিত হল নেতাজির ট্যাবলো । দিল্লি এবং কলকাতার দুই জায়গাতেই প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনে নেতাজির ট্যাবলো দেখা গিয়েছে । তবে গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্র-রাজ্য যে সংঘাতের আবহ তৈরি হয়েছিল নেতাজির এই ট্যাবলোকে কেন্দ্র করে, অবশেষে বুধবার সেই বিতর্কের শেষ হল । রেড রোডে শোভা পেল রাজ্যের তথ্য সংস্কৃতি দফতর থেকে উপস্থাপিত নেতাজি ট্যাবলো ।
এদিন আগেই প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে নিজের সোশ্যাল সাইট থেকে রাজ্যবাসীকে প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রজাতন্ত্র দিবসে সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা । এই দিনে, আসুন আমরা আবারও ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামো, বিশেষত এর ফেডারেল চরিত্র রক্ষা করার শপথ নিই । আসুন আমরা আমাদের সংবিধানে বর্ণিত ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের আদর্শ রক্ষা, সংরক্ষণ এবং অনুসরণ করার জন্য সচেষ্ট হই, যা অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার দেয় । আমি আমাদের সকল মুক্তিযোদ্ধা এবং জওয়ানদের অভিবাদন জানাই যাদের বীরত্বপূর্ণ আত্মত্যাগ এবং তাদের নিঃস্বার্থ দায়িত্ব আমাদের দেশকে রক্ষা করে এবং আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে । আমাদের গণতন্ত্রের স্তম্ভ সকল দেশবাসীকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন । জয় হিন্দ ।’’
এরপর সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ তিনি পৌঁছন রেড রোডে । অনুষ্ঠানের শুরুতেই তিনি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তিতে মাল্যদান করেন । এরপর মহামান্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে রেড রোডে স্বাগত জানান । এবার করোনা আবহে রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপন মাত্র 30 মিনিটে সম্পন্ন করা হয়েছে । তবে এই 30 মিনিটের সুযোগেই সেনাবাহিনীর একাধিক সমরাস্ত্র প্রদর্শন করা হয়েছে । একই সঙ্গে স্থল এবং নৌবাহিনী বিভিন্ন শাখা রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকারকে অভিবাদন জানিয়েছে ।
আরও পড়ুন : 73rd Republic Day : সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট মোদি-মমতার
এদিনের কুচকাওয়াজের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ ছিল জয়তু নেতাজি নামক রাজ্য সরকারের ট্যাবলো । এবার নেতাজির 125তম জন্মবর্ষ । সেই লক্ষ্যেই দিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজে বাংলার তরফে পাঠানো হয়েছিল নেতাজি ট্যাবলো । সেই নেতাজি ট্যাবলো দিল্লির রাজপথে প্রদর্শিত করা হবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয় । বাংলার ট্যাবলো বাতিলের পর বিতর্ক শুরু হয় । নেতাজিকে অপমান বাংলাকে অপমান বলেও গর্জে ওঠেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।