কলকাতা, 8 সেপ্টেম্বর: তৃণমূল কংগ্রেসের বুথ সম্মেলনের শেষ বেলায় দেখা মিলল কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক মুকুল রায়ের (Mamata invites Mukul)। প্রথমত দলবদলু তিনি (Mukul Roy)। এই মুহূর্তে তাঁর নামের পাশে বিধায়ক ছাড়া কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদ নেই । প্রথম অবস্থায় তিনি বিধায়কদের মাঝেই বসতে উদ্যত হন । তখন মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন তৃণমূলের লোকসভার মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় । ইতিমধ্যেই মুকুল রায়ের দিকে নজর যায় মুখ্যমন্ত্রীর (Mamata Banerjee)। তাঁর নির্দেশেই মঞ্চে ডেকে আনা হয় একদা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলানো এই হেভিওয়েট নেতাকে । বসানো হয় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতির ঠিক পাশের আসনে । শরীরী ভাষায় বোঝা যাচ্ছিল, এখনও সুস্থ নন এই প্রবীণ নেতা । অন্যের সাহায্য ছাড়া ঠিক মতো হাঁটতেও পারছেন না তিনি । এই অবস্থায় মুকুল রায়কে মূল মঞ্চে নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়ে টেনে আনলেও তাঁকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়নি । তৃণমূল কংগ্রেসের মঞ্চে থাকলেও তাঁর নাম আলাদা করে নেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তবে পরে অবশ্য বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেছেন, আইনি কারণে সবার নাম তিনি নিচ্ছেন না । রাজনৈতিক মহল মনে করছে দলনেত্রীর এই বক্তব্য মুকুলের উদ্দেশ্যেই ।
প্রসঙ্গত স্ত্রী বিয়োগের পর থেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ মুকুল । কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তাঁর বিভিন্ন কথাবার্তায় অসংলগ্নতা লক্ষ্য করা যাচ্ছিল । এ দিন শরীরী ভাষায় বোঝা যাচ্ছিল এখনও সম্পূর্ণভাবে সুস্থ নন এই তৃণমূল নেতা । তবে সাধারণ তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁর এখনও একটা গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে । এ দিন মুকুল রায়কে নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দেখে অনেকেই তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য এগিয়ে আসেন । আর এই বিষয়টি চোখে পড়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের । এই অবস্থায় নিরাপত্তা রক্ষীদের দিয়ে তাঁকে মূল মঞ্চে বসানোর ব্যবস্থা করে দেন তৃণমূল নেত্রী ৷ তবে তাঁর বক্তব্যে তিনি নবীন থেকে প্রবীণ - দলের সব নেতার নাম নিলেও একবারও মুখে আনলেন না মুকুল রায়ের নাম ৷
আরও পড়ুন: কেষ্ট না ফেরা পর্যন্ত বীরভূমে লড়াই 3 গুণ বাড়বে, কর্মীদের বার্তা মমতার
এ দিন মুকুল রায়ের নাম না নেওয়ার পিছনে রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বিধানসভার একটা জটিল অংক রয়েছে । যেহেতু এখনও এই নেতার বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে মামলা চলছে, মুখ্যমন্ত্রী যদি আলাদা করে দলের অনুষ্ঠানে তাঁর নাম নেন, সে ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে পারেন তিনি । বিজেপি বিধায়ক হয়ে তিনি কীভাবে অন্য দলের প্রোগ্রামে যোগ দিলেন, তা নিয়েও উঠতে পারে প্রশ্ন । এ সব আইনি প্রশ্ন যাতে না ওঠে, সেজন্যই এ দিন মুকুল রায়ের নাম এড়িয়ে গেলেন মমতা, অন্তত রাজনৈতিক মহল তেমনটাই মনে করছে ।
দিনকয়েক আগেই তৃণমূল ভবনে এসে কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক মুকুল রায় বলেছিলেন, মরে যাইনি এখনও । ঘাসফুল অথবা পদ্ম যে শিবিরেই থাকুন না কেন, গত এক দেড় দশক রাজ্য রাজনীতিতে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক নাম ছিলেন মুকুল রায় । কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসে ঘর ওয়াপসির পর থেকেই কেমন যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি । আর সে কারণেই প্রথমে তৃণমূল ভবন এবং এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুকুলের উপস্থিতি আবার জানান দিল যে হয়তো মূল স্রোতের রাজনীতিতে আবার সক্রিয় হতে চাইছেন এই প্রবীণ নেতা। কিন্তু প্রশ্ন, তাঁর শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছে এখনও পুরোপুরি সুস্থ নন তিনি ৷ এই অবস্থায় তাঁর এই সক্রিয় হওয়ার প্রচেষ্টা কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়েও জল্পনা থাকছে ।