কলকাতা, 12 অগস্ট : একুশের বিধানসভা নির্বাচনে জয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) গ্রহণযোগ্যতা জাতীয় রাজনীতিতে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ একই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) মানুষ কেন বারবার সরকারে ‘বাংলার মেয়েকেই’ চাইছে, তাই নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৷ সেই কারণেই মমতার সরকারের সামাজিক উন্নয়ন ও অনগ্রসর শ্রেণির উত্তরণে নেওয়া প্রকল্পগুলি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে দেশজুড়ে ৷ অনেকে এই প্রকল্পগুলি নিয়ে খোঁজ খবরও করছেন বলে নবান্নের একটি সূত্র থেকে জানা গিয়েছে ৷ ঠিক যেমন বছর সাত-আট আগে নরেন্দ্র মোদির (Narendra Modi) গুজরাত মডেল নিয়ে দেশবাসীর মধ্যে প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছিল ৷
যদিও এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে৷ কারও বক্তব্য, গোটা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ আবার কেউ বলছেন যে এটা সাময়িক আকর্ষণ ৷ এতে সাধারণ মানুষের আখেরে কোনও লাভ হয় না ৷ কিন্তু বাস্তব হল ৷ কৃষকদের অধিকার রক্ষার আন্দোলন থেকে উঠে আসা মমতার সরকারের কাজকর্ম নিয়ে অন্য রাজ্যেও আগ্রহ তৈরি হয়েছে ৷ বিশেষ করে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড (Student Credit Card) এবং মহিলাদের হাত খরচ হিসাবে চালু হতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার (Lakshmi Bhandar) প্রকল্প নিয়ে বেশি আগ্রহ তৈরি হয়েছে অন্য রাজ্যের মানুষ ও শাসকদের মধ্যে ৷
আরও পড়ুন : CPIM : কেন এই প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালন সিপিএমের, ব্যাখ্যা দিলেন সুজন
গত বুধবার রাজ্য বিধানসভা পরিদর্শনে আসেন দিল্লি (Delhi) বিধানসভার স্পিকার রামনিবাস গোয়েল । পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার (West Bengal Assembly) অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প নিয়ে খুঁটিনাটি জানতে চান ৷ এছাড়া কন্যাশ্রী-সহ অন্যান্য সামাজিক প্রকল্প সম্পর্কেও জেনে গেলেন রামনিবাস গোয়েল ।
তবে কন্যাশ্রী ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্বীকৃতি পেয়েছে ৷ আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজের স্বীকৃতি একাধিকবার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকেই এসেছে ৷ তাই অন্য রাজ্য থেকে অনেকে এই প্রকল্পগুলি নিয়ে জানতে আগ্রহী ৷ আর সেই তালিকায় রয়েছে স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডও ৷
আরও পড়ুন : Mamata-Suvendu : লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে মমতার বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ শুভেন্দুর
সম্প্রতি উচ্চশিক্ষা দফতর জানিয়েছে, এ রাজ্যের পড়ুয়াদের জন্য চালু করা এই প্রকল্পের সুবিধা পেতে বিভিন্ন অন্য রাজ্য থেকে প্রায় 12 হাজার আবেদন জমা পড়েছে । এর মধ্যে সবথেকে বেশি আবেদন জমা পড়েছে কর্ণাটক থেকে । ওই রাজ্যের সাড়ে সাত হাজার পড়ুয়া এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন । একইভাবে ওড়িশার 900 জন, তেলাঙ্গানার 300 জন, অন্ধ্রপ্রদেশের 600 জন, উত্তরপ্রদেশের 330 জন, দিল্লি এবং তামিলনাড়ুর 280 জন করে আবেদন করেছেন ।
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আসলেই গোটা দেশেই সাধারণ মানুষ এই মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন । যথেষ্ট সমালোচনার জায়গা থাকলেও এ কথা অস্বীকার করার জায়গা নেই তাঁর গুরুত্ব এই জনমোহিনী প্রকল্পের জন্য । স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতি সাধারণ মানুষ থেকে ভিন রাজ্যের প্রশাসক সকলেরই একটা আগ্রহ আছে ৷’’
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee : 16 অগস্ট থেকে দুয়ারে সরকার, মিলবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম
তবে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ তথা রাজনৈতিক বিশ্লেষক, প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এই ধরনের প্রকল্প সাময়িকভাবে কোনও রাজনীতিকের প্রতি আকর্ষণ তৈরি করলেও এর থেকে সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন হয় না ।’’